টি২০ বিশ্বকাপের (World Cup 2021) ভারতের (India) বিরুদ্ধে পাকিস্তানের (Pakistan) দয় নিয়ে চরম বিতর্কিত মন্তব্য ওয়াকার ইউনিসের (Waqar Younis)। তীব্র ধিক্কার জানালেন হর্ষ ভোগলে (Harsh Bhogle)।
২৪ অক্টোবর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১-এর (T20 World Cup 2021) সবথেকে হাই-ভোল্টেজ ম্যাচ ভারত বনাম পাকিস্তান, (India vs Pakistan) হয়ে গিয়েছে। তারপর দুটি দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু, তাও ম্যাচকে ঘিরে বিতর্ক শেষ হচ্ছে না। ক্রিকেটের উপর হঠাতই পড়তে শুরু করেছে ধর্মান্ধতার কালো ছায়া। ভারতে শুধুমাত্র মুসলিম হওয়ার জন্য যখন মহম্মদ শামিকে পাকিস্তানে যাওয়ার নিদান দিচ্ছেন একাংশের ক্রিকেট ভক্তরা, তখন সীমান্তের পাড় থেকেও সমানে ধর্মের সুড়সুড়ি দেওয়া চলছে। সবথেকে দুর্ভাগ্যজনক হল, সেই তালিকায় জুড়লেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ওয়াকার ইউনিসও (Waqar Younis)। যার জন্য তাঁর কড়া সমালোচনা করলেন হর্ষ ভোগলে (Harsha Bhogle)।
এদিন এক পাকিস্তানি নিউজ চ্যানেলে, প্রথমবার বিশ্বকাপে ভারতকে পাকিস্তানের হারানো নিয়ে আলোচনা করতে বসেছিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটার ওয়াকার ইউনিস এবং শোয়েব আখতার (Shoain Akhtar)। তাঁরা যা করে দেখাতে পারেননি, তাই করে দেখিয়েছেন বাবর আজম-রিজওয়ানরা। কিন্তু, ম্যাচের সেরা মুহূর্ত বাছতে বসে প্রাক্তন ক্রিকেটার ওয়াকারের চোখে কোনও ক্রিকেটিয় মুহূর্ত ধরা পড়েনি। তিনি বলেন, 'হিন্দুদের সামনে' পাকিস্তানি ওপেনার মহম্মদ রিজওয়ানকে (Mohammad Rizwan) 'নামাজ পড়তে' দেখটাই তাঁর কাছে সবথেকে বিশেষ মুহূর্ত ছিল।
স্বাভাবিকভাবেই শুভবুদ্ধি সম্পন্ন ক্রিকেট বিশ্ব প্রাক্তন পাক ক্রিকেটারের এই ধর্মীয় সুড়সুড়ি দেওযা মন্তব্য ভালভাবে নেয়নি। বিশেষ করে ভারতীয় ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার হর্ষ ভোগলে, ওয়াকারের ওই বিবৃতিকে 'বিপজ্জনক' বলে অভিহিত করে কড়া সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন ক্রিকেটবিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত নয়।
আরও পড়ুন - T20 WC 2021 - সানিয়া নয়, এ কার সঙ্গে জলকেলি করছেন পাক ক্রিকেটার শোয়েব মালিক, দেখুন
আরও পড়ুন - T20 World Cup - 'সলমন গার্ল'এর সঙ্গে রাতভর পার্টি গেইলের, বলেছিলেন 'হিউম্যান ডল'
আরও পড়ুন - T20 World Cup 2021 - কলঙ্কিত পাক অধিনায়ক, ১০ বছর ধরে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস, দেখুন
ভোগলে বলেন, ওয়াকার ইউনিসের মাপের একজন ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের মুখ থেকে এই মন্তব্য আসায় তিনি সবথেকে হতাশাজনক। তিনি জানান, তাঁর মতো অনেকে ক্রিকেটকে ধর্ম, জাতি-বর্ণের ভিত্তিতে বিভক্ত হওয়ার থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। তারা সকলে এই ধরনের মন্তব্যকে ভয়ানক বলে মনে করেন। তিনি আরও বলেন, ক্রিকেটাররাই এই খেলাটার দূত, তাই তাদের আরও একটু বেশি দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। ওয়াকারের এই মন্তব্যের জন্য ক্রিকেট বিশ্বের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত বলেও জানিয়েছেন ভোগলে।
প্রখ্যাত ক্রিকেট সাংবাদিক তথা ধারাভাষ্যকার হর্ষ ভোগলে আরও বলেন, পাকিস্তানের প্রকৃত ক্রীড়াপ্রেমীরাও ওয়াকার ইউনিসের এই বিবৃতিটির বিপজ্জনক দিকটি দেখতে পাবেন বলেই তিনি আশা করেন। ওয়াকারের মন্তব্যে তাঁদেরকেও হতাশ করবে। তিনি বলেন, ক্রিকেট শুধুমাত্র একটা খেলা, এখানে ধর্মের প্রবেশ, তাঁর মতো ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য পরিস্থিতি খুবই কঠিন করে তোলে।
রবিবার ম্যাচ চলাকালীনই জল খাওয়ার বিরতিতে পাক ওপেনিং ব্য়াটার তথা উইকেটরক্ষক মহম্মদ রিজওয়ানকে মাঠের মধ্যেই নামাজ পড়তে দেখা গিয়েছিল। ম্যাচে ৫৫ বলে ৭৯ রান করে অপরাজিত থাকেন রিজওয়ান। ৬টি চার এবং ৩টি ছয় মারেন। তবে সেইসব কিছু ছাপিয়ে একাংশের ফ্যানরা তাঁর সেই মাঠে নামাজ পড়ার বিষয়টিকেই বড় করে দেখাতে চাইছে। সেই মুহূর্তের একটি ভিডিও ক্লিপও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
তবে শুধু ওয়াকার ইউনিসই নন, রবিবার, বারতের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে প্রথমবার জয়ী হওয়ার পর, পাকিস্তানি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদও (Shaikh Rashid) ধর্মকে জড়িয়ে একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। তিনি পাকিস্তানের জয়কে মুসলিম বিশ্বের জয় বলে দেখানোর চেষ্টা করেন। কোনও ভিত্তি ছাড়াই, তিনি বলেন, ম্যাচের সময় ভারত-সহ বিশ্বের সমস্ত মুসলমানদের আবেগ-অনুভূতি পাকিস্তান ক্রিকেট দলের পক্ষে ছিল।
শুধু তাই নয়, এমনকী ম্যাচের পর আইসিসির পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেও ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিতে ছাড়েননি পাক ধারাভাষ্যকার। তাতে অংশ নেন অধিনায়ক বাবর আজমও। ম্যাচের পর পাকিস্তানি ধারাভাষ্যকার বাজিদ খানকে (Bazid Khan) বলতে শোনা যায়: 'কাফর তো টুট হি গ্যায়া' (অনেকের অনুবাদে অবিশ্বাসীরা শেষ পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে গিয়েছে)। এর জবাবে বাবর আজম (Babar Azam) বলেন, 'ইয়ে আল্লা কা করম হ্যায়।' (এটা আল্লার কাজ)।