ভারতে করোনার টিকাকরণ, কোথাও কি কৌশলে ভুল হল মোদী সরকারের - পরিসংখ্যানসহ বিশ্লেষণ

কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে ভারতের টিকা অভিযান বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এর একাধিক কারণ রয়েছে। ভারত বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী দেশ। তাই, ভারত  যখন 'বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ অভিযান'এর কথা ঘোষণা করেছিল, তখন থেকেই এই অভিযানের দিকে স্বাভাবিকভাবেই চোখ রেখেছিল সারা বিশ্ব। সাড়ে চার মাস ধরে ভারতে চলছে করোনা টিকাকরণ। এখনও, ক্রমাগত প্রশ্ন চলছে এই জনস্বাস্থ্য অভিযান নিয়ে। টিকার প্রাপ্যতা থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি, টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির সদিচ্ছা - অনেক বিষয় নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। ভারতের টিকাকরণ সম্পর্কে ওঠা প্রশ্নগুলি নিয়ে আলোচনা করলেন নয়াদিল্লির পাবলিক পলিসি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, ব্লুক্রাফ্ট ডিজিটাল ফাউন্ডেশনের সিইও তথা মাইগভ এর প্রাক্তন কনটেন্ট ডিরেক্টর, অখিলেশ মিশ্র। খুঁজলেন সেইসব প্রশ্নের উত্তর -

*লেখক নয়াদিল্লির পাবলিক পলিসি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, ব্লুক্রাফ্ট ডিজিটাল ফাউন্ডেশনের সিইও এবং এর আগে মাইগভ ...

Read more at: https://bangla.asianetnews.com/coronavirus-india/covid-second-wave-and-india-the-questions-and-answers-alb-qt910v  খুখোঁজা যাক তাদের উত্তর।

 

Asianet News Bangla | Published : May 26, 2021 1:27 PM IST / Updated: May 27 2021, 02:48 PM IST
18
ভারতে করোনার টিকাকরণ, কোথাও কি কৌশলে ভুল হল মোদী সরকারের - পরিসংখ্যানসহ বিশ্লেষণ

ভারতের টিকাদানের গতি কি বিশ্বমানের তুলনায় ধীর?

২০২১ সালের ২৫ মে পর্যন্ত, ভারতে ১৯ কোটি ৬৪ লক্ষ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত বিশ্বে একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই ভারতের থেকে বেশি পরিমাণ ডোজ টিকা দিয়েছে। তবে, মার্কিন প্রশাসন ভারতের থেকে প্রায় এক মাস আগে টিকা দেওয়া শুরু করেছিল। বস্তুত টিকাদানের গতির তুল্যমূল্য বিচারে ভারত এখনও পর্যন্ত বিশ্বে দ্রুততম। ভারত মাত্র ১১৪ দিনে ১৭ কোটি ডোজ টিকা দিতে পেরেছে। সেখানে সম পরিমাণ ডোজ টিকা দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সময় লেগেছে ১১৫ দিন, চিনের ১১৯ দিন।

28

ভারতে কি করোনা টিকার ঘাটতি রয়েছে?

বিশ্বে হাতে গোনা কয়েকটি দেশই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে নাগরিকদের স্বদেশে তৈরি টিকা দিতে পেরেছে। ভারত এই দেশগুলির অন্যতম। ভারত বায়োটেকের কোভাক্সিন তো একেবারে দেশীয়ভাবে তৈরি। অন্যদিকে কোভিশিল্ড অক্সপোর্ড-অ্য়াস্ট্রাজেনেকার বিকশিত হলেও উত্পাদিত হচ্ছে ভারতেকরই সিরাম ইনস্টিটিউটে। তৃতীয় অনুমোদিত ভ্যাকসিন স্পুটনিক ভি-ও দেশেরই ডা. রেড্ডিজ ল্যাবে তৈরি হবে। সত্যি বলতে শুধু ভারতে নয়, ধনী দেশগুলি বাদ দিয়ে বিশ্বের সর্বত্রই এখন ভ্যাকসিনের ঘাটতি রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বিচার করলে দেখা যাবে ভারতের ভ্যাকসিনের মজুত সবথেকে বেশি।

38

টিকাদানের শতকরা হারে কি পিছিয়ে ভারত?

