কুম্ভমেলায় করোনা পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতি
মনগড়া নাম-ঠিকানা-ফোন নম্বর দিয়ে তৈরি করোনা পরীক্ষার ভুয়ো রিপোর্
অভিযোগের আঙুল এক বেসরকারি সংস্থার দিকে
এদিকে ভুয়ো পরীক্ষার এসএমএস পেয়ে ভীত বহু মানুষ
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গের মধ্য়েই, গত এপ্রিল মাসে, হরিদ্বারে আয়োজিত হয়েছিল কুম্ভমেলা। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মামলা করা হয়েছিল উত্তরাখণ্ডের হাইকোর্টে। আদালত সরকারকে প্রতিদিন অন্তত ৫০,০০০ করোনা টেস্ট করার নির্দেশ দিয়েছিল। যারপর সব মিলিয়ে সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলি মিলিয়ে উরসব চলাকালীন ৪ লক্ষ পরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু, কুম্ভমেলার এই করোনা পরীক্ষায় ধরা পড়ল বড়-সড় জালিয়াতি। অভিযোগের আঙুল এক বেসরকারি সংস্থার দিকে।
কীরকম জালিয়াতি? জানা গিয়েছে, ওই ৪ লক্ষ করোনা পরীক্ষার মধ্যে ১ লক্ষই ভুয়ো। অর্থাৎ, কোনও নমুনা পরীক্ষা না করেই পরীক্ষা করা হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। মনগড়া নাম, মনগড়া পরিচয় দাখিল করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ইন্ডিনয়ান কাউন্সিল ফর মেডিকাল রিসার্চ বা আইসিএমআর (ICMR)-এর পোর্টালে। সেইসব নথিবদ্ধ ফোন নম্বরে আইসিএমআর-এর পক্ষ থেকে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে এসএমএস করে। করোনা পরীক্ষা না করিয়েই সেইসব এসএমএস পেয়ে ফোন নম্বরের মালিকরা বিসমিত হয়েছেন। কেউ কেউ ভয় পেয়ে গিয়েছেন, আবার কেউ কেউ মনে করেছেন কেউ তার সঙ্গে মজা করেছে।
যেমন হরিদ্বারেরই এক কমন সার্ভিস সেন্টারের মালিক গুলাম মহম্মদ। আচমকা ফোনে করোনা পরীক্ষা করানোর বার্তা পেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন, তাঁকে বোধহয় কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। পঞ্জাবের বাটলার ট্যুর অপারেটর ইকবালজিৎ সিং আবার সেই এসএমএস পেয়ে, কেউ মজা করেছে ভেবে ডিলিট করে দিয়েছিলেন। অনেক ক্ষেত্রেই এই ভুয়ো টেস্টের ক্ষেত্রে এমন ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে, যার কোনও অস্তিত্বই নেই। আবার অনেক ক্ষেত্রে রয়েছে শুধুমাত্র কোনও ব্যক্তির প্রথম নাম। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক রিপোর্ট অনুযায়ী, 'চম্পু', 'গুটখা' - এমন সব নাম দিয়েও করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। আর বেশিরভাগ রিপোর্টই নেগেটিভ। আর নমুনা সংগ্রহকারী হিসাবে নাম দেখানো হয়েছে এমন অনেকেই এখন স্কুলে পড়ে!
এখন, সেই জালিয়াতি নিয়ে তদন্ত শুরু হওয়ায়, এই ভুয়ো করোনা টেস্টের রিপোর্টধারীরা আবার অন্য ধরণের বিপদের আশঙ্কা করছেন। মধ্যপ্রদেশের মোটর মেকানিক আরিফ, মহারাষ্ট্রের রাঁধুনি রজনিৎ, রাজস্থানের গোপাল লাল ধোবি - প্রত্যেকেই উত্তরপ্রদেশ সরকারের তদন্তকারীদের কাছ থেকে ফোন পেয়েছেন। তাঁরা ভয় পাচ্ছেন, এই তদন্তে তাদের না হেনস্থা করা হয়, তাদের না দোষী সাব্যস্ত করা হয়। জানা গিয়েছে, উত্তরাখণ্ড সরকার কুম্ভমেলার বিপুল পরীক্ষার ভার সামলানোর জন্য ৯টি বেসরকারি সংস্থাকে পরীক্ষার দায়িত্ব দিয়েছিল। তাদের মধ্যে একটি সংস্থাই এই কাণ্ড করেছে। তাদের নামে পুলিশে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।