মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আসানসোলে
আইএসপি-র কারখানায় গ্যাস লিক
মৃত্যু দুই ঠিকা শ্রমিক
তবে, দুর্ঘটনা না গাফিলতি, তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে
তৃনাঞ্জন চট্টপাধ্যায় / পশ্চিম বর্ধমান: বুধবার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলে। কেন্দ্রীয় ইস্পাত সংস্থা আইএসপি-তে গ্যাস লিক করে মৃত্যু হল দুই ঠিকা শ্রমিকের। তবে, ঠিকা শ্রমিকদের অভিযোগ, গ্যাস লিক করেনি, বরং এদিন দুপুরে কারখানা থেকেই কেউ গ্যাসের নল খুলে দিয়েছিল।
জানা গিয়েছে বুধবার কারখানার গ্যাস চেম্বারগুলি পরিষ্কারের কাজ চলছিল। এর জন্য ৫ জন শ্রমিককে বরাত দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা সকলেই বার্নপুরেরই স্থানীয় বাসিন্দা। ঠিকা শ্রমিকরা জানিয়েছেন, সকাল থেকেই শালপারের গ্যাস চেম্বার পরিষ্কারের কাজ করছিলেন তাঁরা। সেই সময় চেম্বারে কোনও গ্যাস ছিল না।
এরপর দুপুরের টিফিনের পর দুপুর আড়াইটে নাগাদ তাঁরা আবার কাজে ফিরে আসেন। প্রথমে সুমন বিশ্বাস নামে এক ঠিকা শ্রমিককে চেম্বারে নামানো হয়। চেম্বারের নামার পর বার্নপুর বিধানপল্লীর বাসিন্দা সুমন আর কোনও সাড়া দেয়নি। ওপর থেকে খুব আস্তে গোঁ গোঁ করে শব্দ শোনা গিয়েছিল। এরপর চেন্বারে নেমেছিলেন বাবন সরকার। সুমন কোনও দুর্ঘটনায় পড়েছেন আঁচ করেই তিনি সঙ্গে জল নিয়ে গিয়েছিলেন। সুমনের মুখে জলের ঝাপটা দিতে দিতে গ্যাসের প্রভাবে সংজ্ঞা হারান বাবন-ও।
বাবনও না উঠে আসায়, নিচে নামেন শ্যামাপ্রসাদ দে নামে আরেক ঠিকা শ্রমিক। তিনি সিঁড়ি থেকেই বুঝতে পারেন, সালফার গ্যাসে ভরে গিয়েছে চেম্বার। তিনি দ্রুত উপরে উঠে আসেন। এরপর সুমন ও বাবনকে উদ্ধার করতে চেম্বারে নেমেছিলেন শিবদাস নায়ক। কিন্তু ততক্ষণে চেম্বার এতটাই গ্যাসে পূর্ণ হয়ে গিয়েছে যে, দু-তিন সিঁড়ির বেশি নামতে পারেননি তিনি। এরপরই ঠিকা শ্রমিকরা কারখানায় গিয়ে খবর দেন, বহু মানুষকে ডেকে নিয়ে আসেন চেম্বারের মধ্যে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে থাকা শ্রমিকদের উদ্ধারে। কিন্তু, গ্যাসের প্রভাব কাটিয়ে কেউই নিচে নামতে পারেনি।
এরপর সিআইএসএফ কর্মীরা গ্যাস মাস্ক পরে চেম্বারে নেমে সুমন বিশ্বাস ও বাবন সরকারের নিথর দেহ উপরে তুলে নিয়ে আসে। তাঁদের বার্নপুর হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তাররা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। কেন এই ঘটনা ঘটল, তার তদন্তে নেমেছে কর্তৃপক্ষ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শিল্পনগরীতে। ঠিকা শ্রমিক প্রণয় চৌধুরীর দাবি, গ্যাস লিক করেনি, বরং কারখানা থেকেই কোনও কর্মী সম্ভবত ভুল করে চেম্বারের গ্যাসের মুখ খুলে দিয়েছিলেন। তার জন্য়ই তাঁদের দুই সহকর্মীর প্রাণ গেল।