কয়েক বছর আগেও ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট মহলেও কেউ তাঁকে চিনতেন না। হরিয়ানার কারনালে রাস্তার পাশের ঝুপড়িতেই কার্যত বড় হওয়া যুবকটির বলে ছিল আগুনে গতি। স্থানীয় টুর্নামেন্টে তাই বেশ কদর ছিল তাঁর। ম্যাচ প্রতি পেতেন দুশো টাকা করে। সেখান থেকেই কয়েক বছরের মধ্যে তাঁর আগমণ ঘটল আইপিএল জগতে। তাঁর আগুনে গতির বল হেলমেটে লেগে ছিটকে পড়েছিলেন অসি তারকা শেন ওয়াটসনও। এ হেন নভদীপ সাইনিকে এবার দেখা যাবে ভারতের নীল জার্সিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে একদিন এবং টি টোয়েন্টি ম্যাচে দিল্লির প্রতিশ্রুতিমান পেসারকে সুযোগ দিয়েছেন নির্বাচকরা। তবে ভারতের হয় গত বছরই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
এই স্বপ্নের উত্থানের জন্য অবশ্য নিজের থেকেও বেশি প্রাক্তন ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীরকে কৃতিত্ব দেন নভদীপ সাইনি। তাঁর জীবনে গৌতম গম্ভীরের অবদানের কথা বলতে গেলে এখনও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ছাব্বিশ বছর বয়সি পেসার। সাইনির কথায়, তাঁর মধ্যে যে ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার ক্ষমতা আছে, তা সবার আগে বুঝেছিলেন গম্ভীরই।
আরও পড়ুন- ঘোষণা হল ক্যারিবিয়ান সফরের দল, আশ মিটল না ক্রিকেট মহলের
সাইনির রূপকথার উত্থানের সঙ্গে হয়তো অনেকটা মিল পাওয়া যাবে মহেন্দ্র সিং ধোনির জীবনের। একসময়ে তিনিও রাঁচি এবং খড়্গপুরে জমিয়ে পাড়া টুর্নামেন্টে খেলতেন। ধোনির তবু রেলের একটা চাকরি ছিল, মধ্যবিত্ত পরিবার খেলাধুলোর খরচ সামাল দিতে পারত। সাইনির সেসবেরও বালাই ছিল না। কারনালের রাস্তায় বড় হওয়া সাইনি ক্যাম্বিস বলের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট খেলে বেড়াতেন। কয়েকবছর আগে কারনাল প্রিমিয়ার লিগ নামে এরকমই একটি টুর্নামেন্টে খেলার সময় দিল্লির প্রাক্তন মিডিয়াম পেসার সুমিত নারওয়ালের চোখে পড়ে যান সাইনি। এখান থেকেই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়।
সাইনিকে দিল্লি রঞ্জি দলের নেটে নিয়ে আসেন সুমিত। সেখানে তরুণ ফাস্ট বোলারের আগুনে গতি সামলাতে বেকায়দায় পড়ে যান তৎকালীন দিল্লি অধিনায়ক গৌতম গম্ভীরও। তারপর থেকে নিয়মিত সাইনিকে দিল্লির নেটে এসে বল করতে বলেন গম্ভীর। একজোড়া ক্রিকেট বুটও প্রতিভাবান ফাস্ট বোলারকে উপহার দেন তিনি।
সাইনির মধ্যে যে অনেক দূরে যাওয়ার ক্ষমতা আছে, কয়েকদিনের মধ্যে বুঝেছিলেন গম্ভীর। নির্বাচকদের সঙ্গে একরকম লড়াই করেই সাইনিকে দিল্লি রঞ্জি দলে ঢোকান তিনি। ২০১৩- ১৪ সালে দিল্লির রঞ্জি দলে সুযোগ পান সাইনি। এর পর আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
২০১৭-১৮ মরশুমে সাইনি দুরন্ত বোলিংয়ের সৌজন্যেই রঞ্জি ফাইনালে ওঠে দিল্লি। ৮ ম্যাচে ৩৪ উইকেট নেন তিনি। সেমিফাইনালে তাঁর আগুনে গতির কাছে আত্মসমর্পণ করে ৮৬ রানে অল আউট হয়ে যায় বাংলা। এর পরে আইপিএল নিলামে ৩ কোটি টাকায় সাইনিকে কিনে নেয় বিরাট কোহলির দল আরসিবি। গতবারের আইপিএলে ধারাবাহিক ভাবে ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করে বিশেষজ্ঞদের চমকে দেন এই ডান হাতি পেসার।
আরও পড়ুন- অবসর নেবেন নাকি ক্যারিবিয়ান সফরে যাবেন - এতদিনে স্পষ্ট করলেন ধোনি
সম্প্রতি ভারতীয় এ দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েও বল হাতে সফল হয়েছেন সাইনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ দলের হয়ে সিরিজের দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে ৪৬ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি। তার পরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের দলে সুযোগ দেওয়া হল তাঁকে।
নিজের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে গৌতম গম্ভীরকেই যাবতীয় কৃতিত্ব দেন দিল্লির পেসার। গত বছর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট দলে সুযোগ পেয়ে তিনি বলেছিলেন, 'গৌতম ভাইয়ের সম্পর্কে যখনই আমি কিছু বলতে যাই, ভীষণ আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি। দিল্লির হয়ে প্রথম কয়েকটি ম্যাচে আমার খেলা দেখেই উনি বলেছিলেন, কঠোর পরিশ্রম করলে আমি জাতীয় দলে সুযোগ পাবই। আমার যে সেই ক্ষমতা আছে, আমার আগেও তা বুঝতে পেরেছিলেন গৌতম গম্ভীর। পিছন দিকে ফিরে তাকালে আমি নিজেই হেসে ফেলি।'