মুম্বইয়ের মালাডে আমি যেখানে থাকি, তার থেকে কুড়ি মিনিটের দূরত্বে থাকেন অঙ্কিতা লোখান্ডে। অঙ্কিতার পাবলিক রিলেশন অফিসার ফোনে বললেন, "অঙ্কিতা কথা বলতে চান। আপনি কি 'ইন্টারফেস হাইটস'-এ আসতে পারবেন?"কথামত চলে এলাম। এই 'ইন্টারফেস হাইটস'-এ আগেও এসেছি। সঞ্জয়লীলা ভনশালির 'পদ্মাবত' রিলিজের পর। 'পদ্মাবত', 'চক দে', 'বাজিরাও মাস্তানি', 'ধুম ৩'-এর বাঙালি সিনেম্যাটোগ্রাফার সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। পাশের উইঙ্গের ১৫ তলায়। অঙ্কিতারটা আরেক উইঙ্গ। চারতলায়। অঙ্কিতার রিডিং রুমে আমি তখন অঙ্কিতার উল্টোদিকের চেয়ারে।
আরও পড়ুন-'স্পোটর্স ব্রা'-র চারপাশে বেরিয়ে 'Big Size' স্তনযুগল, 'Cleavage' এর খাঁজে আগুন মালাইকার...
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- টিভি থেকে সিনেমার জর্নিটা কেমন লাগছে?
অঙ্কিতা- অ্যামেজিং। গুড এক্সপেরিয়েন্স। নিউ পিপল। নিউ লাইফ। ইটস টেকিং টাইম। অনেক অফার এসেছিল। কিন্তু আমি রেডি ছিলাম না। যখন রেডি হয়েছি বলে মনে হল, তখন ফিল্ম করা শুরু করেছি।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- রেডি কবে হলেন?
অঙ্কিতা- ছোট থেকেই রেডি ছিলাম। মনে হত, সিনেমায় অ্যাক্টিং করব। ছোট থেকে বড় হওয়ার মধ্যে যে লম্বা জার্নি থাকে, সেই পথ চলতে চলতে মাথা থেকে প্রেফারেন্স- এর কিছু জিনিস এদিক-ওদিক হয়ে যায়। আমারও গিয়েছিল। 'পবিত্র রিস্তা' করার মাঝখানেই আমার কাছে 'হ্যাপি নিউ ইয়ার'-এর অফার এসেছিল। ঠিক মনে হয়নি টাইমিং। তাই ডিসিশন নিইনি। আমার মনে হয়েছিল, এটা আমার ঠিক সময় নয়। কিন্তু যখনই মনে হয়েছে এবার আমি ছবি করব, তখনই আমি অ্যাকটিভ হয়েছি। আই গট দ্য ফিল্ম 'মনিকর্ণিকা'। 'বাগি ৩'। এরপরেও ছবি করছি। নামগুলো একে একে বলব। এখনই নয়।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- সুশান্ত সিং রাজপুত 'কাই পো চে' করেছিলেন ২০১৩ সালে। আপনি তার পাঁচ বছর পর ২০১৮-তে শুটিং শুরু করলেন 'মণিকর্ণিকা'-র। একটু দেরি হয়ে গেল না?
অঙ্কিতা- আগেই বললাম, আমি 'হ্যাপি নিউ ইয়ার' ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, ফিল্মে আসার আগে অভিনেত্রী হিসাবে আরও একটু প্রস্তুতির দরকার। প্রস্তুতির জন্য আমি টিভি ফরম্যাটকে বেছে নিয়েছি। আরও আগে আই ওয়াজ নট মেন্টালি প্রিপেয়ার্ড।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- 'পবিত্র রিস্তা' থেকে 'মণিকর্ণিকা'। ছোট থেকে বড় পর্দার এই ট্রানসফরমেশনটা কেমন?
অঙ্কিতা- দারুণ। দেখলাম এত মানুষ, এত দর্শক আমার খোঁজ রাখেন। আমি অভিভূত। আমি নিজেও সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভ থাকি। ফ্যানেদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- টানা ছ' বছর 'পবিত্র রিস্তা'-র 'অর্চনা' হয়ে আপনি ভারতীয় দর্শকদের পরিবারে ঢুকে পড়লেন। লিড রোল। সেকেন্ড ফিডল রোল নিতে কিছু মনে হল না?
