কয়েকদিন আগে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল এক মিম পোস্টার। ঋত্বিক-আমিশার ‘কহোনা প্যার হ্যায়’-র আদলে সেই পোস্টারে দেখা গেছিল মুখে মাস্ক পরিহিত ঘনিষ্ঠ প্রেমিক প্রেমিকাকে। পোস্টারে লেখা 'করোনা প্যার হ্যায়'। এবার কুলটির নিষিদ্ধপল্লীতেও দেখা গেল সেই দৃশ্য। যৌনপল্লীতে ঘনিষ্ঠ হতে বাধা নেই যদি মুখে থাকে ‘এন৯৫ মাস্ক’। করোনার প্রকোপে লাটে ওঠা যৌন ব্যবসা বাঁচাতে মুখে ‘এন৯৫ মাস্ক’ নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেল কুলটির লছিপুর যৌনপল্লীর কর্মীদের।
ডাক্তার বলছে বিষ, দিলীপের কাছে গো-মূত্র 'অমৃত'
যৌনপল্লীতে সিএনসি ক্লাবের পক্ষ থেকে এই মাস্কগুলি বিলি করা হয়েছে যৌনকর্মীদের। আপাতত ৫০০ যৌনকর্মী মাস্ক পেয়েছেন। বুধবার দিন আরও ৫০০ যৌনকর্মীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে মাস্ক ও স্য়ানিটাইজার। করোনা ভাইরাসের প্রকোপে এমনিতেই লাটে উঠেছে দেহব্যবসা। শারীরিক মিলনের ছোঁয়াতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই খদ্দেরদের দেখা নেই কুলটির নিষিদ্ধপল্লী লছিপুর ও চবকা যৌনপল্লীতে।
আগে বলেছিলেন 'দিল্লির হিংসা ঢাকতেই করোনা', এখন ২০০ কোটির ফান্ড গড়ছেন মমতা
এই মূহূর্তে দেশজুড়ে করোনা সতর্কতায় স্কুল-কলেজ সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাকেন্দ্রের ছুটি ৩১ মার্চ থেকে বাড়িয়ে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। এরই মাঝে করোনার গ্রাসে পড়েছেন যৌনকর্মীরা। যৌনকর্মীরা তাঁদের ব্যবসা চালু রাখলেও খদ্দেরের দেখা নেই। ফলে জেলার সব থেকে বড় যৌনপল্লীতে মন্দা দেখা দিয়েছে। সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে তবু পেটের তাগিতে নিষিদ্ধপল্লীর যৌনকর্মীরা ব্যবসা বন্ধ করতে পারেননি।
জানা গিয়েছে লছিপুর যৌনপল্লীতে রয়েছে এক হাজার সক্রিয় যৌনকর্মী। চবকাতে রয়েছে ২০০ জন সক্রিয় যৌনকর্মী। লছিপুর সিএনসি ক্লাবের সম্পাদক গৌতম বিশ্বাস জানান,প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাইরে থেকেও যৌনকর্মীরা এখানে আসেন। সেই সমস্ত যৌনকর্মীরা এই কয়েকদিন ধরে আসছেন না। যাঁরা স্থানীয় তাঁরা রয়েছেন এখানে। এরকম পরিস্থিতির মধ্যে আমরা ওদের হাতে স্যানিটাইজার, সাবান, কাগজের রুমাল ও মাস্ক বিলি করেছি। খদ্দেরদের জন্যও মাস্ক রাখা আছে।
জানালা খোলা রাখলে ভাইরাস বেরিয়ে যাবে, করোনা রুখতে দিদির নিদান
অন্যদিকে দুর্বার সমিতির পক্ষ থেকে মর্জিনা শেখ বলেন, আমরা নজর রেখেছি এলাকায়। মাস্ক বিলি করেছি পাশাপাশি শারীরিক পরিস্থিতি কার কেমন সেই খোঁজখবরও রয়েছে আমাদের। লছিপুর নিষিদ্ধপল্লী দিশা জনকল্যাণ সমিতি এলাকায় যৌনকর্মী ছাড়াও তাঁদের পরিবার শিশু সবাই বসবাস করেন। শিশুদের স্কুলও রয়েছে এলাকায়। সমস্ত শিশুদেরকেও স্যানিটাইজার ও মাস্ক দেওয়া হয়েছে বলে যৌনকর্মীরা জানান।
যৌনকর্মী পায়েল মণ্ডল, ঝর্ণা রায়, রচনা কুমারীরা বলেন খদ্দেররে দিকে আমাদেরও নজর রয়েছে। তাঁরা কাশছেন কিনা, অসুস্থ কিনা দেখে নিচ্ছি। সেরকম কিছু বুঝলে দুর্বার সমিতিকে খবর দিচ্ছি। সেই সব খদ্দেরের সঙ্গে আমরা যাচ্ছি না। জানা গিয়েছে, কুলটির এই নিষিদ্ধপল্লীতে স্থানীয় ও পড়শি রাজ্যসহ ভিনরাজ্য মিলিয়ে প্রতিদিন ৫ হাজার গ্রাহকের আনাগোনা রয়েছে। ভিনরাজ্যের ট্রাক চালকরাও রয়েছে এই তালিকায়। করোনার আতঙ্কে সেই সংখ্যা এখন ৫০০ তে এসে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে শুনশান এলাকা। যৌনকর্মীদের থেকে জানা গিয়েছে, এখানে কারো জ্বর, সর্দি, কাশি হলেই তাকে সকলে একঘরে করে দিচ্ছে। এখন সকলেই মাস্ক পরে থাকছেন।