তপন বকসী, প্রতিনিধি, মুম্বই- হিন্দি সিনেমায় তিরিশ বছরের অভিনয় জীবন কাটানোর পর শাহরুখ খানের লেগ্যাসি একটা পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে এখন। অনেক সময় শাহরুখ নিজেই বলেন, "আমার জীবনে সেভাবে আর স্ট্রাগল কোথায়? সংগ্রামহীন এই সাফল্যের রহস্য হল আমি ঠিক সময়ে, ঠিক জায়গায়, কিছু ঠিক মানুষের সান্নিধ্যে হাজির হয়ে গিয়েছি।"
শাহরুখের কথায় আপাত মসৃণতার ছোঁয়া থাকলেও শুরুর দিকে সবকিছুই অত মসৃণ থাকেনি এসআরকে-র। যদিও শাহরুখকে নিয়ে তাঁর চারপাশে তেমন গুঞ্জনের ঘনঘটা বিশেষ ছিল না। একমাত্র প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে তাঁর গোপন রিলেশনশিপের প্রসঙ্গ ছাড়া।
আরও পড়ুন- সাদাকালো ফ্রেমে মহাপ্রভু থেকে বলিউডে ডাক, টলিউড স্টার যিশুর কেরিয়ার গ্রাফের রঙবদল
১৯৯২ সালে শাহরুখ তখনও মুম্বইয়ে নতুন। প্রথম ছবি "দিওয়ানা " রিলিজ করে হিট হয়ে গিয়েছে। সবাই চিনেও ফেলেছেন। অনেকের মুখেই তখন বলিউডের নতুন এই হিরোর চর্চা শুরু হয়েছে। সেই সময়েই পরিচালক কেতন মেহতা নিজের স্ত্রী অভিনেত্রী দীপা শাহির বিপরীতে কাস্ট করেন শাহরুখকে।
ছবির নাম ছিল "মায়া মেমসাব "। এই ছবিতে একটি বেডসিন ছিল। সেই বেডসিনের শুটিং নিয়ে বাজারে একটি গল্প ছড়িয়ে পড়ে। শোনা যায়, শাহরুখের সঙ্গে এই বিশেষ দৃশ্যের শুটিংয়ের আগের দিন কেতন মেহতা দীপা শাহিকে মুম্বইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে একরাত কাটাতে বলেন। যাতে ওই বিশেষ দৃশ্যটিকে ক্যামেরায় ন্যাচারালি তুলতে সুবিধা হয়।
সেই সময়ের মুম্বইয়ে সিনেমা ম্যাগাজিন গুলোর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ম্যাগাজিন " সিনে ব্লিৎজ" শাহরুখ-দীপা শাহির এই রসালো গুঞ্জনকে বড় করে ছেপে দেয়। আর এতেই বেজায় চটে যান বাদশা। ম্যাগাজিন বাজারে বেরনোর একদিন পরেই মুম্বইয়ে এক ফিল্মি ফাংশনে "সিনে ব্লিৎজ" ম্যাগাজিনের সাংবাদিক কিথ ডি'কস্টাকে দেখতে পান। শাহরুখ ধরেই নিয়েছিলেন তিনিই ওই ম্যাগাজিনে এই লেখাটি লিখেছেন । এরপরেই শাহরুখ তাঁকে লক্ষ্য করে যা খুশি বলতেও থাকেন। সেখানেই ক্ষান্ত না হয়ে পরদিন ডি'কস্টাকে ওঁর বাড়িতে ফোন করে শাসাতে থাকেন এই বলে যে, তিনি যে কোনও মুহূর্তে ওঁর বাড়িতে পৌঁছে গিয়ে ওঁকে সেখানেই মারবেন। যেমন কথা, তেমন কাজ। পরদিন সত্যি সত্যি এস আর কে ডি'কস্টার বাড়িতে পৌঁছে গিয়ে ডি'কস্টার বাবা -মার সামনেই গালিগালাজ শুরু করে দেন।
আরও পড়ুন- বলিউডে আরও এক পালক সৃজিতের, ক্রিকেটার মিথালি রাজের বায়োপিকের পরিচালনায় এবার তিনি
এরপর ডি'কস্টা তাঁর এডিটরের নির্দেশে পুলিশের কাছে শাহরুখের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। শাহরুখও ডি'কস্টাকে নিয়মিত বাড়ির ফোনে গালিগালাজ করতে থাকেন। এরপর কিথ ডি'কস্টা পুলিশের কাছে আরও একবার অভিযোগ জানিয়ে তাঁকে পুলিশ প্রটেকশন দেওয়ার অনুরোধ করেন।
পরদিন শাহরুখ শুটিং করছিলেন গোরেগাঁওয়ের ফিল্মসিটিতে। সেখান থেকেই শাহরুখকে গ্রেফতার করে বান্দ্রা পুলিশ স্টেশনে নিয়ে আসা হয়।
ততদিনে শাহরুখ 'তারকা' হয়ে গিয়েছেন। পুলিশ স্টেশনে এসে বসা শাহরুখকে দেখতে পেয়ে কিছু পুলিশ শাহরুখের অটোগ্রাফ নিতেও শুরু করেন। আর শাহরুখ পুলিশ স্টেশনে বসেই কিথ-কে আবার ফোন করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এরপর রাত সাড়ে এগারোটায় শাহরুখের ক্লোজফ্রেন্ড চিক্কি পান্ডে এসে শাহরুখকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। এই চিক্কি পান্ডে হলেন অভিনেতা চাঙ্কি পান্ডের ছোট ভাই। যিনি অভিনেতা না হলেও স্নেহপরায়ণ দাদার বন্ধু শাহরুখেরও ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
আরও পড়ুন- মৃত্যুর তিন দশক পর ফের অভিনয়ে ফিরছেন মহানায়ক উত্তম কুমার, কীভাবে, জানুন
মজার বিষয় হল, এই ঘটনার দু বছর পর ওই ম্যাগাজিনের আর এক সাংবাদিক ভার্জিনিয়া ভাচা শাহরুখকে বুঝিয়েছিলেন আসলে ওই লেখাটি কিথ লেখেন নি। লিখেছিলেন অন্য কেউ। এরপর শাহরুখ নিজের ভুল বুঝতে পারেন। এবং কিথ-কে জড়িয়ে ধরে মার্জনা চেয়ে নেন। কিথ-কে নিজের বাড়িতে আসতে অনুরোধ করেন। এমনকি কিথ-এর বাড়ি গিয়ে তাঁর বাবা-মার কাছে গিয়ে ক্ষমাও চেয়ে নেবেন বলে জানান। এতকিছু ঘটনা যে দৃশ্যটিকে নিয়ে, পরে সেন্সর বোর্ড সেটি ছবি থেকেই বাদ দিয়ে দিয়েছিল। অনেক দিন পর ২০০৮ -এ সেই অন্তরঙ্গ এবং বিতর্কিত দৃশ্যটি ইন্টারনেটে লিক হয়ে যায়।