সুইস ব্যাঙ্ক থেকে কালো টাকা দেশে ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী
গত সাড়ে ৬ বছরে কত টাকা ফিরেছে তার কোনও তথ্য নেই
এরই মধ্যে জানা গিয়েছে গত এক বছরে সুইস ব্যাঙ্কে কালো টাকার পাহাড় বানিয়েছেন ভারতীয়রা
এই বিষয়ে কী বলছে মোদী সরকার
সুইস ব্যাঙ্ক (Swiss Bank) থেকে কালো টাকা উদ্ধার করে আনা হবে, ২০১৪ সালে এমনই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) তথা বিজেপি (BJP)। তারপর সাড়ে ৬ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। সুইস ব্যাঙ্ক কত পরিমাণ কালো টাকা দেশে ফিরেছে, তার কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সুইস কর্তৃপক্ষ ভারতের সঙ্গে আর্থিক তথ্য আদান-প্রদান শুরু করেছে। এরই মধ্যে জানা গিয়েছে, গত এক বছরে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের কালো টাকার পরিমাণ বেড়েছে ২৮৬ শতাংশ! শনিবার, অবশ্য এই খবর অস্বীকার করল মোদী সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই আমানত সম্পর্কে বিশদ যাচাই করতে সুইস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
শুক্রবারই সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের বার্ষিক তথ্য উদ্ধৃত করে বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয় ব্যক্তি ও সংস্থাগুলির মোট আমানত ২০২০ সালে ২৮৬ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৯-এর শেষে যার পরিমাণ ছিল ৬,৬২৫ কোটি টাকা, তাই একবছর পরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২০,৭০০ কোটি টাকায়। এই সময়ে সুইস ব্যাঙ্কের ভারতীয় গ্রাহকদের আমানত কমলেও, ভারত ভিত্তিক শাখা এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মোট ভারতীয় আমানতের তীব্র বৃদ্ধি ঘটেছে, গত ১৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তাও এর মধ্যে তৃতীয় কোনও দেশের কোনও প্রতিষ্ঠানের নামে সুইজারল্যান্ডের ব্যাঙ্কে রাখা ভারতীয় বা এনআরআইদের অর্থ ধরা হয়নি। অথচ, গত দুই বছর ধরে সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের আমানত কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল।
এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এদিন এই বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ভারত ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে কর বিষয়ক পারস্পরিক প্রশাসনিক সহায়তা বা মিউচুয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসিস্ট্যান্স ইন ট্যাক্স ম্যাটার্স (MAAC) চুক্তি এবং বা বহুপাক্ষিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ চুক্তি বা মাল্টিল্যাটারাল কম্পিটেন্ট অথোরিটি এগ্রিমমেন্ট (MCAA) স্বাক্ষর করেছে। এই দুই চুক্তি অনুসারে, ২০১৮ সাল থেকে প্রতি বছর, বার্ষিক আর্থিক অ্যাকাউন্টের তথ্য ভাগ করে নেওয়ার জন্য স্বয়ংক্রিয় তথ্য আদান-প্রদান বা অটোমেটিক এক্সচেঞ্জ অফ ইনফরমেশন (AEOI) প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ভারত এবং সুইজারল্যান্ড তাদের নাগরিকদের আর্থিক তথ্য আদান-প্রদান করেছে। তাতে করে মনে হয় না, অঘোষিত কোনও আয়ের মাধ্যমে ভারতীয়দের সুইস ব্যাঙ্কে আমানত বৃদ্ধির কোনও উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রক আরও জানিয়েছে, সুইস কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে যে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সেই বিষয়ে প্রাসঙ্গিক তথ্য সরবরাহের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ভারতীয়দের আমানত বৃদ্ধি বা হ্রাস সম্পর্কে তাদের মতামতও চাওয়য়া হয়েছে। শুক্রবারই কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মোদী সরকারের কাছে এই কালো টাকার প্রকৃতি এবং সুইস ব্যাঙ্কে কারা তা জমা দিয়েছেন, সেই ব্যক্তি বা সংস্থাদের নাম সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করার দাবি করা হয়েছিল। গত সাত বছরে ভারত সুইস ব্যাঙ্ক থেকে কী পরিমাণ অর্থ ফিরিয়ে নিয়েছে তার সম্পূর্ণ বিবরণ দিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবিও জানিয়েছে বিরোধীরা।