ভ্যাকসিনগুলির দৈনিক উত্পাদন ক্ষমতার একটা সীমাবদ্ধতা যে আছে তা মেনে নিতেই হবে। যদিও, এই উৎপাদন ক্ষমতা গত এক বছরে বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু, তা তো অসীমভাবে বাড়তে পারে না। এর পাশে রাখতে হবে ভারতের বিপুল জনসংখ্যাকেও। ভারতের পরের সর্বাধিক জনবহুল দেশের থেকে ভারতের জনসংখ্যা প্রায় ৫ গুণ বেশি। এই তথ্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে বিশ্বের অ্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের চ্যালেঞ্জটা কত বড়। তাই অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতের টিকাদানের শতকরা হারের তুলনা করলে সঠিক ছবিটা ধরা পড়বে না। টিকাদানের ক্ষেত্রে বিশ্বে ভারত ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে তা বুঝতে জানতে হবে একটি তথ্য। গত ১৬ জানুয়ারি ভারত টিকাকরণ অভিযান শুরু করেছিল। সেইদিন থেকে এখন পর্যন্ত চিনকে বাদ দিলে বিশ্বে মোট  ১১৩ কোটি ৫০ লক্ষ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৭.৩ শতাংশ বা ১৯ কোটি ৬৪ লক্ষ ডোজ দিয়েছে ভারত।

48

ভারত কি পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যাকসিনের অগ্রিম বরাত দিয়েছিল?

প্রথমত, যেসব দেশে নিজেদের মাটিতে টিকা তৈরি হয় না, সেই সব দেশ পুরোপুরি টিকা আমদানির উপর নির্ভরশীল। তাই তাদের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের অগ্রিম বরাত দেওয়েটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের ক্ষেত্রে তা নয়। স্পুটনিক ভি-কে অনুমোদন দেওয়ার আগে পর্যন্ত ভারতে ,সম্পূর্ণ দেশীয় টিকা দিয়েই টিকাকরণ চলছিল। দ্বিতীয়ত, মহামারি চলাকালীন অধিকাংশ দেশই ভ্যাকসিন রফতানি নিষিদ্ধ করেছে। তাই আগে থেকে বরাত দিয়েও সছিক সময়ে যে কাঙ্খিত পরিমাণ টিকা পাওয়া যাবেই, তার নিশ্চয়তা নেই। কানাডা যেমন, আগে থেকেই ৩৩ কোটি ৮০ লক্ষ ডোজ করোনা টিকার বরাত দিয়েছিল, কিন্তু, ২৪ মে পর্যন্ত তারা মাত্র ২ কোটি ১০ লক্ষ টিকা দিতে পেরেছে। যেখানে একই সময়ে ভারত, আগে থেকে মাত্র ১১ কোটি ৬০ লক্ষ ডোজ টিকা বরাত দিয়ে ১৯ কোটি ৬০ লক্ষ ডোজ টিকা দিয়েছে। তাছাড়া, 'বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উত্পাদক' ভারত করোনা টিকা রফতানি আপাতত নিষিদ্ধ করেছে। তাই কার্যত দেশে উৎপাদিত প্রতি ডোজ করোনা টিকারই বরাত দিয়েছে ভারত সরকার।

58

ভারত কেন ভ্যাকসিন রফতানি করল?

ভারত এখনও পর্যন্ত বিদেশে রফতানি করেছে ৬ কোটি ৬০ লক্ষ ডোজ করোনা টিকা। অর্থাৎ রফতানি করা টিকার প্রায় ৩ গুণ বেশি ডোজ ইতিমধ্যেই ভারতীয় নাগরিকদের দেওয়া হয়েছে। কাজেই,রফতানি করা হয়েছে বলে ভারতের মজুত থাকা টিকার পরিমাণ কমে গিয়েছে, এটা বলা যায় না। আর এই রফতানি করা ৬ কোটি ৬০ লক্ষ ডোজ টিকার মধ্যে মাত্র ১ কোটি ছিল, ছোট আকারের নিম্ন আয়ের গরীব দেশকে শুভেচ্ছা হিসাবে অনুদান দেওয়া। এই 'ভ্যাকসিন মৈত্রী'র আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বড় প্রভাব রয়েছে। এর বাইরে, সাড়ে ৩ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ পাঠাতে হয়েছে টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির চুক্তিগত বাধ্যবাধকতার কারণে। আর প্রায় ২ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রসংঘের 'কোভ্যাক্স' প্রকল্পে। দরিদ্র দেশগুলির জন্য এই প্রকল্পের অধীনে টিকা সংগ্রহ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

 

68

দেশে টিকার উত্পাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে না কেন?

