সাংবাদিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে সমালোচিত হচ্ছেন কঙ্গনা রানাউত। কঙ্গনা ক্ষমা না চাইলে তাঁকে বয়কট করা হবে বলে জানিয়ে দেয় এন্টারটেনমেন্ট গিল্ডের সাংবাদিকরা। সেই সিদ্ধান্তে শিলমোহর দিয়েছে ইন্ডিয়ান প্রেস ক্লাব। এদিকে শীঘ্রই মুক্তি পাবে তাঁর ছবি জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া। কিন্তু সেই ছবিতে যে কঙ্গনা সাংবাদিকদের তরফ থেকে বিশেষ কোনও প্রশংসা পাবেন না, তা-ও আশা করা যায়। কিন্তু ছবি চলবে, এবং দর্শকরাও দেখবেন। তাই বিতর্কের ফলে কঙ্গনার কেরিয়ার কতটা প্রভাবিত হবে তা সময়ই বলতে পারবে। তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও কিছু মন্তব্যের জেরে সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছেন কঙ্গনা। বলা ভাল, কঙ্গনার সঙ্গে বিতর্কের যেন এক অটুট বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে।
একের পরে এক তারকা, অভিনেতাদের নিশানা করেছেন কঙ্গনা ও তাঁর দিদি রঙ্গোলি চন্দেল। বার বার তুলেছেন ফিলম ইন্ডাস্ট্রির স্বজনপোষণের কথা। যে ইন্ডাস্ট্রিকে একের পরে এক বাক্যবাণে বিঁধেছেন, সেখানেই পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে সংসার চলছে কঙ্গনার। যে সাংবাদিকদের আজ বিকিয়ে যাওয়া ও দেশদ্রোহী বলে আক্রমণ করছেন সেই সাংবাদিকদের লেখা প্রতিবেদনেই তিনি বার বার সেরা অভিনেত্রী , সেরা ফ্যাশনিস্তার তকমা পেয়েছেন। কিন্তু কেন এত ক্ষোভ, রাগ ও অসন্তোষ উগরে দিচ্ছেন অভিনেত্রী তা নিয়েই সকলে বেশ ধন্দে রয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ কঙ্গনাকে বয়কট করার জন্য একজোট সাংবাদিকরা! বাধ্য হয়ে ক্ষমা চাইলেন একতা কাপুর
শুরুটা হয়েছিল ২০১৭-য় 'কফি উইথ করণ' থেকে। করণ জোহরের মুখোমুখি হয়ে তোপ দেগেছিলেন 'রিভলভার রানি'। বলেছিলেন বলিউডে কাজ পাওয়ার পিছনে নেপোটিজম বা স্বজনপোষণের ছক কষা থাকে। করণের চক্ষু কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন হয়েছিল সেদিনই। কঙ্গনা এও বলেছিলেন যে, শাহরুখ-সলমন-আমির কারও সঙ্গেই ছবি করতে চান না। কারণ, তিনি চান স্পটলাইট থাকুক শুধু তাঁর উপরে। 'রানি' সুলভ আচরণ বললে ভুল বলা হবে না। সেই টক শো-এর পরে অনেকেই বাহবা দিয়েছিলেন বলিউডের কুইনকে। ছোট শহর থেকে মুম্বই আসা এক মেয়ে এভাবে বলতে পারেন তা এর আগে হয়তো কেউ ভাবেননি।
আরও পড়ুনঃ কঙ্গনাকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন সোনা! ভুয়ো নারীবাদী বলে তোপ দাগলেন গায়িকা
