জরুরি অবস্থার সময় ঘরে ঘরে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছিল 'নসবন্দি', নেপথ্যে নায়ক ছিলেন সঞ্জয় গান্ধী

১৯৭৫ সালের ২৫জুন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন৷ সমগ্র দেশে তার প্রভাব পড়েছিল ৷ কিন্তু তার থেকেও বেশি চর্চার কেন্দ্রে জায়গা করে নিয়েছিল নির্বীজকরণ৷ এমারজেন্সি রাজনীতির বাইরে জনগণের ব্যক্তিগত জীবনেও প্রবেশ করে সেইসময়৷ ঘরে ঘরে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়৷ তবে এই নির্বীজকরণের সিদ্ধান্ত ইন্দিরার সরকার নিলেও তা লাগু করার দায়িত্ব ছিল ছোট ছেলে সঞ্জয় গান্ধীর ওপর৷ আর জরুরি অবস্থার সময় অবারিত ক্ষমতা ছিল সঞ্জয়ের হাতে। 

Asianet News Bangla | Published : Jun 25, 2020 10:18 AM IST

112
জরুরি অবস্থার সময় ঘরে ঘরে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছিল 'নসবন্দি', নেপথ্যে  নায়ক ছিলেন সঞ্জয় গান্ধী

আশির দশকে কংগ্রেসে ইন্দিরার পরেই যার আধিপত্য ছিল দলের মধ্যে তিনি হলেন সঞ্জয় গান্ধী। একদিকে এর কারণ যেমন ছিল, তিনি ছিলেন ইন্দিরার ছোটপুত্র, তেমনি রাজনীতিতে সঞ্জয়ের দ্রুত উত্থানও সকলের নজর কেড়েছিল।

212

তবে সঞ্জয় গান্ধীর এদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি আলোচিত জরুরি অবস্থার সময় তাঁর ভূমিকার জন্যই। অনেকেই বলেন দেশে জরুরি অবস্থা জারির ক্ষেত্রে সঞ্জয়ের বড় ভূমিকা ছিল। বিশেষ করে নসবন্দির ক্ষেত্রে সঞ্জয় গান্ধীর ভূমিকা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 

312

১৯৭৫ সালের ২৫জুন দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এই সময়ে পরিবার পরিকল্পনা বাধ্যমামূলক করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। জোর করে নির্বীজকরণ, বন্ধ্যাকরণ, নাসবন্দির ঠেলায় মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছিল।

412

বিশ দফা কর্মসূচিকে জনপ্রিয় করে তোলা ও জনগণকে নিজের দিকে টেনে আনার জন্য ইন্দিরা গান্ধীর ভরসা ছিল ছোট ছেলে সঞ্জয় গান্ধীর ওপরেই। আর জরুরি অবস্থার সময় সঞ্জয় হয়ে উঠেছিলেন দণ্ডমুণ্ডের কর্তা 'সংবিধানবহির্ভূত' ক্ষমতার এক আধার।

512

জরুরি অবস্থার সময় গোটা দেশে ভয়ের পরিবেশ ছিল৷ নির্বিচারে ধরপাকড় আর গ্রেফতার চলছিল৷ তখন ইন্দিরা-পুত্র তথা প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় গান্ধী যে ভাবে জোর করে ‘পরিবার পরিকল্পনা’ বা গণ-নির্বীজকরণ কর্মসূচি রূপায়ণ করছিলেন, তাতে দেশজুড়ে, বিশেষত দিল্লি সহ উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে সাধারণ মানুষ ক্ষেপে গিয়েছিল।  এইসময় সংবিধানের দেওয়া ক্ষমতার বাইরে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ‘কর্তৃপক্ষ’ হয়ে উঠেছিলেন সঞ্জয়।

612

একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, সেসময় সমগ্র দেশে ৬০ লক্ষেরও বেশি নির্বীজকরণ হয়৷ এর মধ্যে ১৬ বছরের কিশোর থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধরাও ছিলেন৷

712

এভাবে জোড় করে দেশের মানুষরে নির্বীজকরণের  পরিণাম হয়েছিল ভয়ঙ্কর। শোনা যায়, সেই সময় ভুল অপারেশনের কারণে প্রায় ২ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন। 

812

ইন্দিরা জমানায় এই কর্মসূচি রাজনৈতিক ভাবে কংগ্রেসের খুব একটা ভাল হয়নি। বরং হাত পুড়েছিল। উত্তরপ্রদেশে ভোটের ময়দানে স্লোগান উঠেছিস, 'নসবন্দি কে তিন দালাল, ইন্দিরা-সঞ্জয়-বংশীলাল।'
 

912

১৯৩৩ সালে হিটালারের জার্মানিতেও নসবন্দি অভিযান চালু হয়েছিল। কিন্তু সেখানে আইন করা হয়েছিল, কোনও জিনগত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির নির্বীজকরণ করা যাবে। কিন্তু এদেশে ভ্যাসেকটমি জার্মানির থেকে ১৫ গুণ কড়া ভাবে প্রয়োগ করতে গেছিলেন সঞ্জয়। 
 

1012

সঞ্জয়ের  এই নসবন্দি কর্মসূচির পেছনে অবশ্য কয়েকটি কারণ ছিল। এর মধ্যে প্রথম কারণ,  অল্প সময়ের মধ্যে নিজেকে নেতা হিসাবে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন উচ্চাকাঙ্খী সঞ্জয়। দ্বিতীয়, পরিবার পরিকল্পনা কার্যকর করতে ছিল আন্তর্জাতিক চাপ। তৃতীয়ত, দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য পদ্ধতিগুলির কার্যকর না হওয়া। আর চতুর্থ তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, জরুরি অবস্থার কারণে অবারিত শক্তি পেয়ে যাওয়া। 

1112

১৯৭৫ সালের ২৫শে জুন দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর মোটামুটি বোঝা গিয়েছিল, এদেশে নেহেরু-গান্ধী পরিবারের উত্তরাধিকার সঞ্জয় গান্ধীর দ্বারাই পরিচালিত হবে। আর কম সময়ে নিজেকে দক্ষ প্রমাণ করতে নসবন্দিকেই কাজে লাগাতে গিয়েছিলেন সঞ্জয়। সেই সময় বৃক্ষরোপণ, পণ না নেওয়া ও শিক্ষার মতো বিষয়ে জোর দেওয়া হলেও সঞ্জয় মনে করেছিলেন যে তাঁর দ্রুত ক্যারিশমার ভিত্তি হতে পারে নসবন্দি।

1212

ইন্দিরা গান্ধীর সরকার বা আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে সঞ্জয় গান্ধী তখন ভাবেননি, সেই সময় নির্বীজকরণের ফল এতটা চরম হতে পারে।১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থার শেষে  হওয়া দেশের ষষ্ঠ লোকসভা নির্বাচনের হারতে হয়েছিল ইন্দিরাকে। যার অন্যতম কারণ হিসাবে এই নসবন্দিকেই দায়ি করা হয়।

Share this Photo Gallery
click me!
Recommended Photos