সদ্য স্পোর্টিং লিসবন থেকে তিনি তখন যোগ দিয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। ৪ দিন আগে খেলে ফেলেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে প্রথম ম্যাচ। তাও রোনাল্ডোর ঘনিষ্ঠমহলে খোঁজ নিলেই জানা যায় ২০০৩ সালের ২০ শে আগস্ট দেশের হয়ে প্রথমবার মাঠে নামাটিকে নিজের কেরিয়ারের সেরা মুহুর্তগুলির মধ্যে বেশ ওপরের দিকে রাখেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। কাজাখাস্তানের বিরুদ্ধে একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচে প্রথমবার নিজের দেশের হয়ে মাঠে নামেন ১৮ বছর বয়সী ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। দেশের হয়ে প্রথম ম্যাচে ১৬ নম্বর জার্সি পড়ে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। গোল না পেলেও সেই ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন তিনিই। আজ ১৭ বছর পর তিনি দেশের হয়ে খেলে ফেলেছেন মোট ১৬৪ টি ম্যাচ।
আরও পড়ুনঃধোনিকে দুপাতার আবেগ ভরা চিঠি মোদীর, সমস্ত কাজ ফেলে কি উত্তর দিলেন এমএসডি
রোনাল্ডো দেশের হয়ে খেলার আগে পর্তুগালের হয়ে খেলে ফেলেছেন অনেক তারকাই। নিজেদের ইতিহাসে তবু কোনওদিনও কোনও ট্রফি জিততে পারেনি পর্তুগাল। ২০০৬ সালে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হারের পর খেলা ছাড়লেন লুইস ফিগো। এর আগে ইউসেবিও-র মতো তারকাও ব্যর্থ হয়েছেন পর্তুগালকে ট্রফি দিতে। গোটা দেশের স্বপ্ন কাঁধে নিয়ে দেশের অধিনায়কত্ব কাঁধে এবং ফিগোর ছেড়ে যাওয়া ৭ নম্বর জার্সি গায়ে যাত্রা শুরু করলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। একের পর এক প্রতিযোগিতা আসে। ভাঙচোরা দল নিয়ে ব্যর্থতার ইতিহাস লিখতে থাকে পর্তুগাল। রোনাল্ডোর ওপর নেমে আসতে থাকে অভিযোগ, ক্লাবের হয়ে ভালো খেললেও দেশের হয়ে ব্যর্থ তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয় তার ওপর। তা সে যতই তিনি পর্তুগালকে হ্যাটট্রিক করে ওয়ার্ল্ড কাপের যোগ্যতা অর্জন করতে সাহায্য করুন কিংবা ইউরোতে ভাঙাচোরা দল নিয়ে নেদারল্যান্ডস, চেক রিপাবলিকের মতো দলের বিরুদ্ধে নিজের দলকে একার হাতে জয় এনে দেন।
আরও পড়ুনঃমরুদেশে পারি দেওয়ার আগে আবেগঘন ভিডিও বার্তা কেকেআরের, সকলকে পাশে থাকার আর্জি ডিকের
ছবিটা বদলালো ২০১৬ সালের ইউরোতে। রোনাল্ডোর নেতৃত্বে এবং হাঙ্গেরি ও ওয়েলসের বিরুদ্ধে তার অসাধারণ পারফরম্যান্সে দৌলতে ফাইনালে পৌঁছয় পর্তুগাল। ফাইনালে তিনি চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হলেও গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে তার লড়াইকে ব্যর্থ হতে দেন না পেপে, নানী, কোয়ারেশমা, এডের, রুই প্যাট্রিসিও-রা। নিজেদের দেশের ফুটবল ইতিহাসে প্রথম কোনও ট্রফি জেতে পর্তুগাল। তিন বছর পর ২০১৯ সালে রোনাল্ডোর অধিনায়কত্বে নেশনস লিগ ঘরে তোলে পর্তুগাল। দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় ট্রফি। সেমিফাইনালে সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করে দলকে ফাইনালে উঠতে সাহায্য করেন রোনাল্ডো।
আন্তর্জাতিক গোলের দিক দিয়েও নিজেকে অন্য উচ্চতায় তুলে নিয়ে এসেছেন রোনাল্ডো। ২০১৮ বিশ্বকাপেই ফেরেঞ্চ পুসকাস-কে টপকে ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক গোলদাতা হয়ে যায় তিনি। এই মুহুর্তে রোনাল্ডোর আন্তর্জাতিক গোল সংখ্যা ৯৯। আর একটি গোল করলেই ছুঁয়ে ফেলবেন দেশের হয়ে ১০০ টি গোল করার বিরল কৃতিত্ব। এছাড়া সর্বকালের সেরা আন্তর্জাতিক গোলদাতা হওয়ার জন্য তাকে টপকাতে হবে ইরানের আল আদেই-কে। তার আন্তর্জাতিক গোলসংখ্যা ১০৯। অর্থাৎ আর ১১ টি গোল করলেই রোনাল্ডো ভেঙে দেবেন আল আদেই-এর রেকর্ড। সেই দিনের অপেক্ষায় এখন থেকেই উদগ্রীব রোনাল্ডো ভক্তরা।