মাত্র ১১ বছরে বিয়ে, বছরের পর বছর যৌন নির্যাতন - কীভাবে 'দস্যু রানী' হয়েছিলেন ফুলন দেবী

Published : Apr 04, 2022, 06:46 PM IST

বর্তমানে তুমুল চর্চা চলছে বিদ্যুৎ জামওয়ালের আসন্ন চলচ্চিত্র নিয়ে। এই চলচ্চিত্রটি শের সিং রানার বায়োপিক। কে এই শের সিং রানা? 'দস্যু রানী' ফুলন দেবীর হত্যাকারী সে। চলচ্চিত্র জগতে ফুলন দেবীর কাহিনি অবশ্য নতুন নয়, বেশ কিছু ছবি ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে। এক লাইনে দাঁড় করিয়ে ঠাকুর সম্প্রদায়ের ২২ জনকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন তিনি। তারই প্রতিশোধ নিতে ফুলন দেবিকে হত্যা করেছিল শের সিং রানা। ফুলন দেবীর গোটা জীবন জুড়েই এমন অনেক কাহিনি রয়েছে, যা জানলে অবাক হতে হয়।  

PREV
110
মাত্র ১১ বছরে বিয়ে, বছরের পর বছর যৌন নির্যাতন - কীভাবে 'দস্যু রানী' হয়েছিলেন ফুলন দেবী

শোনা যায় এক সময় ফুলন দেবীর নাম শুনলেই কেঁপে যেত গোটা উত্তরপ্রদেশ। কিন্তু বরাবরই তো এমন ছিল না। ১৯৬৩ সালের ১০ অগাস্ট, উত্তরপ্রদেশের জালাউন জেলায় গোরা কা পুর্বা নামে এক প্রান্তিক গ্রামে জন্মেছিলেন ফুলন। তাঁর পরিবার ছিল মাল্লা জাতি। ছোট থেকেই চরম দারিদ্র্য দেখতে হয়েছিল তাঁকে। 
 

210

শোনা যায়, তাঁর বয়স যখন ১০, সেই সময়ই এক ঘটনা ঘটেছিল, যা তার জীবন বদলে দিয়েছিল। আর সেই ঘটনা থেকে তাঁর পরবর্তী জীবনেরও আভাস পাওয়া যায়। কী সেই ঘটনা? মায়ের কাছ থেকে ফুলন জেনেছিলেন, তাঁর কাকা তাদের পারিবারিক জমির পুরোটাই দখল করে নিয়েছেন। ১০ বছরের ফুলন কাকার বাড়ির সামনে বসে ধরনায় বসেছিলেন। তাতে কাজ না হওয়ায় বিষয়টি তর্ক-বিতর্কে পৌঁছায়। তর্কাতর্কির ফুলন তার কাকার মাথায় ইট মেরেছিলেন। 
 

310

ফুলনকে সারাজীবন ওই ইট মারার মূল্য দিতে হয়েছিল। ওই ঘটনার পরই ১১ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল এক ৫০ বছর বয়সী ব্যক্তির সঙ্গে। বিয়ের পরই ফুলনকে তাঁর স্বামীর ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছিল। বছরের পর বছর ধরে চলে এই যৌন নির্যাতন। 

410

কষ্টের সীমা ছাড়িয়ে গেলে ফুলন ফিরে এসেছিলেন বাপের বাড়িতে। কিন্তু, সেখানে বেশিদিন থাকতে দেওযা হয়নি তাঁকে। আবার ফেরত পাঠানো হয় শ্বশুর বাড়িতে। কিন্তু তার মধ্যে তাঁর স্বামী আবার আরেকটি বিয়ে করে ফেলেছিলেন। ফলে ফুলনকে ফের বাপের বাড়িতে ফিরে আসতে হয়েছিল। আর এর পরপরই ২০ বছর বয়সে, ফুলনকে অপহরণ করে ধর্ষণ করা হয়েছিল। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েও কোনও প্রতিকার পাননি তিনি।
 

