
বরাবরই সুশাসনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (Andaman And Nicobar Islands)। আরও সেই তার প্রমাণ দিল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের প্রশাসন। রবিবার, তারা ঘোষণা করেছে, এই দ্বীপপুঞ্জের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ১০০ শতাংশই করোনাভাইরাস টিকার (Coronavirus Vaccine) সম্পূর্ণ ডোজ পেয়ে গিয়েছেন। ভারতের সবকটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে তারাই এই বিষয়ে প্রথম হল। অথচ, ভারতের অধিকাংশ এলাকার থেকে এই দ্বীপপুঞ্জে টিকাকরণ অভিযানের কাজ চালানো ছিল অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের।
রবিবার, এই বিষয়ে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের প্রশাসন একটি টুইট করেছে। এই দ্বীপপুঞ্জে টিকাকরণের জন্য শুধুমাত্র কোভিশিল্ড (Covishield) ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়েছে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে শুধু ভারতের নয়, গোটা বিশ্বেরই অন্যতম প্রত্যন্ত অঞ্চল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে, এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য তাদের অনেক প্রতিকূলতাকে জয় করতে হয়েছে। কী ধরণের প্রতিকূলতা? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ গঠিত মোট ৮৩৬ টি ছোট-বড় দ্বীপ নিয়ে। উত্তর থেকে দক্ষিণে ৮০০ কিলোমিটারেরও বেশি জায়গা জুড়ে এই দ্বীপগুলি ছড়িয়ে রয়েছে। আর তার মাঝে মাঝে রয়েছে রুক্ষ সমুদ্র, ঘন বনাঞ্চল, পাহাড়, সেই সঙ্গে জুঝতে হয়েছে প্রতিকূল আবহাওয়ার বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্যকর্মীদের এই দ্বীপপুঞ্জের প্রত্যন্ত স্থানগুলিতে পৌঁছতে রীতিমতো প্রাণের ঝুঁকি নিতে হয়েছে। কেউ স্থলপথে, আবার কেউ কেউ সমুদ্র ও আকাশপথে দুর্গম স্থানগুলিতে পৌঁছে গিয়েছেন। জাহাজ এবং হেলিকপ্টারে করে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ভ্যাকসিনও। ঘন জঙ্গল এবং দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলগুলির অনেক জায়গাতেই ভয় ছিল বিষাক্ত সাপ এবং কুমিরের। কিন্তু, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির স্বাস্থ্যকর্মীরা সেসব উপেক্ষা করে গিয়েছেন, শুধুমাত্র প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের টিকা দেওয়ার জন্য।
তবে শুধু স্বাস্থ্যকর্মীরাই নন, প্রশাসন জানিয়েছে, আন্দামানের এই কৃতিত্বের ভাগিদার, সেখানকার বাসিন্দা এবং বিভিন্ন এনজিওগুলিও। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের প্রশাসন জানিয়েছে, আন্দামানে ভারতের প্রায় সব জায়গার লোক এসে থাকলেও, তাঁরা শান্তিতে থাকতে চান। মহামারি (Coronavirus Pandemic) নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিতেই প্রশাসনের সমস্ত বিভাগ সম্মিলিতভাবে সচেতনতা প্রচার শুরু করেছিল। সেই প্রচারে কাজ দিয়েছে। সেখানকার মানুষ অযথা আতঙ্কিত না হয়ে, কোভিড-১৯ প্রোটোকল অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করেছেন। টিকাকরণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন প্রশাসনের সঙ্গে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও, বাসিন্দাদের সুবিধার দিকে নজর দেওয়া হয়েছিল। ঈদের আগে একমাস টিকা দেওয়া হয়েছে রোজার পরে, সন্ধ্যায়।
১০০ শতাংশ টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রশাসনকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছে দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন এনজিওগুলি। শ্রমিক এবং অন্যান্য চাকুরিজীবী জনগোষ্ঠীর পক্ষে দিনেরবেলা টিকা নেওয়া ছিল সমস্যার। সেই কারণে সন্ধ্যাবেলায় তারা বাড়ি ফেরার পর তাদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুরু করা হয়েছিল বাড়ি বাড়ি গিয়ে মোবাইল টিকাদান অভিযান। এই বিষয়ে সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছিল এনজিওগুলি।
চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি থেকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে করোনার টিকাকরণ অভিযান শুরু হয়েছিল। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির সর্বশেষ স্বাস্থ্য বুলেটিন অনুসারে, ২.৮৭ লক্ষ মানুষকে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের দুটি করে ডোজ দেওয়া হয়েছে। শুরুতেই সম্ভাব্য দুর্বল উপজাতীয় গোষ্ঠীদের বা পিভিটিজি (PVTG) সম্প্রদায়ভুক্তদের টিকা দেওয়া হয়েছিল। এখানে এমন অনেক উপজাতির মানুষ রয়েছেন, যাঁদের সঙ্গে তথাকথিত সভ্য জগতের যোগাযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। তাঁদের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বাস অর্জন একটা বড় সমস্যার বিষয় ছিল। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের স্বাস্থ্যকর্মীরা দক্ষতার সঙ্গে সেই কাজও করে দেখিয়েছেন।