Rasogolla- কিভাবে হল রসগোল্লার জন্ম, জেনে নিন এর জন্মবৃত্তান্ত

রসগোল্লা কার? বাংলার না উড়িষ্যার ? রসগোল্লার মালিকানা নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নেমেছিল দুই রাজ্য। সব যুক্তি–তর্ক শেষে ১৪ নভেম্বর ২০১৭ তে পশ্চিমবঙ্গ রসগোল্লার জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই ট্যাগ লাভ করে। এই জয় বাঙালির কাছে কোনও অংশে ঐতিহাসিক জয়ের চেয়ে কম কিছু ছিল না। আসুন জেনে নেওয়া যাক রসগোল্লা কীভাবে এল তার কিছু অজানা কথা- অনিরুদ্ধ সরকার

deblina dey | Published : Nov 15, 2021 4:11 AM IST / Updated: Nov 15 2021, 10:20 AM IST

110
Rasogolla- কিভাবে হল রসগোল্লার জন্ম, জেনে নিন এর জন্মবৃত্তান্ত

মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্যগুলোতে প্রচুর পরিমাণে খাবারদাবারের উল্লেখ থাকলেও রসগোল্লার উল্লেখ কোথাও পাওয়া যায় না। এমনকি ‘কৃত্তিবাসী রামায়ণ’ কিম্বা ‘চণ্ডীমঙ্গল’–এর মতো কাব্যে সন্দেশের মত মিষ্টির উল্লেখ থাকলেও রসগোল্লার কোনও উল্লেখ নেই। অতএব রসগোল্লা এসেছিল তারও পরে। 

210

বৈদিক যুগ থেকে দুধ, দুধ থেকে তৈরি ক্ষীর, দই, ঘি, মাখনের প্রচলন ছিল সারা দেশে। গোপাল ঠাকুর মাখন খেতে ভালোবাসতেন। সারা দেশের মত বাংলাতেও এই খাবারগুলির প্রচলন ছিল। পুরো ভারত উপমহাদেশে দুগ্ধজাত মিষ্টান্ন শ্রেষ্ঠ খাবার হিসেবে পরিগণিত ছিল। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন দেবতার ভোগেও দুগ্ধজাত মিষ্টান্নই নিবেদন করার রেওয়াজ ছিল। সেখানেও রসগোল্লার কোনও উল্লেখ নেই। 
 

310

ষষ্ঠ শতকে পর্তুগিজরা দুধ থেকে পনীর ও সন্দেশ তৈরি করে তা বাজারে বিক্রি করত। সেগুলি ব্যবহার করে সেসময় বাঙালিরা  রসগোল্লা বা রসগোল্লা জাতীয় মিষ্টান্ন তৈরি করে থাকতে পারেন বলে গবেষকদের ধারণা।
 

410

নবীন চন্দ্র দাস ছিলেন চিনি ব্যবসায়ী। ১৮৬৪ সালে কলকাতার জোড়াসাঁকোতে একটি মিষ্টির দোকান খোলেন তিনি। দোকানটি সেখানে বেশিদিন না চলায় ১৮৬৬ সালে কলকাতার বাগবাজারে আরেকটি মিষ্টির দোকান দেন নবীন ময়রা। এই দোকানটির প্রধান মিষ্টি ছিল সন্দেশ। শোনা যায় কলকাতার কিছু জমিদার এবং বণিকদের জন্য 'নতুন মিষ্টি' তৈরির কথা ভাবতে থাকেন নবীন ময়রা। এই ভাবনার দু বছরের মাথায় তৈরি হয় 'রসগোল্লা'। তৈরি না বলে আবিষ্কার বলাই ভালো।

510

তৎকালীন কলকাতার জমিদার ভগবান দাস বাগলার একদিন বাগবাজার দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঘোড়ায় টানা জুড়ি গাড়িতে ভগবান দাসের সঙ্গে ছিল তার ছেলে। ছেলে জল পান করতে চাইলে নবীনের মিষ্টির দোকানের সামনে গাড়ি দাঁড় করান ভগবান দাস। ভগবান দাসের ছেলেকে নবীন ময়রা এক গ্লাস জল ও একটি রসগোল্লা খেতে দিলে সে খুব মজা করে 'রসগোল্লা' খায়। ভগবান দাসও রসগোল্লা খেয়ে বেশ মজা পায়। তারপর বাপ-ব্যাটা এক হাঁড়ি রসগোল্লা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। 'রসগোল্লা' নামক মিষ্টিটির নাম কলকাতার ছড়িয়ে পড়ে আর রসগোল্লা বিখ্যাত হয়ে যায়। 
 

