বাংলাদেশের জনপ্রিয় নায়িকা পরীমণিকে নিয়ে এই মুহূর্তে উত্তাল গোটা বাংলাদেশ। ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ এনেছেন পরীমণি। অভিনেত্রীকে প্রথমে ধর্ষণ এবং তারপর মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে বলেই দাবি করেছেন পরী। ইতিমধ্যেই থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করলেও সেখান থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। তারপর সোশ্যাল মিডিয়াতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ-হাসিনার কাছে সুবিচারের দাবি তুলেছেন পরীমণি। তবে সাভার থানায় মামলা দায়ের করেছেন পরীমণি। তার অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধান অভিযুক্ত সহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নিজের বাড়িতেই সাংবাদিক বৈঠকে পরীমণি অভিযুক্তদের নাম ও পরিচয় ফাঁস করেছেন। এবং পাশাপাশি পুরো ঘটনারও কথাও জানিয়েছেন। পরীমণি জানিয়েছেন, ঘটনার মূল অভিযুক্ত হলেন নাসির । পেশায় ব্যবসায়ী উত্তরা বোট ক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি। গত বুধবার, রাত ১২টার পর পরিচিতজনদের নিয়ে ওই ক্লাবে গিয়েছিলেন পরীমণি। সেদিন রাতেই চারজন মদ্যপ ব্যক্তি পরীমণিকে শারীরিক নির্যাতন করে এবং মারধরও করেন। এরপর নেশার কিছু জিনিস খাইয়ে ধর্ষণের চেষ্টাও করা হয় বলে অভিযোগ জানান নায়িকা। আচমকা সাংবাদিক বৈঠকের মাঝে অসুস্থও হয়ে পড়েন নায়িকা।
ধর্ষণ কান্ডে অভিযুক্ত নাসির উদ্দিনকে তার উত্তরা বাড়ি থেকে আটক করেছে পুলিশ। এবং বাকীদেরও একই স্থান থেকে আটক করা হয়েছে। ওই ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে মাদকও উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার করার পর সবাইকে ঢাকার মিন্টোরোডে গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে পুলিশের মুখমাত্র সোহেল রানা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পরীমণি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে এবং তার বয়ানও রেকর্ড করা হয়েছে। তারপরই পুলিশি অভিযানে সকলেই গ্রেফতার হয়েছে।
প্রসঙ্গত গত রবিবার রাতেই নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগের পোস্ট করে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন বাংলাদেশি সুন্দরী। ইতিমধ্যেই এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই তাকে নিয়ে হৈ চৈ কান্ড। ফেসবুকে শেখ হাসিনার কাছে বিচার চেয়ে খোলা চিঠি লেখেন পরীমণি। শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হয়েও অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ্যে আনেননি অভিনেত্রী। কী লেখা ছিল খোলা চিঠিতে, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি পরীমণি।এই দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক।আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি।আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।এই বিচার কই চাইবো আমি? কোথায় চাইবো? কে করবে সঠিক বিচার ? আমি খুঁজে পাইনি গত চার দিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্রবন্ধু বেনজির আহমেদ আইজিপি স্যার! আমি কাউকে পাইনা মা। যাদেরকে পেয়েছি সবাই শুধু ঘটনা বিস্তারিত জেনে, দেখছি বলে চুপ হয়ে যায়! আমি মেয়ে, আমি নায়িকা, তার আগে আমি মানুষ। আমি চুপ করে থাকতে পারিনা। আজ আমার সাথে যা হয়েছে তা যদি আমি কেবল মেয়ে বলে, লোকে কী বলবে এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মতো (যাদের অনেক নাম এক্ষুণি মনে পরে গেল) তাদের মতো আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো। আফসোস ছাড়া কারোর কি করবার থাকবে তখন! আমি তাদের মতো চুপ কি করে থাকতে পারি মা? আমি তো আপনাকে দেখিনি চুপ থেকে কোন অন্যায় মেনে নিতে!আমার মা যখন মারা যান তখন আমার বয়স আড়াই বছর। এতদিনে কখনো আমার এক মুহুর্ত মাকে খুব দরকার এখন,মনে হয়নি এটা। আজ মনে হচ্ছে , ভীষণ রকম মনে হচ্ছে মাকে দরকার ,একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্য দরকার। আমার আপনাকে দরকার মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে দরকার মা। মা আমি বাচঁতে চাই। আমাকে বাঁচিয়ে নাও মা'।
সূত্রের খবর, গত বৃহস্পতিবার বনানী থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন পরীমণি। কিন্তু তার অভিযোগ নেয়নি পুলিশ অফিসাররা। তারপরও বিভিন্ন ভাবে অভিযোগ জানানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন পরী। শেষমেষ কোনও ন্যায় বিচার না পেয়ে সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করেই সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছেই বিচার চেয়েছেন। এখানেই থামেন নি বাঁচার আকুতিও করেছেন পরী। তবে রূপনগর থানা থেকে পুলিশ অভিনেত্রীর বাড়িতে গিয়েছিলেন অভিযোগ রেকর্ড করার জন্য পরবর্তীতে সাভার থানায় মামলা দায়ের করেছে পরীমণি।