'অতীতের ভূত এখনও করছে তাড়া', ভারতকে ফের স্বাধীনতা দেবে কে, অপেক্ষায় 'দেশভাগের অনাথ'

Published : Aug 14, 2020, 11:52 PM ISTUpdated : Aug 19, 2020, 11:37 AM IST

শনিবারই ভারতের ৭৪তম স্বাধীনতা দিবস। তবে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার আনন্দ ঢাকা পড়ে গিয়েছিল দেশভাগের গ্লানিতে। এপাড়-ওইপাড়ের বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সাক্ষী এমন হাতো গোনা মানুষকেই এই ২০২০ সালে খুঁজে পাওয়া যায়। মীরাট-এর প্রবীণ রিক্সা চালক বিন্ত সিং, সেই রকমই একজন। নিজেকে বলেন দেশভাগের অনাথ। স্বাধীনতা লাভের পর ৭৪ বছর কেটে গেলেও ভারত এখনও অতিতের ভূতের হাতে বন্দি বলেই মনে করেন অশিতীপর এই বৃদ্ধ।

PREV
19
'অতীতের ভূত এখনও করছে তাড়া', ভারতকে ফের স্বাধীনতা দেবে কে, অপেক্ষায় 'দেশভাগের অনাথ'

৮৪ বছর বয়সে বিন্ত সিং-এর শরীর স্বাস্থ্য আর আগের মতো নেই। রক্তচাপ ওঠানামা করে, ফুসফুস আগের মতো হাওয়া টানতে পারে না, চোখেও ছানি পড়েছে। কিন্তু এখনও স্বাধীনতা দিবস এলেই মা ও আর ভাইয়ের রক্তাক্ত দেহ একেবারে তাজা হয়ে ওঠে মীরাটের এই সবচেয়ে বয়স্ক রিকশা স্মৃতিতে।

 

29

১৯৩৬ সালের কাশ্মীরে রাজা হরি সিং-এর শাসনকালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিন্ত সিং। অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং শিখদের উপর অত্যাচার শুরু হওয়ার আগেই কাশ্মীর থেকে তাঁর পরিবার পাড়ি দিয়েছিল রাওয়ালপিন্ডি শহরে। ১৯৪৭ সালে তাঁর যখন মাত্র এগারো বছর বয়স, সেই সময়ই ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু। আর সেই স্বাধীনতার অপ্রত্যাশিত মূল্য দিতে হয়েছিল তাঁকে। বাবা-মা, ভাইদের চোখের সামনে খুন হতে দেখেছিলেন তিনি।  

 

39

সৌভাগ্যক্রমে, তাঁর সঙ্গে দেখা হয়ে গিয়েছিল এক সৈনিকের। তিনিই ছোট্ট বিন্ত সিং-কে অমৃতসরের ট্রেনে তুলে দিয়েছিলেন। পাকিস্তান থেকে আসা বহু শরণার্থীর মতো তিনিও অমৃতসরে হাজির হয়েছিলেন। স্বাধীন ভারতীয় হিসাবে শুরু হয়েছিল তাঁর দ্বিতীয় জীবন ।

 

49

সেখান থেকে বিন্ত গিয়েছিলেন দিল্লিতে। কিন্তু, উদ্বাস্তু পরিবার এবং দাঙ্গায় বেঁচে যাওয়া মানুষদের ভিড়ে কোনও কাজ না পেয়ে তিনি ১৯৪৮ সালে চলে এসেছিলেন মীরাটে। সেখানে দেখা হয় তাঁর রাওয়ালপিন্ডি শহরের এক পুরনো সহপাঠীর সঙ্গে। দেশভাগের আগেই উত্তরপ্রদেশে চলে আসা সেই সহপাঠীর পরিবারই বিন্ত সিংকে আশ্রয় দিয়েছিল। তাঁকে রিকশাটিও কিনে দিয়েছিল তাঁরাই। ১৮ বছরের আগে লাইসেন্স না থাকায় তিনি রাতে রিক্সা টানতেন।

 

59

সেই ভয়ানক দিনগুলি কাটিয়ে এসেছেন প্রায় সাত দশক আগে। ৮৪ বছরের রিকশা চালক এখন সারা জীবনের সঞ্চয় খরচ করেই দিন গুজরান করেন। নেই কোনও পরিবার। তাঁর পরিবারের অন্য কোনও সদস্য যদি সীমান্তের ওইপারে কিংবা এইপারে কোথাও বেঁচেও থাকেন, তাঁদের সম্পর্কে তিনি কখনও জানতে পারেননি।

 

69

কিন্তু, তবে দেশভাগের ভূত আবার ভারতকে তাড়া করছে বলে মনে করছেন তিনি। তাই ভারত-কে আবার নতুন করে স্বাধীনতার লড়াই লড়তে হবে বলে মনে করেন এই প্রবীন। কারণ তাঁর মতে ভারত ১৯৪৭ সালের সেই ভয়াবহতা ভুলে গিয়েছে। তিনি বলেন এই স্বাধীন ভারতের জন্য তাঁর বাবা-মা-ভাইরা মৃত্যুবরণ করেননি। অতীতের ভূতের কাছে ভারত আজও পরাধীন।

79

বয়স বাড়লেও এখনও প্রতিদিন খবর, বর্তমান ঘটনাবলী নিয়ে নিয়মিত চর্চা করেন এই বর্ষীয়ান রিকশাচালক। কেন্দ্রীয় সরকারের পার্টিশনের অধ্যায় বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তই হোক, কিংবা ধর্মের নামে গণপিটুনি দিয়ে মানুষ হত্যার সাম্প্রতিক ঘটনাবলী - সবই তাঁকে খুবই কষ্ট দেয়।

89

তাঁর মতে তাঁর পূর্বপুরুষরা রক্তের মূল্য দিয়ে যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন তা আজ ঘৃণার কারণে নষ্ট হচ্ছে। বর্তমমান যুগের যুবকরা অধিকাংশই বিপথগামী বলে মনে করেন তিনি। তাঁর কাতর প্রশ্ন 'ওদের মনে এত ঘৃণা কেন? আমি ওদের ঘৃণার কোনও কারণ বুঝতে পারি না'। তবে এর পিছনে রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

 

99

বরাবর ভগত সিং, মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, সর্দার প্যাটেলদের ভক্ত বিন্ত সিং ছোটবেলায় রেডিও খুলে স্বাধীনতার খবর শুনতেন। আর এখন অবসর জীবনে বসে পুরানো রেকর্ডের গান শোনেন। যেটুকু চলাফেরা ছিল, করোনভাইরাস মহামারিতে তাও বন্ধ। এই অবস্থায় তিনি স্বপ্ন দেখেন এমন এক নেতা বা নেত্রী আসবেন, যাঁর অধীনে ভারত আবার দ্বিতীয় স্বাধীনতা পাবে। বৈচিত্রের ভিত্তিতে একত্রিত হবে ভারত। মুক্তি পাবে ঘৃণার হাত থেকে।

click me!

Recommended Stories