অঙ্কিতা- টেলিভিশনে যেভাবে শুরু করেছিলাম, সিনেমাতেও সেভাবেই আমাকে শুরু করতে হবে তার কি মানে? সিনেমায় এখনও পর্যন্ত আমি যা পেয়েছি, তাতে আমি খুশি।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- সিনেমা আর টেলিভিশন দুটো মাধ্যম আলাদা। এই দুই জায়গার শুটিং এর মধ্যেও ফারাক আছে। এই দুই মাধ্যমের ফারাকটা আপনি কতটা বুঝলেন?
অঙ্কিতা- ফারাক তো আছে। সিনেমার শুটিংয়ে রিল্যাকসেশন বেশি। আমি তো নেচার ওয়াইজ হৈ চৈ করা মেয়ে। সেজন্য সিরিয়ালের শুটিংয়ে চুপ করে থাকতাম না। সিনেমার শুটিংয়েও থাকিনি। 'পবিত্র রিস্তা'-র শুটিংয়ে আড্ডা দিতাম। 'মনিকর্ণিকা'-র শুটিংয়েও ফাঁক পেলে তাই করেছি। কঙ্গনা রানাওয়াত দের সঙ্গে দেদার আড্ডা দিয়েছি। 'বাগি ৩'- এর সেটে রিতেশ দেশমুখ, টাইগার শ্রফদের সঙ্গে প্রচুর ঠাট্টা-মশকরা করেছি। অ্যাকচুয়্যালি কি জানেন, অ্যাক্টিং ফিল্ডে নিজেকে ওপেন-আপ করতেই হয়। তা নাহলে, অন-ক্যামেরা সেই জেলটা আসেনা।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- সিরিয়ালের শুটিংয়ে তো আর্টিস্টদের প্রচুর পরিশ্রম হয়। এখন কি মনে হয়, ৯-১০ বছরে সিরিয়াল, রিয়্যালিটি শোয়ের পর আবার এরকম লম্বা সোপ-অপেরার অফার এলে নেবেন?
অঙ্কিতা- বারবার ভাবতে হবে অফারটা নেওয়ার আগে। সিরিয়াল যেমন দেয় অনেক। ফেরতও নেয় অনেক কিছু। 'পবিত্র রিস্তা'-র সেটে আমি ছ' বছর কাটিয়েছি। তাই শুধুই পরিশ্রম হয়, একথা মানব না। কিন্তু পাশাপাশি সোপ অপেরার টানা শুটিং যে আর্টিস্টদের শরীর, মনে অনেক ক্লান্তি এনে দেয় এটাও ঠিক। আপনি জানেন আমাকে ডেঙ্গু নিয়ে শুটিং-এ যেতে হয়েছিল। শট দিতে হয়েছিল। প্রযোজক সেটুকু খোঁজও নেননি।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- 'পবিত্র রিস্তা'-র 'অর্চনা' এখনও অনেক মেয়েকে প্রেরণা দেয়। এটা আপনাকে কীভাবে নাড়া দেয় এখনও?
অঙ্কিতা- ওই শো করার সময় এবং তার পরেও প্রচুর বার্তা পেয়েছি। এখনও পাই। এত মেসেজ, এত অভিনন্দন, ভাবা যায় না। শুধু তাই নয়, এমনকি জানেন, আমার ব্রেক-আপ এর খবরে ওই রিলেশনশিপ থেকে বেরিয়ে আসার পরেও আমাকে অনেক মেয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, আপনি কীভাবে এত বড় একটা ধাক্কা সামলে সেটা থেকে বেরিয়ে এলেন? কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমার সততা ছিল। আমার বাবা-মার আশীর্বাদ ছিল। তাই এত বড় হতাশা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। (অঙ্কিতার চোখে জল। গলা কাঁপছে। নিজেকে সামলানোর যার পর নেই চেষ্টা করছেন।) তা না হলে যদি অন্য কোন মেয়ে হত, জানিনা কি করে ফেলত। হয়ত ফাঁসি দিত। হয়ত শিরা কেটে ফেলত।
বুঝতে পারছিলাম, এবার ইন্টারভিউ থামাতে হবে। অঙ্কিতার সামনে বসে আমার মনে হয়েছিল, সুশান্ত সিং রাজপুতকে অঙ্কিতা এখনও ভুলতে পারেননি। কোনওদিন পারবেন বলেও মনে হয় না। যতই মধ্যপ্রদেশের ব্যবসায়ী ভিকি জৈনের সঙ্গে অঙ্কিতার নতুন সম্পর্ক হোক, 'সুশান্ত সিং রাজপুত' নামের সেই ক্ষত থেকে এখনও অঙ্কিতার মনে রোজ রক্ত ঝরে। ঝরেই যায়।