কঙ্গনার স্ট্রাগল, যেখান থেকে তিনি উঠে এসেছেন, তাঁর ইংরেজি বলার উচ্চারণ সব নিয়েই বলিউডে মশকরা চলেছে। কোনও কোনও সংবাদমাধ্য়ম তাঁর উচ্চারণকে বিনোদনও বানিয়েছে। এসবের থেকে ক্ষোভ জমা স্বাভাবিক। কিন্তু রানির মনে শুধুই কেন ক্ষোভ জমল, তা একটি বড় প্রশ্ন। বিনোদন জগতের পরিবারের সদস্য না হয়েও বলিউডে জায়গা করে নিয়েছেন রণবীর সিং, অনুষ্কা শর্মা, সিদ্ধার্থ মলহোত্রা, রাধিকা আপ্তের মতো অভিনেতারা। তাঁরাও রীতিমতো পরিশ্রম করে নিজেদের ভিত বি-টাউনে শক্ত করেছেন। কিন্তু 'ব্যতিক্রমী' কঙ্গনা বলিউডের শীর্ষে পৌঁছেও মারমুখী থেকে গিয়েছেন। কঙ্গনার ভক্তদের অবশ্য় দাবি, তিনি প্রতিবাদী।
এখানেই উঠে আসে রাজনীতির প্রসঙ্গ। এবছর লোকসভা নির্বাচনের আগে কঙ্গনা নিজের মতামত প্রকাশে একটুও কার্পণ্য করেননি। কখনও কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ইতালীয় শাসন থেকে মুক্ত হয়ে ভারত এখন সত্যিই স্বাধীন। আবার কখনও রণবীর কাপুরকে তোপ দেগে বলেছেন, দেশে কী হচ্ছে, কী ঘটছে সবটাই জানা উচিত। শুধু নিজেরটা নিয়ে ভাবলে চলবে না।
এই কঙ্গনা ও তাঁর দিদি রঙ্গোলির নিশানা থেকে বাদ যাননি, আলিয়া ভাট, হৃতিক রোশন, দীপিকা পাডুকোন, তপসি পন্নু, করন জোহর কেউই। কিন্তু রাজনীতি নিয়ে নিজের আগ্রহ প্রকাশ করলেও গেরুয়া শিবিরের কোনও মন্তব্যের প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। তারকা, অভিনেতাদের সামনে রুখে দাঁড়ালেও সাধ্বী প্রজ্ঞার মতো বিজেপি নেত্রীর মন্তব্য বা সাক্ষী মহারাজের 'অভিশাপ' নিয়ে মুখ খোলেননি কঙ্গনা। আবার জোর করে ধর্মীয় স্লোগান বলানো, মব লিঞ্চিং নিয়ে যাঁরা প্রতিবাদ করেছেন তাঁদের মধ্যে কঙ্গনার নাম কোথাও দেখা যায়নি। যদিও বিজেপির বিপুল জয়ের পরে তা উদযাপন ভোলেননি কঙ্গনা। তাই বিভিন্ন মহলে এখন প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি গেরুয়া শিবির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন কঙ্গনা। দেশের শাসককোনও বাক্যালাপেই যেতে চান না বলে পাঁচ বছরে ডাকা এক বারের সাংবাদিক সম্মেলনেও মুখে কুলুপ আঁটেন তিনি। আর কঙ্গনা বাক্যালাপে গেলেও নিজের বা নিজের ছবির সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে মেজাজ হারান। আর আক্রমণ করার সময়ে 'দেশদ্রোহী'-র মতো শব্দ ব্যবহার করেন। এক কথায়, ২০০৬ সালে কেরিয়ার শুরু করা কঙ্গনার সঙ্গে আজকের কঙ্গনাকে মিলিয়ে দেখতে গেলে তাই শুধু অমিলই খুঁজে পাওয়া যায়।
তবে এ অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই যে কঙ্গনার মতো প্রতিভাবান অভিনেত্রী খুব কমই রয়েছেন। স্টাইল আইকন হিসেবেও নিজের পাকাপাকি জায়গা তৈরি করেছেন তিনি। হৃতিকের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে যখন জলঘোলা চলছে, সেই সময়েও কঙ্গনার পক্ষ নিয়েছিল অনে'ক সংবাদমাধ্যম। কিন্তু সে সবই যেন হারিয়ে ফেলছেন অভিনেত্রী। ঔদ্ধত্ব, গরিমা ও হঠকারীতার বোঝায় মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে যাচ্ছে গ্যাংস্টারের কোঁকড়া চুলের নতুন মেয়ের মুখটা। 'কুইন' ছবির রানিও যেন কোথাও গিয়ে খলনায়িকা হয়ে উঠছে মানুষের মনে। সেই কঙ্গনাকে মন করতে গেলেই হোঁচট খাচ্ছে মানুষ।