
পাক সফরে গিয়ে চরম অপমানের সামনে পড়েছিলেন সুনীল গাভাস্কর (Sunil Gavaskar)। প্রখ্যাত পাক গায়িকা নূরজাহান (Noor Jehan) তাঁকে না চেনার ভান করেছিলেন। আর সেদিন বিশ্বক্রিকেটের লিটল মাস্টার সেই অপমানের জবাব দিতে পেরেছিলেন কারণ, ভারতে ছিলেন লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar) নামে এক গায়িকা। কী ঘটেছিল? কোকিলকন্ঠীকে হারানোর শোকের মধ্য়েই আসুন জেনে নেওয়া যাক -
দল নিয়ে পাকিস্তানে গাভাস্কার
ঘটনাটি ১৯৮২ সালের। সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় ক্রিকেট দল, পাকিস্তানে একটি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে গিয়েছিল। সন্ধ্যায় লাহোরে (Lahore) সেই উপলক্ষ্যে একটি বিরাট পার্টি দেওয়া হয়েছিল। সুনীল গাভাস্কার-সহ ভারতীয় দলের সব ক্রিকেটাররা সেই পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন। পাকিস্তান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সব বড় নামেরা সেই পার্টিতে এসেছিলেন। ভারতীয় দলের ম্যানেজার ছিলেন বরোদার মহারাজা ফতেহসিং রাও গায়কোয়াড (Baroda Maharaja Fatehsinh Rao Gaikwad)। তিনি ক্রিকেটারদের সঙ্গে পাক সেলেবদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন।
শুধু ইমরান এবং জাহির আব্বাসকে চিনি
হঠাৎই ওই হাই প্রোফাইল পার্টিতে প্রবেশ করছিলেন এক মহিলা, যাতে সেই পার্টির রঙ ঔজ্জ্বল্য মুহূর্তে অনেক গুণে বেড়ে গিয়েছিল। তাঁর শারীরিক ভাষা এবং ভাবভঙ্গি দেখেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সেই মহিলা আর কেউ নন, কিংবদন্তী পাক গায়িকা নূরজাহান। ফতেহসিং রাও গায়কোয়াড তাঁর সঙ্গেও দলের ক্রিকেটারদের পরিচয় করিয়ে দেন। প্রথমেই ছিলেন গাভাস্কার। তাঁকে দেখিয়ে ফতেহসিং সেই মহিলাকে বলেছিলেন, 'ইনি ভারতের অধিনায়ক এবং জনপ্রিয় ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার।' সুনীল গাভাস্কারও তাঁকে নমস্কার করেন। কিন্তু, সেই মহিলা গাভাস্কারের পরিচয় পেয়ে বলেছিলেন, 'না...আমরা শুধু ইমরান (Imran Khan) এবং জাহির আব্বাসকে (Zahir Abbas) চিনি।'
গাভাস্কারের জবাব লতা মঙ্গেশকর
এবার ছিল সেই মহিলার সঙ্গে গাভাস্কারের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পালা। ফতেহসিংহ রাও গায়কোয়াড সুনীল গাভাস্কারকে বলেন, 'ইনি হলেন মল্লিকা-এ-তরান্নুম, নূরজাহান। আপনি নিশ্চয়ই ওঁকে চিনতে পেরেছেন।' এবার ছিল জনপ্রিয় পাক গায়িকা নূরজাহানকে গাভাস্কারের জবাব দেওয়ার পালা। তৎক্ষণাৎ নূরজাহানকে উদ্দেশ্য করে গাভাস্কর বলেছিলেন, 'না তো। আমরা শুধু লতা মঙ্গেশকরকে চিনি।'
লতার চোখে জল
ঘটনাটি এর বেশ কয়েক বছর পরে, মুম্বইয়ে লতা মঙ্গেশকরের এক সংবর্ধনা সভায় জানিয়েছিলেন গাভাস্কর। তখন চিনি খেলা ছেড়ে দিয়েছেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং লতা। গাভাস্করের ওই কাহিনী শুনে আবেগে চোখে জল এসে গিয়েছিল লতা মঙ্গেশকরের। শাড়ির আঁচল দিয়ে তাঁকে চোখের জল মুছতে দেখা গিয়েছিল।
লতার আদর্শ নূরজাহান
শুধু পাকিস্তান নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ারই ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী গায়িকা ছিলেন নুর জাহান। তাঁকে বলা হত মল্লিকা-এ-তরান্নুম, অর্থাৎ সুরের রানী। মজার বিষয় হল, তাঁকেই নিজের আদর্শ বলে মানতেন লতা মঙ্গেশকর। অল্প বয়সে মুর জাহানের মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। একসময় ব্রিটিশ শাসিত ভারতেই ছিলেন তিনি। দেশভাগের পর পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন। ১৯৪৪ সালে, বদি মা ফিল্মের সেটে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল লতার, তাঁর সামনে গানও গেয়েছিলেন কোকিলকন্ঠী। তখনও তিনি ছিলেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে একেবারেই নবাগতা।
দুই দেশের দুই মেলোডি কুইন
লতা নিজেই জানিয়েছিলেন, মাস্টার বিনায়ক তাঁদের দুজনের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনিই নূরজাহানের সামনে তাঁকে একটি গান গাইতে বলেছিলেন। প্রথমে জয়জয়ন্তী রাগ গেয়ে শুনিয়েছিলেন, তারপর ওয়াপস ফিল্মের গান 'জীবন হ্যায় বেকার বিনা তুমারে'। লতার গান শুনে নূর জাহান বলেছিলেন, তাঁর গানের গলা খুব ভাল। তিনি লতাকে বেশি বেশি করে অনুশীলন করতে বলেছিলেন, আর তাঁর ভবিষ্যদ্বাণি ছিল, লতা মঙ্গেশকর একদিন 'খুব ভাল গায়িকা' হবেন। বলাই বাহুল্য লতা শুধু খুব ভাল গায়িকা নন, পাক মেলোডি কুইনের ভারতীয় জবাব হয়ে উঠেছিলেন।