তিন দশক ধরে রেখার জীবনে রাজ করছেন এক নারী, এমন এক বিতর্কিত কাহিনি যা চর্চায় থাকে আজও

 

  • রেখার সঙ্গে ফরজানা রয়েছেন প্রায় তিরিশ বছরেরও বেশি
  • রেখাকে প্রতিদিন সকালে খবরের কাগজ পড়ে শোনান ফরজানা 
  • রেখা নিজে নিজে  কোনও দিন বই পড়েন নি আজ পর্যন্ত
  • রেখার স্মৃতিতে যদি অমিতাভ থাকেন, তাহলে রেখার সত্তায় আছেন ফরজানা

Asianet News Bangla | Published : Jul 1, 2021 8:36 AM IST / Updated: Jul 01 2021, 02:15 PM IST

গত প্রায় ২৭ বছরেরও বেশি  মুম্বইয়ের বিভিন্ন পার্টি বা যে কোনও অনুষ্ঠানে রেখাকে দেখে মনে হয়েছে একজন এত আকর্ষণীয়া মহিলা কীভাবে জীবনের এতটা সময় একাকী কাটিয়ে দিতে পারেন। আর তখনই মনে পড়েছে সাংবাদিক মোহন দীপের কথা। রেখাকে নিয়ে বিস্তর গবেষণা করছেন। রেখার জীবন নিয়ে বই লিখবেন বলে। সেই সময় মোহন দীপের ওশিওয়ারার বাড়িতে বেশ কয়েকবার গিয়েছিলাম। মোহন সেই সময় এমন কিছু কথা বলেছিলেন, যার সারমর্ম স্মরণ করে রেখার একাকী সুখী জীবনের একটা মানে খোঁজার চেষ্টা করেছিলাম। 

আরও পড়ুন-কাঁধ অবধি লম্বা চুল, ভুল করে কি দীপিকার পোশাক পরলেন রণবীর, 'খিলজির' নিন্দায় সরব সাইবারবাসী


সেদিনও মোহনকে আজকের এই একই বিস্ময়ের কথা জানাতেই মোহন বলেছিলেন, 'তুমি কি জানো না, রেখা একা থাকেন না। রেখার স্মৃতিতে যদি অমিতাভ থাকেন, তাহলে রেখার সত্তায় আছেন ফরজানা। হুম, রেখার সেক্রেটারি।" রেখার সঙ্গে ফরজানা রয়েছেন প্রায় তিরিশ বছরেরও বেশি। যাঁকে 'রেখার ছায়া' বললেও এতটুকু বাড়িয়ে বলা হবে না। আর সেকথা মনে এলে আজকের রেখার এই ভারসাম্যে থাকা, জীবন রসে মজে থাকার সব মানে নিমেষে সামনে পরিষ্কার হয়ে ওঠে। ২৭ বছর মুম্বইয়ের এন্টারটেইনমেন্ট জার্নালিজমে থেকে বুঝেছি, রেখার থেকে ফরজানাকে সরিয়ে রাখা হল মাছকে জল থেকে সরিয়ে রাখা। এত উষ্ণ নারীত্বের মায়াবেশে থাকা, আসঙ্গ পুরুষ পিপাসার ভানুরেখা যতবারই কোনও পুরুষকে স্থায়ী সঙ্গী করতে চেয়েছেন, ঠিক তখনই নিয়তি তাঁর কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে সেই পুরুষকে। এভাবে চলতে চলতে রেখার কাছে ফরজানা জীবনের আর এক নাম হয়ে উঠেছে। মোহন দীপের কাছ থেকেই  শুনেছিলাম, রেখার বেডরুমে ওঁর সর্বক্ষণের পরিচারক, পরিচারিকারাও ঢোকার অনুমতি পান না। শুধু ফরজানা ছাড়া।

 

ফরজানা এবং রেখা দুজনেই মোহনদীপের লেখা পড়েছেন। কিন্তু কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। মামলাও করেন নি আজ পর্যন্ত। আর বলিউডের আনাচে কানাচে যেকথা উড়ে বেড়ায় , অমিতাভকে রেখা এখনও খুঁজে পেতে চান ফরজানার মধ্যে। তাই অমিতাভর মত স্টাইলেই হেয়ার স্টাইল করেন ফরজানা। আজ পর্যন্ত ফরজানাকে কেউ ট্রাউজার্স, শার্ট, ট্রেইলর জ্যাকেট,  ব্লেজার ছাড়া অন্যকিছু পরতে দেখেন নি। রেখার কাছে ফরজানা পুরুষ। রেখার বান্দ্রা ব্যান্ডস্ট্যান্ডের বাংলোর দোতলার ড্রয়িংরুমে,  লবিতে, বেডরুমের দেওয়ালে অমিতাভর ছবি। পছন্দের পুরুষকে না পেলেও রেখা মাঝেমাঝেই বলিউডের কোনও না কোনও হ্যান্ডসাম হাঙ্ককে পছন্দ করেন। আর এটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরেফিরে আসে। সঞ্জয় দত্ত, অক্ষয়কুমারদের জীবনে তাই ঘুরেফিরে এসে পড়েছেন তিনি। জুহুর পাঁচতারা হোটেলের এক অ্যাওয়ার্ড সেরিমনিতে  নিজের কাঞ্জিভরম শাড়ির আঁচলের ভেতর রনবীর সিংয়ের মুখ আর নিজের মুখকে চার পাঁচ সেকেন্ড ঢেকে মহেশ ভাটের 'আশিকী'-র পোস্টার হয়ে গেলেন আমার চোখের সামনে। সবচেয়ে বড় কথা, ফরজানাকে সামনে রেখেই রেখা নিজের এই মনকামনা পূর্ণ করতে কোনও সমস্যায় পড়েন না। কেননা ফরজানা যে সব জানেন। সব বোঝেন।

