সকালেই প্রকাশ্যে আসে বিকাশ দুবের এনকাউন্টারের খবর। পালাতে গিয়ে পুলিশের হাতে জখম হয় গ্যাংস্টার বিকাশ দুবে। পরে, তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। গত ৩ জুলাই গুলির লড়াইয়ে ৮ পুলিশকর্মীর মৃত্যুর পরে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষোভের আগুন জ্বলছিল।এমনকি, নিহতদের পরিবারের সদস্যদের অনেকেও খোলাখুলি উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। শুক্রবার পুলিশি এনকাউন্টারে বিকাশ দুবের মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসার পরে তাঁরা যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। কানপুরের রাস্তায় জড়ো হয়ে পুলিশের নামে জয়ধ্বনি দিয়েছেন সাধারণ মানুষও। কিন্তু গ্যাংস্টারের মৃত্যু ঘিরে উঠে আসছে অনেক প্রশ্ন।
যে কোনও ‘এনকাউন্টারে’র মতোই এ ক্ষেত্রেও আত্মরক্ষার তত্ত্ব দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এডিজি জানিয়েছেন, পুলিশ কর্মীর পিস্তল ছিনিয়ে পালানোর চেষ্টার সময় বিকাশ দুবেকে তাঁরা আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। জবাবে গুলি চালায় সে, পাল্টা গুলিতে খতম হয় কুখ্যাত গ্যাংস্টার। কিন্তু অনেকেই এই তত্ত্ব মানতে রাজি নন।
211
বিকাশকে যে ভউতি এলাকায় মারা হয়েছে, সেখানেই বৃহস্পতিবার তার ডান হাত প্রভাত মিশ্রের এনকাউন্টার করে পুলিশ। এলাকা পুরো ফাঁকা, দূরে আছে শুধু একটা পাঁচিল। এমন জায়গায় বিকাশ পালানোর ঝুঁকি কেন নিতে গেল, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
311
অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার তথা বিএসএফের প্রাক্তন এডিজি এন সি আস্থানা এদিন দুর্ঘটনা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর টুইট, ‘‘গল্পটা বেশ ভয়ানক। গাড়িটা তো দেখছি সুবিধামতো জায়গাতেই শোয়ানো আছে। চারটি দরজাই বন্ধ। রাস্তার হাল দেখুন। এতো মোলায়েম ভাবে গাড়ি উল্টে যাওয়ার কোনও কারণই নেই। আর চারিদিকে ফাঁকা মাঠ। বোকাসোকা কোনও মোটা লোকও এমন ক্ষেত্রে ছুটে পালানোর ঝুঁকি নেবে না।’’
411
রাস্তার ধারে ‘মোলায়েম ভাবে’ উল্টে যাওয়া ওই সাদা গাড়িটির একটি মাত্র জানলার কাচ ভেঙেছে। বৃষ্টিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যা অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিকদের অনেকেই। দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে কোনও ‘রোড ব্লকার’ও নজরে আসেনি।
511
বৃহস্পতিবারই উজ্জ্বয়িনীতে মহাকালের মন্দিরে সাধারণ গার্ডরা তাকে ঘিরে ফেললে সে তৎক্ষণাৎ আত্মসমর্পণ করে। অথচ এসটিএফ কমান্ডোরা তাকে ধরতে পারলেন না। যদিও শুক্রবার সে পালানোর চেষ্টা করল, তখন আগের দিনই কেন আত্মসমর্পণ করল, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
611
মধ্যপ্রদেশের উজ্জ্বয়িনী থেকে উত্তরপ্রদেশ আসা পর্যন্ত গোটা রাস্তাটা বিকাশের গাড়ির পিছনে ছিল সংবাদমাধ্যমের গাড়ি। অথচ ঠিক দুই রাজ্যের মধ্যে ঝাঁসি সীমানায় জাতীয় সড়কের ওপর ১ ঘণ্টা সংবাদ মাধ্যমের গাড়ি আটকে রাখা হয়। এমনটাও জানা গিয়েছে।
711
বিকাশের গাড়িতে ৫ পুলিশ কর্মী ছিলেন। তার পাশে এবং সামনেও পুলিশ ছিল। তা সত্বেও বিকাশের পালানোর বিষয়টা মানতে রাজি নয় অনেকে। তার হাতে হাতকড়া পরানো ছিল না কেন, সেকথাও শোনা যাচ্ছে।
811
উত্তরপ্রদেশ পুলিশ জানিয়েছে, গাড়ি উল্টে চার পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন। কিন্তু বিকাশ কী ভাবে অক্ষত অবস্থায় গাড়ি থেকে বেরোল এবং কনভয়ের অন্য গাড়ির পুলিশকর্মীদের নাগাল এড়িয়ে খোলা মাঠের মধ্যে কাঁচা রাস্তা দিয়ে প্রায় ২০০ মিটার ছুটে পালাল, তা নিয়েও ‘রহস্য’ তৈরি হয়েছে।
911
এছাড়া প্রশ্ন রয়েছে এনকাউন্টার ঘিরে। কোনও অপরাধী পালানোর চেষ্টা করলে তার বুকে গুলি করা যায় না, সাধারণত টার্গেট করতে হয় শরীরের নিম্নাংশ। বিকাশের বুকে তিনটে গুলি লাগার বিষয়টিও অনেকে ভালো চোখে দেখছেন না।
1011
গ্যাংস্টার বিকাশ দুবের পায়ে চোট ছিল, স্বাভাবিকভাবে চলতে পারত না। তাই পুলিশের সামনে দিয়ে বিকাশের ২০০ মিটার দৌড়ের বিষয়টিও বোধগম্য হচ্ছে না অনেকের।
1111
এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় মধ্যপ্রদেশের এক পুলিশ অফিসারের ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। বৃহস্পতিবার তোলা ভিডিয়োতে ওই অফিসারকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আশা করব বিকাশ শেষ পর্যন্ত কানপুর পৌঁছবে না।’’