করোনাভাইরাসের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে
তবে এমন প্রতিক্রিয়ার কথা এর আগে শোনা যায়নি
নাসিকের এক ব্যক্তির দাবি টিকার দুটি ডোজ নিয়ে তাঁর শরীর চুম্বক হয়ে গিয়েছে
লোহা-ইস্পাতের বস্তু নিয়ে আসলেই তা তার গায়ে আটকে যাচ্ছে
করোনাভাইরাসের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে গোটা বিশ্বেই অনেক আলোচনা হয়েছে, চলছেও। বেশ কিছু মানুষের ভ্যাকসিনের ডোজ নেওয়ার পর জ্বর আসছে। আবার কারোর আসছে না। কারোর গায়ে-হাত-পায়ে খুব ব্যথা হচ্ছে, কারোর হচ্ছে না। কেউ টিকা নিয়ে বেশ কাহিল হয়ে পড়ছেন, কারোর কিছুই মনে হচ্ছে না। তবে মহারাষ্ট্রের নাসিকের এক ব্যক্তি করোনার টিকা নিয়ে এমন এক চমকে দেওয়া পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দাবি করেছেন, যেমনটা এর আগে কখনও শোনা যায়নি।
নাসিকের ওই ব্যক্তির নাম অরবিন্দ সোনার। তাঁর দাবি, করোনাভাইরাস টিকার দুটি ডোজ নেওয়ার পর, তাঁর শরীর নাকি চুম্বকে পরিণত হয়েছে। হাতা-খুন্তি-পয়সা লোহা বা ইস্পাতের যা কিছু আছে, সবই তাঁর গায়ে আটকে যাচ্ছে। অরবিন্দ সোনার তাঁর দাবি প্রমাণের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেই ভিডিওতে সত্যি-সত্যিই তাঁর শরীরে লোহা এবং ইস্পাতের তৈরি জিনিসপত্র আটকে যেতে দেখা যাচ্ছে, একেবারে চুম্বকের মতোই। বলাই বাহুল্য সেই ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
জানা গিয়েছে, অরবিন্দ সোনার কোভিশিল্ড টিকার প্রথম ডোজটি নিয়েছিলেন গত মার্চ মাসে। পরের ডোজটি নেন জুন মাসের ২ তারিখে, এক বেসরকারি হাসপাতালে। তারপর থেকে ভালই ছিলেন। কিনতু, তাঁর পুত্র তাঁকে জানায়, সে এক জায়গায় পড়েছে, ভ্যাকসিন নেওয়য়ার পর লোহা-স্টিলের জিনিস মানুষের গায়ে আটকে যায়। ছেলের কথা পরীক্ষা করে দেখতে গিয়েই তিনি প্রথম দেখেছিলেন যে তাঁর শরীর চুম্বকের মতো হয়ে গিয়েছে। ভ্যাকসিনের টিকা নেওয়া ছাড়া অরবিন্দ সোনারের শরীরে দশ বছর বাইপাস সার্জারি হয়েছিল, আর দু'বছর ধরে তিনি ডায়াবেটিসে ভুগছেন। এর কোনওটি থেকেই তাঁর শরীরে কি চৌম্বক শক্তি তৈরি হওয়া সম্ভব?
চিকিৎসক এবং চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা কিন্তু, বলছেন করোনাভাইরাসের টিকা থেকে এমনটা হওয়া সম্ভব নয়। মহারাষ্ট্র কুসংস্কার নির্মূল সমিতির প্রধান ডা. হামিদ দাভোলকার জানিয়েছেন শরীরে ঘাম থাকলে পয়সা বা বাসন-কোসন শরীরে চেপে ধরলে সেই জায়গায় একটি বায়ুশূন্যতা তৈরি হয়। তার কারণেই সেগুলি গায়ের সঙ্গে আটকে থাকতে পারে। তাঁদের সংগঠনের ব্যক্তিরা বহুবার এমন অন্ধ বিশ্বাস ধরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, এইসব ঘটনার জন্য ভারতের টিকাকরণ অভিযান ধাক্কা খাচ্ছে।
অন্যান্য চিকিৎসকরা দাভোলকারের মতো আগ্রাসী না হলেও, করোনা টিকার কারণে এমনটা ঘটতে পারে না বলে জানিয়েছেন। বিশ্বজুড়ে কয়েকশো কোটি লোক করোনার টিকা নিয়েছে। কারোর ক্ষেত্রে এমনটটা শোনা যায়নি। কোভিডের ভ্যাকসিন এবং শরীরে স্টিল এবং লোহার জিনিসপত্র আটকে যাওয়ার মধ্যে কোনও যোগ নেই বলেই দাবি করেছেন তাঁরা। নাসিক জেলার চিকিত্সাধিকারি ডা. অশোক থোরাট জানিয়েছেন, এই বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখার জন্য তাঁরা বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ দিয়েছেন। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবেন। অশোক থোরাটের মতেও করোনা ভ্যাকসিন থেকে চৌম্বক শক্তি তৈরি হতে পারে না। যদি সত্য়িই অরবিন্দ সোনারের দেহে চৌম্বক শক্তি এসে থাকে, তাহলে তা কীকরে হল সেটা জানা গুরুত্বপূর্ণ। তা গবেষণার বিষয় হবে।