সাদা রঙের সিংহ, তপ্ত কাঞ্চনবর্ণা প্রতিমা, বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোয় পূজিতা হন দুর্গার দুই সখীও

বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়িতে প্রতীকি হিসেবে নিশুতি রাতে সন্ধিপুজোয় হাড়িকাঠে বলি দেওয়া হয় মাটি-ধান দিয়ে তৈরি নরমুণ্ড। মথুরা, বৃন্দাবন, বারাণসীর মতো পাঁচ তীর্থের জল নিয়ে আসা হয় বোধনের জন্য। 

বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়িতে দেবী দুর্গার পুজা হয় কালিকা পুরাণ মতে। শতাব্দী প্রাচীন হাজারো ঐতিহ্য বহন করে চলছে পাঁচশো বছর অতিক্রান্ত বৈকুন্ঠপুর রাজ এস্টেটের দুর্গাপুজো। লিখছেন সংবাদ প্রতিনিধি অনিরুদ্ধ সরকার। 


মন্দির বেষ্টিত রাজবাড়ি এই বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ি। মূলত বৈকুন্ঠনাথ অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহ পূজিত হয় বলেই এই রাজবাড়ির নাম বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ি। জন্মাষ্টমীর দিন বৈকুণ্ঠনাথের পুজো হয়। বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়িতে প্রতীকি হিসেবে নিশুতি রাতে সন্ধিপুজোয় হাড়িকাঠে বলি দেওয়া হয় মাটি-ধান দিয়ে তৈরি নরমুণ্ড। এখন রাজাও নেই,  রাজসিক ব্যাপার-স্যাপারও নেই ফলে আর সে জৌলুসও নেই। তবে শতাব্দী প্রাচীন কিছু ঐতিহ্য আজও টিকে রয়েছে।

Latest Videos


পুজো শুরু কবে থেকে- 

ভারতে তখন মুঘলদের রাজত্ব চলছে পুরোদমে। সেই সময় জলপাইগুড়ির নাম ছিল বৈকুন্ঠপুর। ষোড়শ শতকে সেই বৈকুন্ঠপুরের রাজা শিষ্য সিংহের হাত ধরেই সূচনা হয় দুর্গাপুজোর।





ইতিহাস-

কোচবিহার রাজপরিবারের সদস্য বিশ্ব সিংহ ও বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির সদস্য শিষ্য সিংহ বৈকুণ্ঠপুর রাজ পরিবারের দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। কথিত আছে, ওই দুই রাজপরিবারের বংশধররা বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গলে মা ভগবতীর মাটির মূর্তি গড়ে দুর্গাপুজো শুরু করেন। 


পুজো পদ্ধতি- 

বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ির চণ্ডীমণ্ডপে দেবীর আগমন হয় পরিবারের রথে চেপে। আর পুজোর জোগাড় শুরু হয় মাস দুয়েক আগে থেকেই। মথুরা, বৃন্দাবন, বারাণসীর মতো পাঁচ তীর্থের জল নিয়ে আসা হয় বোধনের জন্য।

জন্মাষ্টমীর পুজোর পরেই রীতি মেনে আজও এখানে ননী উৎসবে দধিকাদো খেলা হয়। সেদিন থেকে কাদামাটি সংগ্রহ করে এনে দেবীর কাঠামোতে দেওয়া হয়। যে মণ্ডপে পুজো হয় সেখানেই প্রতিমা তৈরির কাজ বছরের পর বছর হয়ে আসছে। এবারও জন্মাষ্টমীতে দধিকাদোর কাদামাটি দিয়েই দেবী দুর্গার প্রতিমা বানানো শুরু হয়। 

তপ্ত কাঞ্চনবর্ণা প্রতিমা এখানে কনকদুর্গা রূপে পূজিত হন। সিংহটি এখানে শ্বেতশুভ্র বর্ণের হয়ে থাকে। সিংহ ছাড়াও দেবীর বাহন হিসাবে বাঘও এখানে দেখা যায়। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, মহামায়ার সঙ্গে দেবীর দুই সখী জয়া ও বিজয়াকেও পুজা করা হয়। রাজবাড়ির দুর্গাকে কখনও পরানো হয় বেনারসি, কখনও আবার অসম সিল্ক। বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়িতে দেবী দুর্গার পুজা হয় কালিকা পুরাণ মতে। মহালয়ার দিন রাজপরিবারের সদস্যরা উপস্থিত হয়ে তর্পণ ও চক্ষুদান করেন। ওই দিন কালীপুজাও করা হয়। এবারও সবটাই হয়েছে। নির্দিষ্ট দিনে দেবীর চক্ষুদান করা হয়। নবমীতে সকলের মঙ্গল কামনায় যজ্ঞ ও পাঁঠাবলি হয়। এই পুজোর আরও বিশেষত্ব হল আমিষ ভোগ। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত দেবীর ভোগে থাকবে কাতলা, ইলিশ, চিতল ও পাবদা মাছ। থাকবে পাঁঠার মাংসও। 


আরও পড়ুন-
মহানন্দার জলে তলিয়ে যায় ইটাহারের জমিদারবাড়ি, তারপর ভূপালপুরের রাজপ্রাসাদে শুরু হল দুর্গাপুজো
মুসলমান সম্প্রদায়ের দেখানো আলোতেই পথের দিশা পান মা দুর্গা, মালদহের চাঁচল রাজবাড়ির পুজোয় অদ্ভুত স্বপ্নাদেশ
অ্যান্টনি ফিরিঙ্গী, মহাত্মা গান্ধী, সুভাষচন্দ্র বসু, শ্রীরামপুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো ছিল নক্ষত্রের সমাহার

Read more Articles on
Share this article
click me!

Latest Videos

Narendra Modi : কুয়েতের সঙ্গে সম্পর্কে জোর ভারতের, দেখুন কী বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
'উল্টো ঝুলিয়ে সোজা করব', এগরার জনসভায় এসে কাকে বললেন Suvendu Adhikari ?
অনলাইনে পুজোর দেওয়ার নামে প্রতারণা! ঘাড় ধরে নিয়ে গেল পুলিশ | Hooghly News Today
'একটা আস্ত অশিক্ষিত...গোটা রাজ্যটাই জঙ্গিদের হাতে' কড়া বার্তা শুভেন্দুর | Suvendu Adhikari
লজ্জা মমতার! জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য এই বাংলা!| Suvendu Adhikari #shorts #shortsvideo #suvenduadhikari