রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে মাদক আইনের একাধিক ধারা প্রয়োগ করেছে এনসিবি। এরমধ্যে রয়েছে এনডিপিএস অ্যাক্টের ৮, ২০, ২২, ২৭এ, ২৮ ও ২৯ নম্বর ধারা। এরমধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক অভিযোগ ২৭ এ নম্বর ধারা। এই ধারায় বলা হয়েছে কেউ যদি কোনও মাদক চক্রের সঙ্গে যোগ রাখে এবং অর্থ লেনদেনে মাদক ক্রয় করে। তবে এই মাদক নিজের জন্য অন্য কাউকে নেশার জন্য সরবরাহ করে তাহলে সেটা একটি গুরুতর অপরাধ। এর অর্থ এই ব্যক্তি সমাজের পক্ষে অতি বিপজ্জনক যে অন্যকে নেশাগ্রস্ত করার জন্য এই ধরনের কাজ করে। রিয়ার জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ার পিছনে এই ২৭ এ অ্যাক্টটি বড়ো ভূমিকা পালন করেছে।
আরও পড়ুন- মাদকচক্র, গ্রেফতার, মাত্র ১৭ বছর বয়সেই রিয়ার লক্ষ্যে এনসিবি, ভাইরাল ১১ বছর আগের পোস্ট
এছাড়াও আরও একটি বিষয় সামনে এসেছে। আর তা হল মাদক মামলায় জামিন দেওয়ার অধিকার মেট্রোপলিটিন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের হাতে নেই। এর জন্য রিয়া-কে অন্তত সেশন কোর্টে আবেদন করতেই হবে। জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ার পিছনে এটাও একটা বড় কারণ।
আরও পড়ুন- নিত্যদিন ড্রাগ ও মদের নেশায় চুর এই তারকারা, শেষ করে দিয়েছে কেরিয়ার নয়তো প্রাণ
টানা দিন ধরে জেরার পর রিয়াকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করে এনসিবি। যদিও, জাতীয় মাদক প্রতিরোধক সংস্থার বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগে সরব হয়েছেন অনেকে। ১০ গ্রাম মাদক কেনার জন্য কীভাবে একজনকে মাদক চক্রের সঙ্গে যোগসাজোশ থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বেশকিছু আইপিএস অফিসার থেকে প্রাক্তন এনসিবি কর্তা। তবে, এদের কারোর মতে মাদক রাখাটা অপরাধ এবং কারোর জন্য অর্থ দিয়ে মাদক কেনাটাও অপরাধ বলে গণ্য হয়। কিন্তু, এর জন্য কাউকে ড্রাগ বিক্রেতা সাজিয়ে দেওয়াটা ঠিক নয় বলেও মনে করছেন অনেকে। রিয়ার ক্ষেত্রে এনসিবি অতি সক্রিয়তা অবলম্বন করেছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- মাদক চক্রে জড়িত শুধু নয়- অর্থ লেনদেনেরও অভিযোগ, রিয়ার জামিনের আবেদন খারিজ বিচারকের
রিয়ার আইনজীবী-ও গোটা পদ্ধতিতে প্রচণ্ডভাবে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ, একটি নিরীহ মহিলাকে কীভাবে মাটিতে পিষে ফেলে টুটি চিপে ধরা যায় তার জন্য একসঙ্গে তিন-তিনটি সরকারি তদন্তকারী সংস্থা উঠে পড়ে লেগেছে। এটা লঘুপাপে গুরুদণ্ড বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, মিডিয়ায় একাংশ থেকেও দাবি উঠেছে যে রিয়া-কে যে তেন প্রকারে জেলে পোড়াটা লক্ষ্য ছিল সিবিআই থেকে ইডি এবং এনসিবি-র। আর সেই কারণেই সিবিআই থেকে শুরু করে ইডি, এনসিবি-র এত বাড়াবাড়ি।
এই সব প্রশ্ন এই মুহূর্তে কিছুটা হলেও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তার কারণ বিহারের নির্বাচন। যেভাবে বিহারের ভোটে বিজেপি সুশান্তের মৃত্যুকে হাতিয়ার করে ইস্যু করেছে এবং রিয়াকে ভিলেনে পরিণত করেছে তাতে ইতিমধ্যে অনেকেই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। অভিনেত্রী টিসকা চোপড়া থেকে শুরু করে তাপসী পান্নু, স্বরা ভাস্কর সকলেই রিয়ার সমর্থনে মুখ খুলেছেন। এদের সকলেরই মতে, বিষয়টি মানবিকতা এবং পরিস্থিতির উপর বিচার করে বিবেচিত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হচ্ছে না এই অভিনেত্রীদের অভিযোগ। বলিউডে শিল্পীদের সংগঠনের পক্ষ থেকেও মিডিয়ার একাংশের বিরুদ্ধে বিবৃতি জারি করা হয়েছে। সেখানে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে তাঁদের এক মহিলা সহকর্মীর বিরুদ্ধে যে বিদ্বেষাগার মিডিয়া থেকে ছড়ানো হচ্ছেতা নিন্দনায় এবং একজনের সম্মানকে ক্ষুণ্ণ করার সামিল। রিয়ার আইনজীবীও ফের জানিয়েছেন, যে ভাবে সিবিআই, ইডি এবং এনসিবি রিয়ার পিছনে পড়েছে তাতে আশ্চর্য লাগছে যে এরা কেউই এটা ভাবছে না সুশান্ত একজন মানসিকবিকারগ্রস্থ ও মাদকাসক্ত মানুষে পরিণত হয়েছিলেন এবং পরে তিনি আত্মঘাতী হন। অথচ এহেন একজনের মানুষের মৃত্যুর জন্য তাঁর কাছের মানুষদের কাঠগড়ায় তুলে দেওয়া হচ্ছে।