
সালটা ২০০২। ভারত বনাম ইংল্যান্ডের ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনাল। ৩২৫ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ভারতীয় দল ১৫০ রানের আগেই ৫ উইকেট হারিয়ে প্রবল চাপে। সেখান থেকে অসাধ্য সাধন করে তৎকালীন একদিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে ইতিহাস তৈরি করেছিল টিম ইন্ডিয়া। ম্য়াচ জয়ের পর অধিনায়র সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের । লর্ডসের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে টি শার্ট খুলে ঘোরানোর দৃশ্য আজও অমলিন সকলের মনে। ঐতিহ্যশালী লর্ডসের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সেদিন ব্রিটিশ ওদ্ধত্যকে দাদাগিরি দেখিয়েছিল বেহালাল বাঁ-হাতি। ঘটনার দুই দশক পর অনেকটা সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ক্রিকেটের বদলে মাঠটা ফুটবলের। মহিলাদের ইউরো কাপ ফাইনালে গোল করে দলে চ্যাম্পিয়ন করার আবেগ সামলাতে না পেরে মাঠ জুড়ে টি শার্ট খুলে ঘুরলেন ব্রিটিশ মহিলা ফুটবলার ক্লোয়ি কেলি । ক্রিকেটে লর্ডস ঐতিহ্যের মতই ফুটবলে ইংল্যান্ডের ওয়েম্বলির মর্যাদা আলাদা। সেই মাঠের ৮০ হাজার দর্শক দেখল 'দিদিগিরি'।
ফুটবল মাঠে ইংল্যান্ডের সাফল্য বলতে সেই ১৯৬৬ সালে ববি মুর, ববি চার্লটনদের হাত ধরে বিশ্বকাপ জয়। তারপর থেকে আর তেমন সাফল্য নেই। মাঝে একাধিক প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠলেও ট্রফি আসেনি। গত ইউরোর ফাইনালে উঠেও ইতালির বিরুদ্ধে হারতে হয় হ্যারি কেনদের। ৫৬ বছর পর সেই খরা কাটল ইংল্যান্ড মহিলা ফুটবল দলের হাত ধরে। মহিলা ইউরো কাপের ফাইনালে চিরপ্রতীদ্বন্দ্বী জার্মানির মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ডে। ম্য়াচের ৬২ মিনিটে এলা টুনের গোলে ইংল্যান্ড এগিয়ে যায়। ৭৯ মিনিটে সেই গোল শোধ করে জার্মানি। গোল করেন লিনা মাগুল। নির্ধারিত সময়ে খেলার স্কোর ১-১। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা চলছে। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থতি ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে। ১১০ মিনিটে জার্মানির জালে বল জড়িয়ে দেন ক্লোয়ি কেলি। দেশের গোলের পর আভিজাত্য ভুলে যুবরাজ উইলিয়ামসের উচ্ছ্বাসও স্টেডিয়ামে একজন সাধারণ ফুটবল পাগল ফ্যানের মতন। আর কেলি যেটা করলেন তা দেখে চক্ষু চরক গাছ সকলের। বলটা জার্মানির গোলে জড়িয়ে যেতেই ছুটতে শুরু করেন। গ্যালারিতে যুবরাজের উপস্থিতিতেই জার্সি খুলে শুধু অন্তর্বাস পড়ে পুরো মাঠ ছুটতে থাকেন তিনি।
কেলির এই কাণ্ড নেট দুনিয়ায় ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। কেলির গোলেই শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে ম্যাচ জিতে প্রথমবার ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। জয়ের পর কেলি বলেন,'ছোট থেকে একটাই স্বপ্ন দেখেছি। ইংল্যান্ডের হয়ে ট্রফি জিতে সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। চোট সারাতে যখন রিহ্যাব করছিলাম সেই সময় গোটা দল পাশে ছিল। আমার উপর বিশ্বাস রেখেছিল। সেই বিশ্বাসের দাম দিতে পেরেছি।' ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি সমর্থকদের। বলেছেন,'যাঁরা প্রতিটা মুহূর্তে আমাদের জন্য গলা ফাটিয়েছেন, তাঁদের অনেক ধন্যবাদ। এই ট্রফি তাঁদের জন্য।'
কেলির এই উচ্ছ্বাস মনে করিয়ে দেয় লর্ডসে সৌরভের সেই 'দাদাগিরির' মুহূর্তের কথা। সৌরভ সেই উচ্ছ্বাস যেমন ছিল অনেক কিছুর জবাব। কেলির গোলও অনেকট তেমনই। জবাব দেওয়ার ছিল জার্মানিকে, যে দলের কাছে এর আগে ২৭ বারের সাক্ষাতে ২৫ বার হারতে হয়েছে তাঁদের। জবাব দেওয়ার ছিল সেই সমালোচকদের, যাঁরা কেলিকে জাতীয় দলে নেওয়া নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন। জবাব দিলেন তিনি। দেশকে ট্রফি জিতিয়ে দিলেন। মহিলা ফুটবলার হয়েও জার্সি খুলে অন্তর্বাস পড়ে উচ্ছ্বাস স্মরণীয় হয়ে থাকবে ফুটবল ইতিহাসে ঠিক যেমনটা স্মরণীয় আছে লর্ডসের ব্যালকনিতে।