তিরিশ তারিখ রাত্রেও স্ত্রী কে ফোনে জানান যে তাঁর হাতে ও কাঁধে ব্যাথা হচ্ছে। আর পরের দিন রাতের মধ্যেই সব শেষ।
কলকাতায় নজরুল মঞ্চে শো করতে এসে জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী কেকে-র আকস্মিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা দেশ। জানা যায়, অনুষ্ঠান চলাকালীনই অসুস্থ বোধ করছিলেন শিল্পী। হোটেলে ফেরার পর রুমে ঢুকে সোফায় বসতে গিয়ে পড়ে যান তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন ঘনিষ্ঠরা। কিন্তু বৃথা চেষ্টা, বাঁচানো যায়নি তাঁকে। লালবাজার সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ তারিখ থেকেই হাত ও কাঁধে ব্যাথা করছিল তাঁর। সেকথা তিনি আগেই নাকি তাঁর স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন ।
কেকের মৃত্যুর পর অনুষ্ঠান উদ্যোক্তা দের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, কি করে আড়াই হাজার দর্শক আসনের জায়গায় সাত হাজার দর্শক ঢুকে পড়ল হলের মধ্যে, তাছাড়া হলের এসি ও ঠিক মতন কাজ করছিল না, বার বার হলের দরজা বন্ধ ও খোলা হচ্ছিল, লোক ঢুকছিল ও বেরোচ্ছিল। কিন্তু সত্যি কি শুধু গরমের লাগার কারনেই অসুস্থ বোধ করছিলেন কেকে? নাকি সত্যি ভিতরে ভিতরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি আগে থেকেই?
ঘটনার পর থেকেই কেকে এর ভক্ত দের মনের মধ্যে ঘুর পাক খাচ্ছে একটি প্রশ্ন যে ঠিক কি এমন হয়েছিল তাঁদের প্রিয় গায়কের যার জেরে এভাবে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন তিনি? বুধবার ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে কেকে-র মৃত্যুর প্রাথমিক কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে 'মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন' অর্থাৎ চলতি ভাষায় যাকে আমরা 'হার্ট অ্যাটাক' বলি। অর্থাৎ হৃৎপিণ্ডের পাম্পিং ফেল হওয়া ফলস্বরূপ হৃৎস্পন্দন থেমে যাওয়া।। অর্থাৎ কেকে-র মৃত্যুর পিছনে কোনও 'অন্য' কারণ নেই বলেই উল্লেখ প্রাথমিক রিপোর্টে। তবে গায়ক কেকে-র মৃত্যু ঘটনা কে 'অস্বাভাবিক মৃত্যু' হিসেবে মামলা রুজু করেছে নিউমার্কেট থানা তদন্ত শুরু করে এবং এসএসকেএম হাসপাতালে কেকে-র মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়।
আরও পড়ুন- কেকের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে তদন্তের দাবি জানালেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ
কলকাতায় নজরুল মঞ্চে মঙ্গলবার শো চলাকালীনই অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন কেকে। দরদর করে ঘামছিলেন তিনি। বার বার মুখ, কপাল, মাথা মুছে নিচ্ছিলেন তোয়ালে দিয়ে। টেবিলে রাখা বোতল থেকে বার বার জল খাচ্ছিলেন । যা দেখেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শো-এর মাঝপথেই শরীরে অস্বস্তি হতে শুরু করে তাঁর। কিন্তু হাজার কষ্ট সোয়েও 'কমিটমেন্ট' বজায় রেখে শো শেষ করেন তিনি। পুলিস সূত্রে খবর, তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন কেকে দীর্ঘ দিন ধরে গ্যাসের সমস্যায় ভুগছিলেন। প্রায়ই গ্যাসের ওষুধ খেতেন। ৩০ তারিখ কলকাতায় বসে স্ত্রীর সঙ্গে লাস্ট ফোনে কথা হয়েছিল তাঁর। তাঁকে বলেছিলেন, "আমার কাঁধে এবং হাতে ব্যথা করছে।" কিন্তু শরীরে কষ্ট সহ্য করেও নিজের শেষ দম অবধি তাঁর অনুরাগী দের গান শুনিয়ে চিরবিদায় নিলেন তিনি।