510

পুলিশের উপর আস্থা চলে যাওয়ার পর, ফুলন নিজেই অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ২০ বছর বয়সেই এক আত্মীয়ের সাহায্য়ে তিনি যোগ দিয়েছিলেন এক ডাকাত দলে। আর তাঁর প্রথম হত্যা ছিল তাঁর সেই স্বামী। 
 

610

তবে দস্যুদলে যোগ দিয়েও, নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি পাননি ফুলন। গ্যাংয়ের সর্দার, বাবু গুজ্জরের খারাপ নজর ছিল ফুলনের উপর। বাবু তাঁকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছিল। সেই সময় তার ডান হাত, দলের দ্বিতীয় বড় সদস্য বিক্রম মাল্লা, ফুলনকে বাঁচিয়েছিলে। ওই ধর্ষণের চেষ্টা নিয়ে তর্কাতর্কির মধ্যে সে বাবু গুজ্জরকে হত্যা করেছিল। পরদিন সকালেই বিক্রম মাল্লা নিজেকে দলের নতুন নেতা ঘোষণা করেছিলেন এবং ফুলনের সঙ্গে একসঙ্গে বসবাস করা শুরু করেছিলেন। 
 

710

বাবু গুজ্জর হত্যায় ক্ষেপে গিয়েছিল বেহমাই গ্রামের ঠাকুরদের ডাকাত দল। তারা ওই ঘটনার জন্য ফুলনকেই দায়ী করেছিল। এরপর ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছিল বিক্রম মাল্লাকে। সেইসঙ্গে অপহরণ করে ফুলনকে তুলে আনা হয়েছিল বেহমাই গ্রামে। শোনা যায়, পুরো নগ্ন করে দড়ি দিয়ে বেঁধে আনা হয়েছিল তাঁকে। পরের ৩ সপ্তাহ ধরে গণধর্ষণ করা হয়েছিল তাঁকে। এমনকী নগ্ন করে গ্রামের রাস্তায় হাঁটানোও হয়েছিল। 
 

810

ফুলন কোনওভাবে তাদের খপ্পর থেকে পালিয়েছিল। এরপর সে তার নিজের ডাকাত দল তৈরি করেছিল। কয়েক বছর পর তিনি আবার বেহমাই গ্রামে ফিরে এসেছিলেন। তারপর, যে ২২ জন তাঁকে বারেবারে ধর্ষণ করেছিল, তাদের এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পরই, ভয়ঙ্কর ডাকাত বলে পরিচিতি পেয়েছিলেন ফুলন। তাঁর নাম হয়েছিল 'দস্যু রানী'। 
 

910

এর পরের কয়েক বছরে তাঁর ডাকাত দল, ছিনতাই, ধনীর সন্তানদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের মতো বহু অপরাধ করেছিল। এর বেশ কয়েক বছর পর, ফুলন দেবী আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি জানতেন উত্তরপ্রদেশ পুলিশ তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে দেবে না, এনকাউন্টার করে দেবে। তাই ১৯৮৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যপ্রদেশের ভিন্দে, মধ্যপ্রদেশ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন তিনি।
 

1010

আত্মসমর্পণ ও সাজা ভোগ করার পর ফুলন দেবী রাজনীতিতে এসেছিলেন। সমাজবাদী পার্টির টিকিটে মির্জাপুর আসন থেকে জয়ী হয়ে সাংসদ হয়েছিলেন তিনি। তবে, তাঁর অতীত তাঁকে ছাড়েনি। ২০০১ সালের ২৫ জুলাই তাঁর বাড়ির সামনেই ফুলনকে গুলি করে হত্যা করেছিল শের সিং রানা। তাঁর কাহিনি রয়েছে বিদ্যুত জামওয়ালের ছবিতে।

click me!

Recommended Stories