পঞ্জাবে (Punjab) দু-দুটি গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনার পিছনে কি পাকিস্তানের চক্রান্ত? সন্দেহের তালিকায় কাপুরথালা (Kapurthala) গুরুদ্বারের গ্রন্থি, বাবা অমরজিৎ সিং-এর (Baba Amarjit Singh) নাম।
শনিবার বিকালেই অমৃতসরের (Amritsar) স্বর্ণ মন্দিরে (Golden Temple) শিখ (Sikhs) ধর্মকে অবমাননা করার চেষ্টা করার অভিযোগে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। তারপর ২৪ ঘন্টা যেতে না যেতেই পঞ্জাবের (Punjab) কাপুরথালা (Kapurthala) এলাকায় আরেক গুরুদ্বারেও সেই ধর্মবিশ্বাসে আঘাতের অভিযোগেই গণপিটুনিতে মৃত্যুর আরও একটি ঘটনা ঘটেছে। আগামী বছরের শুরুতেই বিধানসভা নির্বাচন। তার ঠিক আগে এই দুই ঘটনা নিয়ে থমথমে পঞ্জাব। আর এর পিছনে পাকিস্তান (Pakistan) তথা পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের (ISI) হাত আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, শিখ সম্প্রদায়ের ঐক্যে ভাঙন ধরাতে চাইছে পাকিস্তান।
এদিন, কাপুরথালা ডেরা কমপ্লেক্সে স্থাপিত একটি নিশান সাহেব (ত্রিভুজাকার শিখ ধর্মীয় পতাকা)-কে 'অসম্মান' করার অভিযোগে, এদিন ভোরেই ওই যুবককে আটক করেছিল গুরুদ্বার কর্তৃপক্ষ। পরে পুলিশের হাত থেকে কার্যত তাকে ছিনিয়ে নেয় ক্ষিপ্ত জনতা। তারপর শুরু হয় মার। সেই মারের চোটে মৃত্যু হয় ২০-র কোঠায় বয়স থাকা ওই যুবকের। যে জনতা তাকে পিটিয়ে মেরেছে, তার মধ্যে শিখ উগ্রবাদী নেতা এবং নিহঙ্গরাও (Nihangs) মিশে ছিলেন বলে অভিযোগ। আর তাদের ডেকেছিলেন কাপুরথালা গুরুদ্বারের গ্রন্থি, বাবা অমরজিৎ সিং (Baba Amarjit Singh)। এই অমরজিতই পাকিস্তানের হয়ে ভারত-বিরোধী কাজ করছেন বলে সন্দেহ ভারতীয় গোয়েন্দাদের।
কাপুরথালা গুরুদ্বারের গ্রন্থি, বাবা অমরজিৎ সিং, রবিবার সকালেই একটি ফেসবুকে লাইভ করে ওই ঘটনার বিবরণ দিয়েছিলেন। যে ফেসবুক লাইভ স্থানীয় শিখ সম্প্রদায়ের মানুষকে উসকে দিয়েছিল বলে অভিযোগ। একইসঙ্গে তিনি, আম্রিক সিং আজনালা (Amrik Singh Ajnala) এবং অন্যান্য মৌলবাদী শিখ নেতাদের কাপুরথালা গুরুদ্বারে ডেকে আনেন। আজনালা ও অন্যান্য মৌলবাদীদের নেতৃত্বেই উত্তেজিত জনতা অজ্ঞাতপরিচয় ওই যুবককে বেধড়ক মারধর করে এবং অবশেষে মেরে ফেলে বলে, অভিযোগ।
এমনকী, তার আগে আরও একটি ফেসবুক লাইভ করেছিলেন অমরজিৎ। সেখানে লাল জামা পরা ওই হতভাগ্য যুবককে, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় লাঠি দিয়ে প্রহার করতে দেখা গিয়েছিল এক ব্যক্তিকে।
সিএনএন-নিউজ১৮'এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাবা অমরজিৎ সিং, গত পাঁচ বছর ধরেই বিভিন্ন শিখ পরবে, পাকিস্তানে অবস্থিত শিখ গুরুদ্বারগুলিতে তীর্থযাত্রা বা 'জাঠা' সংগঠিত করে আসছেন। পাকিস্তানে যাত্রার বিষয়ে শিখ ধর্মের অন্যান্যদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হলেও, বাবা অমরজিৎ সিং-এর জাঠাগুলিকে পাকিস্তান হাইকমিশন (Pakistan High Commission, New Delhi), ভিসা দেওয়ার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়। তাঁকে রীতিমতো ভিআইপি খাতির করা হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতীয় গোয়েন্দাদের এক সূত্র জানিয়েছে, নয়াদিল্লিতে অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশনের পাশাপাশি পাকিস্তানে থাকা আইএসআই এজেন্টরাও, অমরজিৎ সিংকে ভারত বিরোধী কার্যকলাপে সহায়তা করার চেষ্টা করে থাকে।
এদিনের ফেসবুক লাইভে বাবা অমরজিৎ সিং অভিযোগ করেছেন, ওই যুবক ধর্মবিদ্বেষী। ভোররাতে গুরুদ্বারের ভিতর 'নিশান সাহেব'কে (শিখ পতাকা) সে অসম্মান করেছিল। পালাতে গিয়ে গুরুদ্বারের কর্মীদের হাতে ধরা পড়ে। অমরজিৎ সিং আরও দাবি করেন, ওই যুবক নাকি বলেছিলেন, নয়াদিল্লি (New Delhi) থেকে এক ব্যক্তি তাঁকে অর্থ দিয়েছিল এই কুকর্ম করার জন্য। সেই অর্থের বিনিময়েই, সে এই কাজ করতে এসেছিল। আদৌ এই অভিযোগের কোনও সারবত্তা আছে কিনা, তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন, দিল্লির নাম নিয়ে আসলে অমরজিৎ সিং, এই ঘটনায় রাজনৈতিক রঙ লাগাতে চাইছেন। নির্বাচনমুখী পঞ্জাবের রাজনীতি গুলিয়ে দিতে চাইছেন।
পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ এস চান্নি (Charanjit S Channi) এই দুই ঘটনারই তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি রাজ্য পুলিশ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শিরোমনি গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটি বা এসজিপিসি-র (Shiromani Gurdwara Prabandhak Committee) সভাপতিকে ফোন করেছেন। এই মামলার গভীরে গিয়ে আসল অপরাধীদের চিহ্নিত করার বিষয়ে পঞ্জাবের কংগ্রেস সরকার এসজিপিসি-কে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।