নভেল করোনাভাইরাসের সঙ্গে শরীরে ছিল আরও অনেক রোগ
ডাক্তাররা বলে দিয়েছিলেন রাতটাও বোধহয় পার হবে না
১৫ বছরের প্রেমিকাকে আগে নানান কারণে বিয়ে করতে পারেননি
মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগে এক নার্স-ওর উদ্যেগে ইচ্ছাপূরণ হল তাঁর
নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মানুষ বেদনার্ত। সংক্রমণ রোধে প্রিয়জনদের থেকে দূরে থাকা, অবিরাম সংক্রমণের ভয়, প্রিয়জনদের মৃত্যু, - এই মহামারি বিশ্বের বহু মানুষের যন্ত্রনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার তারমধ্যেই তৈরি হচ্ছে মানবিকতার ছোট্ট-ছোট্ট গল্প, যা ফের একববার মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার ভরসা দিচ্ছে। সম্প্রতি এক ব্রিটিশ নার্স, সোফি ব্রায়ান্ট-মাইলস এরকমই এক সুন্দর মুহূর্ত উপহার দিলেন বিশ্ববাসীকে।
বর্তমানে সময়ের প্রয়োজনে অনেককেই প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন করে নার্স বা স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মী হিসাবে নিযুক্ত করা হচ্ছে। সোফি-ও সেইরকমই একজন। গত ২০ এপ্রিল তিনি কাজে য়োগ দেন। প্রথম দিনই ব্র্যাডফোর্ড রয়্যাল ইনফার্মারির কোভিড-১৯ ওয়ার্ডে তাঁর নাইট ডিউটি ছিল। কাজে এসে দেখেন, কোভিড-১৯' সন্দেহভাজন এক যুবক একই সঙ্গে আরও অনেকগুলি রোগ নিয়ে ভর্তি রয়েছে। তাঁকে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছিল, সম্ভবত রাতটাও পার করতে পারবেন না তিনি।
এর একটু পরেই সোফির সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, সেই যুবকের প্রেমিার। সোফি জানতে পেরেছিলেন, গত ১৫ বছর ধরে তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক, একসঙ্গেই থাকেন। কিন্তু, প্রথমে আর্থিক সমস্যা পরে জীবনের যাতাকলে জড়িয়ে গিয়ে বিয়েটা করা হয়নি। এইকথা শোনার সোফি সিদ্ধান্ত নেন, ওই রাতেই ওই দম্পতির বিবাহ দেবেন।
তিনি হাসপাতাল সংলগ্ন গির্জার যাজক, জো ফিল্ডার-কে পুরো বিষয়টি জানান। জো জানতেন আইনত তিনি ওই দম্পতিকে বিবাহবন্ধনে বাঁধতে পারবেন না, তবুও ওই দম্পতির ইচ্ছাপূরণের জন্যই ছোট করে হলেও বিবাহের ব্যবস্থা করেন। ওই আক্রান্ত যুবক ও তাঁর প্রেমিকা দুজনেই সংক্রমণরোধী পোশাক, গ্লাভস, ফেসমাস্ক - সুরক্ষার সব ব্যবস্থা নেন। ভিডিও কল করে প্রায় সব আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবদের সাক্ষী রাখা হয় সেই বিবাহের। রাতে হাসপাতালে উপস্থিত অনেক চিকিৎসাকর্মীও জড়ো হয়েছিলেন।
লকডাউনে জমিয়ে চলছিল লুডো খেলা, মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে এখন হাহুতাশ করছেন ৩১ জন
ইতিহাসের আশ্চর্য পুনরাবৃত্তি, ১০০ বছরের তফাতে দুই মহামারি কাড়ল দুই যমজ ভাই-এর প্রাণ
বিপর্যয়েও মুসলিম-বিদ্বেষ, দরজা থেকে করোনাযোদ্ধা'কে তাড়িয়ে বিপাকে জাত-জালিয়াত
জো ফিল্ডার-এর সঙ্গে যুবক ও তাঁর প্রেমিকা দুজনেই আমৃত্যু একসঙ্গে থাকার শপথ নেন। তবে দুজনেরই শপথবাক্য পাঠ করতে সমস্যা হয়েছে। আক্রান্ত যুবক প্রবল শ্বাসকষ্টের জন্য শপথপাঠে বারবার থমকেছেন, আর তাঁর প্রেমিকার কথা বারবার আটকে গিয়েছে কান্না চাপার চেষ্টায়। সোফি জানিয়েছেন, ভিডিও কলে তাদের পরিবার পরিজনরা একইসঙ্গে হাসছিলেন আবার কাঁদছিলেনও। একটি ছোট ফটোশুট-ও হয় বিবাহিত দম্পতির।
সোফি জানিয়েছেন, উপস্থিত হাসপাতালের কর্মীরাও সকলে কেঁদে ফেলেছিলেন। বিবাহের পর ওই যুবক ফের তার শয্যায় ফিরে যান। রাতটা সত্যিই পার করতে পারেননি তিনি। জো ফিল্ডার বলেছেন, চিকিৎসা করাটাই সব নয়, এই ধরণের মানবিক আচরণে মানুষ বুঝতে পারে, হাসপাতালের কর্মীরা তাঁদের প্রতি যত্নবান, তাঁদের ভালোবাসেন।