মহম্মদ শামির (Mohammad Shami) পর ধর্ম নিয়ে কুৎসিত আক্রমণের মুখে পাকিস্তানের হাসান আলি (Hasan Ali)। ছাড়া হল না তাঁর ভারতীয় স্ত্রী সামিয়া খানকেও (Samiya Khan)।
বৃহস্পতিবার রাতে, দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে, টি২০ বিশ্বকাপ ২০২১-এর (T20 World Cup 2021) দ্বিতীয় সেমিফাইনালে, অস্ট্রেলিয়ার (Australia) বিরুদ্ধে ৫ উইকোটে পরাজিত হয়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছে পাকিস্তান (Pakistan)। বোলার এবং ফিল্ডার - দুই ভূমিকাতেই বৃহস্পকিবারের ম্যাচটা পাক ক্রিকেটার হাসান আলির (Hasan Ali) জন্য খুবই খারাপ গিয়েছে। বল হাতে রান দেওয়াটা ফ্যানরা ক্ষমা করে দিলেও, ১৯তম ওভারে ম্যাথু ওয়েডের (Mathew Wade) ক্যাচ ফেলাটা তাঁরা ভুলতে পারছেন না। পাকিস্তানের হারের পরই সোশ্য়াল মিডিয়ায় তীব্র ট্রোলিং-এর শিকার হলেন তিনি।
শুরুতে ব্যাট করে ১৭৭ রানের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়ার পর, অজি ইনিংসের শুরু থেকেই চাপ তৈরি করেছিলেন পাক জোরে বোলার শাহীন আফ্রিদি (Shaheen Afridi)। পরে স্পিনার শাদাব খান (Shadab Khan) এসে গুরুত্বপূর্ণ ৪ উইকেট তুলে নেন। পাক বোলারদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত দুর্বলতম হাসান আলির ওভারগুলিই অস্ট্রেলিয় ব্যাটাররা বেছে নিয়েছিলেন রান তোলার জন্য। ৪ ওভারে একটিও উইকেট না নিতে পেরে ৪৪ রান দিয়েছিলেন হাসান।
আরও পড়ুন - ICC World Cup - ফের বিশ্বকাপ আসছে ভারতে, ২০২৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপ হবে আমেরিকায়
তবে সেটা ছিল তাঁর দুঃসময়ের সবে শুরু। ১৯তম ওভারে বাবর আজম বল তুলে দিয়েছিলেন দলের সেরা বোলার, শাহীন আফ্রিদির হাতে। প্রথম দুই বলেই স্টয়নিসের আউট হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। একটুর জন্য বেঁচে যানয। তৃতীয় বলটি মিড-উইকেট এলাকা দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে পাঠাতে চেয়েছিলেন অজি ব্যাটার ম্যাথু ওয়েড। কিন্তু, ঠিক মতো ব্যাটে-বলে না হওয়ায় মিড উইকেট অঞ্চলে ক্যাচ উঠেছিল। হাসান ক্যাচটি ধরার জন্য অনেকটা দৌড়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু বলটি ঠিক কোথায় পড়ছে তা বুঝতে গিয়ে সামান্য ভুল করেন তিনি। ফলে, তাঁর দুই হাতের ফাঁক দিয়ে বল মাঠে পড়ে যায় ।
ওই ক্যাচ মিসই খেলার মোড় ঘোরানো মুহূর্তে পরিণত হয়েছিল। শাহীনের এর পরের তিনটি বলেই ওয়েড, তিনটি ছক্কা মেরে এক ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ শেষ করে দেন। হাসানের ওই ক্যাচ মিসই পাকিস্তানের টি২০ বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন সেমিফাইনালেই শেষ করে দেয়। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনাতে পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজমও (Babar Azam) স্বীকার করে নেন, হাসান ক্যাচটি ধরতে পারলে তারা জিততে পারতেন। বাবর বলেন, 'অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে খেলার শেষ দিকে যদি বাড়তি সুযোগ দিলে, তা ব্যয়বহুল হবেই। ম্য়াচের টার্নিং পয়েন্ট ছিল ক্যাচ ড্রপ করা।'
এরপরই আর অভিজ্ঞ জোরে বোলারকে ছাড়েননি পাক সমর্থকরা। এমনকী, ভারত-পাক ম্যাচে ভারতের হারের পর ভারতীয় জোরে বোলার, মহম্মদ শামিকে (Mohammad Shami) যেমন ধর্ম নিয়ে আক্রমণ করা হয়েছিল, সেই একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এখন যেতে হচ্ছে হাসান আলিকেও। হাসান আলি মুসলিম হলেও তিনি শিয়া-পন্থী (Shia)। সুন্নি (Sunni) অধ্যুষিত পাকিস্তানে যারা অন্যতম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তাছাড়া তিনি বিবাহ করেছেন এক ভারতীয় মহিলা, সামিয়া খান-কে। এই দুই বিষয় তুলে তাঁকে নক্কারজন আক্রমণ করা হয়েছে। তাঁকে 'শোবাজ ম্যান' বলে আখ্যা দিয়ে, পাকিস্তানে ফিরতেই গুলি করার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
তবে কয়েকজন ক্রিকেট সমর্থক, ম্যাচ হারলেই ক্রিকেটারদের নিশানা করার এই প্রবণতার বিরোধিতাও করেছেন। তাঁরা মনে করিয়ে দিয়েছেন ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (Champions Trophy 2017) জেতায় হাসান আলির অবদানের কথা। মনে করিয়ে দিয়েছেন, ফ্যানরা তাঁর উইকেট শিকারের উদযাপনকে কীভাবে নকল করেন, সেই কথা। খারাপ ফর্ম গেলেই তাঁকে খারাপ আক্রমণে কোনঠাসা করে ফেলাটা, একেবারেই ঠিক নয় বলেই জানিয়েছেন তাঁরা।