‘বর্গী এল দেশে’, আর সেই বর্গীদের রুখে দিলেন রানি জানকী, তিনিই শুরু করলেন মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো

বর্গী আক্রমণ ঠেকাতে রানি জানকী তৈরি করেন নারী বাহিনী। রুখে দেন বর্গীদের। ১৭৭৮ সালে রানির হাতেই দুর্গাপুজো পুজো শুরু মহিষাদল রাজবাড়িতে। 

Web Desk - ANB | / Updated: Oct 02 2022, 03:01 PM IST

প্রতিমা বিসর্জনের আগে দেবীকে একসময় দেওয়া হত 'গার্ড অফ অনার' । আড়াইশো বছরে পা দিতে চলেছে এই পুজো। রানি জানকীর হাতেই দুর্গাপুজো শুরু মহিষাদল রাজবাড়িতে। লিখেছেন সংবাদ প্রতিনিধি অনিরুদ্ধ সরকার। 

কবে থেকে শুরু- 
১৭৭৮ সালে রানি জানকীর হাতধরেই দুর্গাপুজো শুরু হয় মহিষাদল রাজবাড়িতে।

ইতিহাস- 
মোঘল আমলে আকবরের সেনাবাহিনীর উচ্চপদে থাকা উত্তরপ্রদেশের ব্রাহ্মণ ব্যবসায়ী জনার্দন উপাধ্যায়ের হাত ধরেই মহিষাদল রাজবাড়ির পত্তন হয়। তিনি মহিষাদলে তিনটি প্রাসাদ তৈরি করেন। রঙ্গীবসনা, লালকুঠি ও ফুলবাগ প্যালেস। পরবর্তী কালে রাজা আনন্দলাল উপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর রানি জানকী দেবী মহিষাদল পরগনার হাল ধরেন। বর্গী আক্রমণ ঠেকাতে রানি তৈরি করেন নারী বাহিনী। রুখে দেন বর্গীদের। ১৭৭৮ সালে রানির হাতেই দুর্গাপুজো পুজো শুরু মহিষাদল রাজবাড়িতে।




পুজো পদ্ধতি- 
বৈষ্ণব মতে হয় পুজো। রাজবাড়ির আটচালার সামনে দুর্গামণ্ডপে পুজোর আয়োজন হয়। পারিবারিক রীতি অনুযায়ী দেবীর গায়ের রং হলুদ ৷ দেবীর চোখ পটল চেরা৷ বৈষ্ণব মতে মহালয়ার পরদিন থেকে দেবী দুর্গার পুজো শুরু হয় । মায়ের পুজো শুরু হওয়ার আগে পূজিত হন কুলদেবতা গোপালের । রাজবাড়ির রীতি অনুযায়ী সপ্তমী, অষ্টমী , নবমীতে বসে গানের আসর । যা দেখতে ভিড় জমান আশপাশের আট-দশটি গ্রামের বাসিন্দারা । অতীতে অষ্টমীর সন্ধিপুজোর সূচনা হত কামান দেগে এবং শেষ হত তোপধ্বনিতে। এখন, বাজি ফাটিয়ে শুরু হয় সন্ধিপুজো । কামানটি আজও জানান দেয় সেসময়ের ইতিহাসকে। একটা সময় অষ্টমী পুজোর জন্য কেদারনাথ মন্দির থেকে নাকি আসত ১০৮ টি নীল পদ্ম ।নবমী পুজোর দিন মূল মণ্ডপের বাইরে একটি ছোট মন্দিরে মা দুর্গাকে মা ভবানীরূপে কুমারী পুজোর রীতি রয়েছে।গেঁওখালির কাছে রূপনারায়ণে দুই নৌকায় বিসর্জন দেওয়া হত। যা আজ অতীত। বিসর্জনের পথে শোভাযাত্রায় যেত বন্দুক হাতে পেয়াদারা। সে রেওয়াজও আজ আর নেই। রাজবাড়ির নিজস্ব দিঘিতেই এখন হয় বিসর্জন। আজও রাজবাড়ির ঠাকুর দালানে পুজোর কয়েকদিন শাঁখ বাজে, দেবীর পুজো হয় সাড়ম্বরে ৷ ষষ্ঠীতে মায়ের বোধন থেকে শুরু করে দশমীর বরণ সবই করেন রাজবাড়ির মহিলারা কিন্তু তাঁরা থাকেন পরদার আড়ালে।

ভোগবৃত্তান্ত- 
আগে অষ্টমীতে আট মণ চালের ভোগ হত। এখন তা কমে এসেছে আট কেজিতে।

সাংস্কৃতিক পরিবেশ-
একটা সময় যাত্রার আসর বসত এই নাটমন্দিরে। চিকের আড়াল থেকে দেখতেন মহিলারা। সে রেওয়াজ অবশ্য চলে আসছে। যাত্রা এখনও হয়। বসে পালা কীর্তনের আসর।

আরও পড়ুন-
ইতালিয়ান ধাঁচের নিমতিতা রাজবাড়িতে রয়েছে দেড়শোটা ঘর, তবে দুর্গাপুজোর পরম্পরায় প্রতিমা আজও একচালার 
সাদা রঙের সিংহ, তপ্ত কাঞ্চনবর্ণা প্রতিমা, বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোয় পূজিতা হন দুর্গার দুই সখীও
মহানন্দার জলে তলিয়ে যায় ইটাহারের জমিদারবাড়ি, তারপর ভূপালপুরের রাজপ্রাসাদে শুরু হল দুর্গাপুজো

Read more Articles on
Share this article
click me!