 

 

রেখাকে প্রতিদিন সকালে খবরের কাগজ পড়ে শোনান ফরজানা। রেখা নিজে নিজে  কোনও দিন বই পড়েন নি আজ পর্যন্ত। প্রত্যেক দিনের খবরের কাগজ অথবা কোনও উল্লেখযোগ্য  বই রেখাকে পড়ে শোনান ফরজানা। আর সেই বইয়ের লেখক, লেখকের লেখার ভাল ভাল অংশ রেখার মনে থেকে যায় আজীবন। নিজের মনের মণিকোঠায় তিনি রেখে দেন সেসব।হিন্দি সিনেমার জগতে অভিনয় করতে আসা মেয়েদের অনেক সময়েই যে ধরনের পুরুষ শাসিত   পরিবেশের মধ্যে পড়ে, কল্পিত শপথের ফাঁদে পড়ে, যে মানসিক নিরাপত্তার অভাব বোধ হয়, মানসিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, তা থেকেই অনেক সময় কোনও  নারীর সঙ্গে সখ্য গভীর হয়। হলিউড বা ইউরোপিয়ান ছবির জগতে এরকম উদাহরণ বহু। জোডি ফস্টার-অ্যালেক্সজ্যান্ড্রা হেডিসন, সারা গিলবার্ট- লিন্ডা পেরি, কারা ডেলিভিন- অ্যাশলে বেনসন। এরকম আরও অনেক। 

আরও পড়ুন-কার্তিকের সঙ্গে অবাধ যৌনতা এখন অতীত, গোপনে কাকে ডেটিং করছেন সইফ কন্যা সারা, ছবি Viral

শুনেছি, প্রথমে রেখার কাছে  হেয়ার স্টাইলিস্ট হিসাবে এসেছিলেন ফরজানা। সেখান থেকেই রেখার সচিবের দায়িত্ব সামলানোর ভূমিকায় এসে পড়েন। রেখার সঙ্গে ফরজানার গভীর বন্ধুত্ব সেভাবেই তৈরি হয়েছিল। চেন্নাই থেকে মুম্বইয়ে আসার পর বহু পুরুষ এসেছেন রেখার জীবনে। বিশ্বজিৎ, ধর্মেন্দ্র, জিতেন্দ্র, কিরণ কুমার, বিনোদ মেহরা, মুকেশ আগরওয়াল, অমিতাভ, চাঙ্কি পান্ডে। আরও অনেক। শুধু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নয়, তার বাইরে থেকেও। মুম্বইয়ের পেজ থ্রি পার্সোন্যালিটি, বিখ্যাত  কলামনিস্ট মালবিকা সাংভি রেখা- ফরজানার সম্পর্ককে কাছ থেকে দেখে লিখেছিলেন, 'রেখা জানেন, ওঁর  অর্ধেক জীবনের সাফল্য আর রহস্যময়তার কৃতিত্ব যাবে ওঁর জীবনের  দীর্ঘদিনের বন্ধু, ডেডিকেটেড সেক্রেটারি ফরজানার কাছে। ফরজানা সার্ভস অ্যাজ রেখা'স আইজ অ্যান্ড ইয়ারস। উইদাউট হার, রেখা উড বি লস্ট।' রেখা তাঁর সঙ্গে ফরজানার  এই ছড়িয়ে পড়া সম্পর্ক নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন একবারই। যখন দিল্লিতে তাঁর দ্বিতীয় স্বামী মুকেশ আগরওয়াল আত্মহত্যা করেছিলেন। আর যখন কেউ কেউ তার পিছনে রেখা- ফরজানার সম্পর্ককে দায়ী করতে চেয়েছিলেন। রেখা বলেছিলেন, 'আমাদের রিলেশনশিপ নিয়ে যা কিছু বলা হয়েছে, সেগুলো সবই বিকারগস্ত  মনের কল্পনা।'

Share this article
click me!