করোনা ছাড়াও শতকের পর শতক মহামারীর কোপে পড়েছে ভারত, দেখে নিন সেই তালিকা
সমগ্র বিশ্ব জুড়ে বর্তমানে আতঙ্কের নাম কোবিড-১৯ ভাইরাস। গোটা বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যেই বহু মানুষের এই ভাইরাসের মারণ থাবায় মৃত্যু হয়েছে। এই রোগকে বিশ্ব মহামারি বলে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই মুহূর্তে বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৯৮৭২৮। সেই সঙ্গে ভারতে এই মুহূর্ত অবধি আক্রান্তের সংখ্যা ১৪৭। তবে শুধু এই করোনাই নয় এর আগেও বহু মহামারীর মুখোমুখি হয়েছে ভারত। জেনে নিন করোনার মতই এদেশে আগেও থাবা বসিয়েছিল এই মহামারীগুলো-
deblina dey | Published : Mar 18, 2020 10:03 AM IST
কলেরা- ১৮ ১৭ থেকে ১৮৮১ সালের মধ্যে মোট পাঁচবার কলেরা-র প্রাদুর্ভাব হয়েছিল। এই কলেরা মহামারীর আকার নিয়েছিল। মূলত এই কলেরা-তে আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণির মধ্যে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি ছিল। ভারতে বসবাসকারী ইউরোপিয়ানরা সেভাবে এতে প্রভাবিত হয়নি। মূলত বন্যা থেকে এই রোগের উৎপত্তি হয়েছিল।
বম্বে প্লেগ, ১৮৬৫- মহামারীর আকার নিয়েছিল এটি। এতে অন্তত কয়েক হাজার লোক মারা গিয়েছিল। কয়েক লক্ষ মানুষ বম্বে ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। একে অতিমারিরও আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।
কলেরা, ১৮৯৯- ফের কলেরার আক্রমণ। মূলত বম্বে, কলকাতা এবং চেন্নাই এতে প্রভাবিত হয়। এটা ছিল ০১ স্টিরিওটাইপের ভিবিরিও কলেরা। এবং আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। ২৫ বছর এই কলেরা-র প্রভাব বজায় ছিল।
ইনফ্লুয়েজ্ঞা অতিমারি, ১৯১৮- ১৯- সাল পর্যন্ত এটা বজায় ছিল। এটাকে স্প্যানিস ফ্লু-বলেও অভিহিত করা হয়। এতে বিশ্বজুড়ে ৫০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এবং ভারতের মহামারির ইতিহাসে একে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বলে চিহ্নিত করা হয়। এইচ ওয়ান এন ওয়ান ইনফ্লুয়েজ্ঞা স্টেনের জন্য এটা ঘটেছিল। ১৯১৮ সালে শরৎকালে শুরু হয়েছিল ইনফ্লুয়েজ্ঞা অতিমারি।
পোলিও মহামারি, ১৯৭০-১৯৯০- পোলিও-তে ভারত বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানাধিকারী দেশ। উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে এতে ভারত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ভেলোর, উত্তরপ্রদেশ। ১৯৬৪ সালে বম্বে এবং ১৯৬৫ সালে ভেলোরে ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন কর্মসূচি শুরু হলেও আক্রান্তের সংখ্যা-কে কমানো যায়নি। পোলিও-তে অনেকেই পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
স্মল পক্স মহামারি, ১৯৭৪- বিশ্বজুড়ে এটা মহামারির আকার নিয়েছিল। এই তালিকায় ভারতের নাম ছিল সবার উপরে। পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও বিহার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ১৫ হাজারের-ও বেশি মানুষ এতে প্রাণ হারিয়েছিলেন। কয়েক হাজার মানুষ কোনওভাবে বেঁচে গেলেও তারা শারীরিকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছিল। কেই চিরদিনের মতো অন্ধ হয়ে গিয়েছিল অথবা শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেঁকে গিয়েছিল।
সুরাট প্লেগ মহামারি, ১৯৯৪- সুরাটের এই সংক্রমণ ভারতের অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়েছিল। ১২০০ মানুষ এতে সংক্রমিত হয়েছিল। তবে, এর মারণ ক্ষমতা এই প্লেগ-কে কুখ্যাত করে তুলেছিল। প্রথমদিকে চিকিৎসকরা ধরতেই পারছিলেন না এর মোকাবিলার রাস্তাটা।
ডেঙ্গু, ২০০৩- সেপ্টেম্বর থেকে এর উপস্থিতি সামনে আসে। মূলত নয়াদিল্লি এবং তার আশপাশের এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব হয়েছিল। এতে অসংখ্য লোকের মৃত্যু হয় এবং ওই বছরের ডিসেম্বরে এর প্রভাব কমতে থাকে।
সার্স, ২০০৩- সিভায়ার অ্যাকুউট রেসপাইরেটোরি সিনড্রোম এর নাম হলেও লোকে একে সার্স বলেই জানে। কয়েক বছর ধরে টানা সার্সের প্রভাব ছিল। চিনের গুয়ানডোঙ শহর থেকে এটা কয়েক মাসের মধ্যেই ৩০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। মাত্র সাত থেকে আট মাসের মধ্যে এশিয়া, আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে মোট ৮,৪৩৯টি কেস পাওয়া গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছিল ৮১২ জনের।
চিকুনগুনিয়া, ২০০৬- চিকুনগুনিয়ায় আহমেদাবাদ ও ওড়িশা-তেই শুধু মৃত্যু হয়েছিল ২,৯৪৪ জনের। এতে বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন। কয়েক বছর সময় লেগেছিল চিকুনগুনিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে। এর বাইরেও আরও কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব হয়েছিল ভারতের বুকে সোয়াইন ফ্লু(২০১৫), মেনিনজাইটিস, ২০০৫ এবং নিপা সংক্রমণ।