মুসলমান সম্প্রদায়ের দেখানো আলোতেই পথের দিশা পান মা দুর্গা, মালদহের চাঁচল রাজবাড়ির পুজোয় অদ্ভুত স্বপ্নাদেশ

Published : Oct 02, 2022, 10:26 AM IST
মুসলমান সম্প্রদায়ের দেখানো আলোতেই পথের দিশা পান মা দুর্গা, মালদহের চাঁচল রাজবাড়ির পুজোয় অদ্ভুত স্বপ্নাদেশ

সংক্ষিপ্ত

অতীতে হাতিতে চড়ে মা দুর্গা দুর্গাদালানে আসতেন সপ্তমীর দিন।এখন সেই রাজপাটও নেই আর সে রেওয়াজও নেই। 

মা চণ্ডীর স্বপ্নাদেশে মহারাজ রামচন্দ্র রায়চৌধুরি মহানন্দা নদী থেকে অষ্টধাতুর একটি চণ্ডীমূর্তি পান । তখন থেকেই পাহাড়পুরে দুর্গাপুজো শুরু হয়। সেই বিগ্রহ রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় ঠাকুরবাড়িতে সিংহবাহিনীর পুজো হয়। শারদোৎসব এখানে তাই নিত্যদিনের। সাড়ে তিনশো বছরের বেশি প্রাচীন  চাঁচল রাজবাড়ির পুজোর খোঁজ নিলেন অনিরুদ্ধ সরকার।


ইতিহাস- 

সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগ । সেই সময় উত্তর মালদার বিস্তীর্ণ এলাকার রাজা ছিলেন রামচন্দ্র রায়চৌধুরি। হাতির পিঠে চেপে তিনি নিয়মিত বেরিয়ে পড়তেন রাজত্ব দেখাশোনা করতে । কথিত আছে, একবার তিনি যখন এভাবেই রাজত্ব দেখতে বেরিয়ে বাইরে রাত কাটাচ্ছিলেন, তখন তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন দেবী চণ্ডী। রাজাকে তিনি আদেশ দিয়েছিলেন, মহানন্দার সতীঘাটায় তাঁর চতুর্ভূজা অষ্টধাতু নির্মিত মূর্তি রয়েছে। রাজমাতাকে দিয়ে সেই মূর্তি নদী থেকে তুলে রাজাকে তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে ।


দেবী চণ্ডীর অষ্টধাতুর মূর্তি সতীঘাটা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে রাজবাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন রাজা রামচন্দ্র। তখন থেকে রাজবাড়িতে শুরু হয় দেবীর নিত্যপুজো । পরে ফের দেবীর স্বপ্নাদেশ পান রাজা । সেই আদেশ অনুযায়ী সতীঘাটায় দেবীর আর একটি মন্দির নির্মাণ করেন তিনি । প্রথমে মাটির ঘর ও খড়ের ছাউনি দিয়ে মন্দির তৈরি করা হয় । পরে এই রাজবংশের রাজা শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরির নির্দেশে তৎকালীন ম্যানেজার সতীরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে একটি পাকা দুর্গাদালান নির্মিত হয় । ততদিনে জায়গাটির নাম পরিবর্তিত হয়ে পাহাড়পুর হয়েছে ।


পুজো পদ্ধতি- 

কৃষ্ণা নবমী তিথিতে দুর্গাদালানে কল্পারম্ভ হয় । সপ্তমীর দিন মিছিল সহকারে মা চণ্ডী ঠাকুরবাড়ি থেকে দুর্গাদালানে পুজো নিতে যান । অষ্টমীতে কুমারী পুজো প্রথম থেকেই হয়ে আসছে । দশমীর পুজো শেষে পাহাড়পুর থেকে পুনরায়  ঠাকুরবাড়ি ফিরে যান সিংহবাহিনী। 


মুসলমানদের লণ্ঠন দেখানো রেওয়াজ- 

কথিত আছে, একসময় সতীঘাটায়, মহানন্দার পশ্চিম পাড়ে মহামারী দেখা দিয়েছিল । তখন দেবী সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন, গোধূলিলগ্নে বিসর্জনের সময় তাঁরা যেন মাকে আলো হাতে পথ দেখায় । তখন থেকেই প্রতিবছর বিসর্জনের সময় সেখানকার মুসলমানরা হাতে লণ্ঠন নিয়ে দেবীকে আলো দেখান। 

আরও পড়ুন-
অ্যান্টনি ফিরিঙ্গী, মহাত্মা গান্ধী, সুভাষচন্দ্র বসু, শ্রীরামপুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো ছিল নক্ষত্রের সমাহার
বেনারসি শাড়ি আর সোনার গয়নায় সেজে ওঠে চট্টোপাধ্যায় বাড়ির মেয়ে দুর্গা, দশমীতে বিসর্জনের আগে দিয়ে যায় কনকাঞ্জলি
মুসলমান জেলের বাড়ির মাটির নিচে পাল রাজাদের আমলের কষ্টিপাথরের দুর্গামূর্তি, হালদার বাড়ির পুজোর সেই অমলিন ইতিহাস

PREV
Read more Articles on
click me!

Recommended Stories

Durga Puja 2025: সঙ্ঘাতির 'দ্বৈত দুর্গা' থিমে বাংলার দুর্গা এবং শেরাওয়ালি মাতা, বিষয়টা ঠিক কী?
Durga Puja 2025: দুর্গাপুজোয় চাঙ্গা রাজ্যের অর্থনীতি? ১০-১৫% বৃদ্ধির সম্ভাবনা, আনুমানিক ৪৬,০০০-৫০,০০০ কোটি টাকা