২৫ জুন ১৯৮৩ ৷ ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এক গৌরবময় দিন৷ শুধু ক্রিকেটই নয়, ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রেই এই দিনটি চির-স্মরণীয় হয়ে থাকবে৷ কারণ এই দিনেই যে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল ভারত ৷ শুক্রবার সেই ঐতিহাসিক দিনের ৩৮ বছর পূর্তি। সকাল থেকে শুভেচ্ছার জোয়ারে ভাসছেন কপিলের দলের সদস্যরা। ৩৮ বছর পেরিয়ে গেলেও লর্ডসের ব্যালকনিতে কপিল দেবের হাতে সেই ট্রফি তোলার দৃশ্য আজও প্রত্যেক ভারতবাসীর স্মৃতিতে টাটকা ৷
৮৩ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ভারত চ্যাম্পিয়ন হতে পারে, এমন চিন্তাভাবনা কল্পনাতেও কেউ আনেননি৷ কারণ তার আগের দু’টো বিশ্বকাপে একমাত্র ইস্ট আফ্রিকা বাদে আর কোনও দেশকেই ভারতীয়রা হারাতে পারেনি৷ ১৯৭৫, ৭৯ বিশ্বকাপের পর ৮৩-র বিশ্বকাপও ইংল্যান্ডে হওয়াতে ওই বছরও ভারতকে নিয়ে বাজি ধরার মতো কোনও লোক ছিল না গোটা বিশ্বেই৷
214
টুর্নামেন্টের শুরুটাও একেবারেই ভাল হয়নি ভারতীয়দের৷ ভারতীয় দল ঘুরে দাঁড়ায় ডানকান ফ্লেচারের জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধেই৷ যে ম্যাচে একসময় ১৭ রানে ৫ উইকেট পড়ে গিয়েছিল ভারতের৷
314
ওই সময়েই ব্যাট করতে নামেন ভারত অধিনায়ক কপিল দেব৷ তাঁর মাত্র ১৩৮ বলে ১৭৫ রানের ইনিংস ক্রিকেট ইতিহাসে চিরকাল অমর হয়ে থাকবে৷ ওই ম্যাচ জেতার পরেই যেন নিজেদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় ভারতীয়রা৷ সকলের মনেই ধারণা জন্মায়, যে ‘আমরাও বিশ্বকাপ জয়ের ক্ষমতা রাখি’৷
414
সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া হারিয়ে ভারত পৌঁছায় বিশ্বকাপ ফাইনালে। যা একেবারেই এক অসম্ভব ছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ভারত সেই অসম্ভবকে জয় করেছিল। একইসঙ্গে স্বপ্ন দেখেছিল বিশ্ব জয়ের।
514
ফাইনালে ভারত মুখোমুখি হয় ওয়েস্ট ইন্ডিসের বিরূদ্ধে। ফাইনালে ভারতের জেতার ব্যাপারে কেউ বাজি ধরতে পারছিলেন না৷ কারণ প্রতিপক্ষের নাম যে সেই ওয়েস্টইন্ডিজ৷ যে দলে রয়েছেন, ভিভিয়ান রিচার্ডস, ক্লাইভ লয়েড, ম্যালকম মার্শালদের মতো সব সুপারস্টাররা৷
614
তখন ছিল ৬০ ওভারের খেলা। লর্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিস টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেয়। ভারত নামে ব্যাট করতে, আর ওপেনিং জুটি সুনীল গাভাস্কার ও কে শ্রীকান্ত। সুনীল গাভাস্কার মাত্র ২ রান করেই আউট হয়ে যায়।
714
এরপর খুব একটা ভালো রান করতে পারেননন কেউই। অবশেষে ৫৪.৪ নম্বরে ভারত সব উইকেট হারিয়ে রান করে মাত্র ১৮৩। রান পেয়েছিল শ্রাকান্ত ৩৮, অমরনাথ ২৬ এবং পাটিল ২৭ ।
814
এরপর ব্যাট করতে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিস। লক্ষ্য খুবই কম। মাত্র ১৮৪। সবার ধারণা ছিল এবারের বিশ্ব চাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডস। কিন্তু সেদিন ভারতের দূর্দান্ত বোলিং লাইনআপের কাছে মাত্র ১৪০ রান করে থামতে হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিসকে। ৫২ তম ওভারে অলআউট হয় ২ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
914
একইসঙ্গে ইতিহাসের পাতায় নাম তুলে নেয় ভারতীয় ক্রিকেট দল। প্রথম বিশ্ব জয়ের খেতাব ভারতের নামে। আজাদ বাদে সবাই উইকেট পেয়েছিল। মদন লাল এবং অমরনাথের খাতায় ৩টে উইকেট।
1014
কপিল দেবের হাত ধরে এসেছিল ক্রিকেটে ভারতের প্রথম বিশ্বজয়। ২৫ জুন ১৯৮৩ দিনটি ছিল ভারতীয় ক্রিকেটে স্বর্ণযুগের সূচনা। যার পর থেকেই দুরন্ত গতিতে ছুটতে শুরু করে ভারতীয় ক্রিকেট।
1114
সেদিন ফাইনাল জয়ের পর মাঠে দর্শকদরে উচ্ছ্বাস, উন্মদনাও ছিল বাঁধন হারা। এদেশ থেকে সুদূর ইংল্যান্ড রাতভর উৎসব মেতেছিল ভারতীয়রা।
1214
দেশে ফেরার পর ভারতীয় দলকে সংবর্ধনা জানায় গোটা দেশ। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিও সংবর্ধনা জানায় কপিল দেবের দলকে।
1314
২০০৭ টি-২০ বিশ্বকাপ এবং ২০১১-এ দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ জয়ও এই ১৯৮৩ জয়ের স্মৃতিকে বিন্দুমাত্র কমাতে পারেনি৷ বরং ভারতের ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রসঙ্গ উঠলেই প্রথমে ৮৩’র বিশ্বকাপের কথাই এখনও মনে পড়ে সকলের, ধোনির নেতৃত্বে ২০১১-তে ফের বিশ্বকাপ জয় করেছে ভারত। কিন্তু প্রথম বিশ্ব জয়ের ব্যাপারই যে আলাদা তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
1414
শুক্রবার ভারতের প্রথম বিশ্বজয়ের ৩৮ বছর পূর্তি। বিসিসিআইয়ের তরফ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছা জানানো হয়। ফ্যানেদের শুভেচ্ছা বার্তা ও নস্টালজিয়ায় সকাল থেকেই ভাসছেন কপিল দেব, সুনীল গাভাস্কর সহ সেই দলের সদস্যরা।