গত বছরই কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছিল। এই অল্প সময়ের মধ্যে উত্পাদন ক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি করা গেলেও তা অসীম স্তরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এই অবস্থায়, উৎপাদন ক্ষমতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারকে একইসঙ্গে বিনিয়োগকারী, পালনকারী, মূল্যায়নকারী এবং তার পাশাপাশি ক্রেতার ভূমিকা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সংস্থাগুলিকে সবরকম আর্থিক, প্রাতিষ্ঠানিক, নিয়ন্ত্রক এবং আইনী সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ২০২১ সালের জুলাই মাসের মধ্যেই ভারতে ৫১ কোটির বেশি ডোজ টিকা দেওয়ার পরিচালনা করার পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র। সব কিছু ঠিকঠাক চললে, ২০২১-এর শেষে ২১৬ কোটি ডোজ ভ্য়াকসিন দিতে পারবে ভারত।

78

ভারতের টিকাকরণ অভিযানের বর্তমান পরিস্থিতি কী?

বৈজ্ঞানিক প্রোটোকল এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা মেনেই এগোচ্ছে অনুযায়ী ভারতের টিকাকরণ অভিযান। প্রাথমিক লক্ষ্য হল মৃত্যুর সংখ্যা কমানো, তারপরে সংক্রমণ রোধ। ধাপে ধাপে স্বাস্থ্যকর্মী, ফ্রন্ট-লাইন কর্মী, ৬০ ঊর্ধ্ব ব্যক্তি এবং সহ-অসুস্থতা থাকা ৪৫ ঊর্ধ্ব ব্যক্তি, ৪৫ উর্ধ্ব সকলে এবং অবশেষে ১৮ বছরের উর্ধ্ব বয়সীদের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। টিকাদান প্রক্রিয়াটি বর্তমানে রাজ্য সরকার এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানদের জন্যও খুলে দেওয়া হয়েছে। দেশের ৪৬,০০০ টিরও বেশি কেন্দ্রে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে। এরপরও কেন্দ্রীয় সরকার সরকারি ক্ষেত্রে নিখরচায় টিকাদানের বিকল্প খোলা রেখেছে। কেন্দ্রীয় সরকারই এই ভ্যাকসিনগুলি সংগ্রহ করে রাজ্য সরকারকে দেবে দরিদ্রদের দেওয়ার জন্য়।

88

ভারতের করোনা টিকাকরণের ভবিষ্যত কী?

দেশীয় ভ্যাকসিনের উৎপাদন বাড়ালোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কীভাবে নিপরন্তর প্রয়াস তচালিয়ে যাচ্ছে, তা আগেই বলা হয়েছে। এছাড়া, দেশে টিকার সরবরাহ বাড়াতে বেশ কয়েকটি বিদেশী ভ্যাকসিন নির্মাতাদের সঙ্গেও আলোচনার শেষ পর্যায়ে রয়েছে মোদী সরকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এফডিএ-র মতো কোনও পরিচিত ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনুমোদন দিলেই কোনও বিদেশি টিকাকে ভারতে জরুরি অনুমোদন দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তার আগে ভারতে প্রয়োজনীয় ট্রায়াল পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি, ভারত বায়োটেক ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের উপর কোভাক্সিন টিকার ট্রাল শুরু করার অনুমতি পেয়েছে। কাজেই, উত্পাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, বিদেশি ভ্যাকসিনগুলিকে অনুমোদন দেওয়া - সব মিলিয়ে সময়মতো করোনাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ নাগরিকদের টিকাকরণের জন্য ভারত সরকার একেবারে সঠিক পথে রয়েছে ।

Share this Photo Gallery
click me!

Latest Videos