এ যেন সিনেমার চিত্রনাট্য, ক্যান্সার জয়ী 'ফাইটার'ঐন্দ্রিলার জীবনযুদ্ধকে ফিরে দেখা
ফাইট ঐন্দ্রিলা ফাইট-সকলের মুখেই এতদিন একটাই প্রার্থনা ছিল। এই ডাকে আর সাড়া দিলেন না ঐন্দ্রিলা শর্মা। হাজারো কষ্ট সহ্য করে নীরবে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। এ যেন সিনেমার চিত্রনাট্য। তবে সিনেমাতে মিরাকেল হলেও বাস্তবে কোনও মিরাকেল হল না।
দীর্ঘ ১৯ দিন ধরে লড়াই চালিয়েও আর শেষরক্ষা হল না। প্রয়াত হলেন টলি অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। অভিনেত্রীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া টলিউডে। দীর্ঘদিন ধরে হাওড়ার হাসপাতালে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। মৃত্যুর সঙ্গে অদম্য লড়াই শেষ হয়ে গেল রবিবার।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০ নভেম্বর দুপুর ১২ টা ৫৯ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। বয়স কম বলেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন চিকিৎসকেরা। তবে সেই আশা পূরণ হল না চিকিৎসকদের। সকলকে কাঁদিয়ে চিরদিনের মতো চলে গেলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা।
গত ১৪ নভেম্বর থেকেই ঐন্দ্রিলার পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। বারেবারেই স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল হৃদযন্ত্র। তবে গতকাল রাতের বেলার ধাক্কা আর সামলাতে পারলেন না ঐন্দ্রিলা। অভিনেত্রীর মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছেন তার সমস্ত ভক্তরা।
হাসপাতালের সূত্রে জানা গিয়েছিল গত কয়েকদিন ধরেই ঐন্দ্রিলার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছিল। আর ফিরল না জ্ঞান। হাওড়ার হাসপাতালেই প্রয়াত হলেন টলি অভিনেত্রী। ঐন্দ্রিলার মৃত্যু কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না প্রিয়জন তথা ভক্তরা।
ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে সকলেই যখন উদ্বিগ্ন ঠিক তখনই গতকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় সমস্ত পোস্ট ডিলিট করে দেন অভিনেত্রীর প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরী। আর তখন থেকে সকলের মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে। অবশেষে এল দুঃসংবাদ। গোটা টলিপাড়া শোকস্তব্ধ অভিনেত্রীর মৃত্যুতে।
১৯৯৮ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে জন্ম হয় ঐন্দ্রিলা শর্মার। উচ্চবিত্ত পরিবারেই বড় হয়ে ওঠা ঐন্দ্রিলার। একাদশ শ্রেণীতে প্রথম ক্যান্সার ধরা পড়ে। সেইসময় থেকেই জীবনযুদ্ধ শুরু। ২০১৮ সালে দিদি নম্বর ওয়ান-এর মঞ্চে ক্যান্সার মুক্ত হওয়ার ঘটনা সকলের সামনে তুলে ধরেছিলেন।
২০১৫ সালে ১৬ টি কেমোথেরাপি এবং ৩৩ টি রেডিয়েশেনের পর ক্যান্সার মুক্ত হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। অদম্য জেদ এবং বাঁচার প্রবল ইচ্ছা নিয়ে ফের মারণ রোগকে হারিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর ঐন্দ্রিলা। লড়াকু ঐন্দ্রিলার জীবনযুদ্ধ হার মানাবে রূপোলি পর্দাকে।
যারা লড়াই করার ইচ্ছাটাই হারিয়ে ফেলেছিলেন তারাও যেন তাকে দেখে লড়াই করার শক্তি ফিরে পেয়েছেন টলি নায়িকাকে দেখে। টলি অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা যেন প্রতিদিনই নতুন করে কোনও পাঠ শিখিয়েছে। কতটা মনের জোর থাকলে এমনটা হয় তা শিখিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। তবে এবার আর কোনও মিরাকল হল না।
ছোটবেলা থেকেই অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। বাবা ও দিদি দুজনেই পেশায় চিকিৎসক। তার পরিবার চেয়েছিল ঐন্দ্রিলাও চিকিৎসা পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকুন। কিন্তু তিনি কখনওই চাননি চিকিৎসক হতে। বরাবরই অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন ছিল ঐন্দ্রিলার চোখে। ঐন্দ্রিলা জানিয়েছিলেন, তার নিজের জীবনের কোনও সিদ্ধান্তেও পরিবারও কখনও বাধা দেয়নি। বরং খেলাধূলা,শরীরচর্চা, নাচ, গান এই সবনিয়েই বেশ দিব্যি চলছিল। তবে আচমকাই পেটে বড় একটা টিউমার ধরা পড়ে। সেখান থেকে শুরু হয় জীবনযুদ্ধ।
একের পর এক ঝড় যেন বয়ে চলেছে টলি অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার উপর দিয়ে। দীর্ঘ পাঁচ বছর আগে ক্যান্সারের সঙ্গে দেড় বছরের লড়াই করে ২০১৫ সালে মারণ রোগকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন টলি অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। ফের পাঁচ বছরের মাথায় মারণ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন 'জিয়ন কাঠি' খ্যাত অভিনেত্রী। যুদ্ধ যেন অবিরাম চলেছে অভিনেত্রীর সঙ্গে। তবে এবার আর যুদ্ধ জয় করা ফেরা হল না ঐন্দ্রিলার, এবার আর ঘরে ফেরা হল না ঐন্দ্রিলার।