610

কলকাতার বেনেটোলার সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের দীনু ময়রার পূর্বপুরুষ ব্রজ ময়রা কলকাতা হাইকোর্টের কাছাকাছি তাঁর দোকানে ১৮৬৬ সাল নাগাদ নাকি রসগোল্লা আবিষ্কার করেন। তারপর নাকি নবীন ময়রা বানিয়েছিলেন এই আশ্চর্যজনক মিষ্টি।

710

কিছু লোকগবেষক মনে করেন বাংলাদেশের বরিশাল অঞ্চলে প্রথম বানানো হয়েছিল রসগোল্লা। পিরোজপুর এলাকায় কিছু ইউরোপীয় সাহেব ও ডাচরা থাকতেন। ওই এলাকার ভান্ডারিয়ার ময়রারা ছানা, চিনি, দুধ ও সুজি দিয়ে গোলাকার এক ধরণের মিষ্টান্ন তৈরি করেছিলেন। সেটাই ছিল খুব সম্ভবত, 'ক্ষীরমোহন' বা 'রসগোল্লা'।
 

810

রানাঘাটের হারাধন ময়রা নাকি প্রথম রসগোল্লা বানান। তার দোকানে একবার চিনির রসে দুর্ঘটনাক্রমে কিছু ছানার গোল্লা পড়ে যায়। আর সেটাই হয়ে যায় আশ্চর্য মিষ্টি 'রসগোল্লা'।এক বিদেশি গবেষক লিখছেন, "কৃত্তিবাসের জন্মস্থান ফুলিয়া গ্রামই রসগোল্লার জন্মভূমি। ওই গ্রামের হারাধন ময়রা রানাঘাটের পালচৌধুরী মহাশয়দের মিষ্টান্ন প্রস্তুত করিত। তাহার শিশুকন্যা কাঁদিতেছিল। তাহাকে সান্ত্বনার জন্য উনানের ওপর তৈরি রসে ছানা ফেলিয়া দেখিল উৎকৃষ্টসামগ্রী তৈয়ার হইয়াছে। পালচৌধুরী জমিদারেরা উহার 'রসগোল্লা' নামকরণ করেন।"
 

910

রসগোল্লাকে তাদের ৮০০ বছরের পুরনো নিজস্ব আবিষ্কার বলে দাবি করে উড়িশ্যা। তাদের প্রচলিত মত, রথযাত্রা শেষে সাত দিন মাসীর বাড়ি কাটিয়ে মন্দিরে ফেরার সময় "রসগোল্লা" হচ্ছে জগন্নাথ দেবের বিশেষ ভোগ। স্ত্রী লক্ষ্মীর মান ভাঙিয়ে মন্দিরে ঢুকতে হয় নারায়ণকে। হাঁড়িভরা রসগোল্লা দিয়ে জগ্ননাথ মন গলান মা লক্ষ্মীর। মন্দিরের রত্নভাণ্ডারের কাছে লক্ষ্মী-নারায়ণের পুষ্পাঞ্জলি পুজোর পরেই স্ত্রীকে রসগোল্লা-ভোগ অর্পণ করেন জগন্নাথ। উড়িষ্যার ইতিহাসবিদ জে. পাঢ়ী জানাচ্ছেন, "The rasgulla is more than 600 years old. It is as old as the Rath Yatra in Puri."

1010

রসগোল্লা আবিষ্কারের পর তা বিভিন্ন নাম নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ‘রসগোল্লাজাতীয়’ অনেক মিষ্টি তৈরি হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল স্পঞ্জ রসগোল্লা, কমলা রসগোল্লা, রাজভোগ, ক্ষীরমোহন, দিলবাহার, চমচম, রসকদম্ব, মৌচাক, দানাদার, রসমুণ্ডী, ছানার গজা, ছানার মুড়কি ও পান্তোয়া। আর এই রসগোল্লাকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয় আরেকটি বিখ্যাত মিষ্টি 'রসমালাই' বা 'রসমঞ্জুরি'।

Share this Photo Gallery
click me!
Recommended Photos