২০তম হত্যার মামলাতেও হল যাবজ্জীবন, সায়ানাইড মোহনের অস্ত্র ছিল গর্ভনিরোধক বড়ি

আরও একটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড হল মোহন কুমার ওরফে 'সায়ানাইড মোহন'-এর। একের পর এক মহিলাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে তাদের ধর্ষণ করা এবং সায়ানাইড বিষ ব্যবহার করে তাদের হত্যা করেছে এই সিরিয়াল কিলার। বুধবার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক ২০০৯ সালে কেরালের এক মহিলাকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিল। গত শনিবারই এই মামলায় ৫৭ বছর বয়সী মোহন কুমার-কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এই মামলাটিই তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলার শেষ মামলা ছিল।

 

amartya lahiri | Published : Jun 25, 2020 12:57 PM IST
110
২০তম হত্যার মামলাতেও হল যাবজ্জীবন, সায়ানাইড মোহনের অস্ত্র ছিল গর্ভনিরোধক বড়ি

সায়ানাইড মোহন এই হত্যা লীলা চালিয়েছিল ২০০৩ থেকে ২০০৯ - এই ছয় বছর ধরে। দক্ষিণ কর্নাটকের পাঁচ জেলার ছয় শহরে ওই সময়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল অন্তত কুড়ি জন তরুণীর। সকলেরই বয়স ছিল কুড়ি থেকে ত্রিশের মধ্যে। দেহ মিলত সাধারণত কোনও বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া শৌচাগারে। দরজা ভেঙে উদ্ধার করতে হত পুলিশদের, কারণ ভিতর থেকে আটকানো থাকত। প্রত্যেক তরুণীর গায়ে থাকত বিয়ের সাজ, কিন্তু থাকত না একটিও গয়না।

 

210

২০ টি ঘটনার মধ্যে এত মিল থাকা সত্ত্বেও দশটি থানার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে ৬ বছর ধরে পুলিশ ঘটনাগুলিকে একসূত্রে গাঁথার কথা ভাবেনি। কোনও মামলা ছিল 'অস্বাভাবিক মৃত্যু, কোনওটিকে বলা হত 'আত্মহত্যা'। দেহগুলির সনাক্তকরণ বা তাদের পরিবারের খানাতল্লাশ-ও করা হয়নি। কিন্তু ফরেনসিক টেস্টে সব ক্ষেত্রেই পটাশিয়াম সায়ানাইড বিষ মিলেছিল। আত্মহত্যার ক্ষেত্রে এই রাসায়নিকের ব্যবহার অস্বাভাবিক হলেও গা করেনি তদন্তকারীরা।

 

310

সায়ানাইড মোহন ধরা পড়েছিল তার উনিশতম হত্যার সূত্র ধরে। ২০০৯ সালের ১৬ জুন বান্তাওয়াল-এর বছর এক বাইশ বছরের তরুণী নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। তার নিখোঁজের ঘটনা নিয়ে খেপে উছেছিল গোটা বাঙ্গেরা সম্প্রদায়। পরিবারের অভিযোগ ছিল, ভিন সম্প্রদায়ের এক যুবক তাঁকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে গিয়েছে। বাঙ্গেরা সম্প্রদায়ের প্রায় দেড়শো মানুষ বান্তাওয়াল থানা ঘেরাও করেছিল। থানা জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। চাপের মুখে নড়ে চড়ে বসেছিল পুলিশ।

410

ওই তরুণীর বাড়ির ল্যান্ডলাইনের কললিস্ট পরীক্ষা করে পাওয়া গিয়েছিল একটি বিশেষ ফোন নম্বর। সেই নম্বরটি ছিল আরেক নিখোঁজ তরুণীর। তাঁর কল লিস্ট ঘেঁটে মেলে আরেক নিখোঁজ তরুণীর নম্বর। এইভাবে সূত্রাকারে বেশ কয়েকজন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ তরুণীর নম্বর পেয়েছিল পুলিশ।

 

510

বান্তাওয়াল থানার পুলিশ দেখেছিল প্রতিটি নম্বরই কোনও না কোনও সময় মেঙ্গালুরুর দেরালাকাত্তে নামে এক গ্রাম সক্রিয় ছিল। পুলিশ মনে করেছিল, তারা কোনও নারী পাচার চক্র বা মধুচক্রের খোঁজ পাবে। সেই গ্রামে গিয়ে হোটেল, লজে তল্লাশি চালানোর সময়ই পুলিশের হাতে থাকা নম্বরগুলির একটি কয়েক মিনিটের জন্য সক্রিয় হয়েছিল ওই গ্রামেই। সেই সূত্র ধরে পুলিশ রেয়েছিল ধনুষ নামে এক কিশোর-কের। ধনুষ পুলিশকে জানিয়েছিল ফোনটা তার কাকা মোহন কুমার-এর।

 

610

এরপর মোহন কুমারের ফোন ট্যাপ করে দেখা গিয়েছিল বান্তাওয়াল-এরই আরেক তরুণীকে ফাঁসানোর মতলব করছে সে। সেই তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ করে মোহন কুমারের জন্য ফাঁদ পেতেছিল পুলিশ। আর তাতেই পা দিয়েছিল সায়ানাইড মোহন। জেরায় মোহন কুমার জানিয়েছিল তার শিকারের সংখ্যা অন্তত ৩২। কিন্তু, পুলিশ এই ২০টি হত্যা ছাড়া আর কোনও মামলার প্রমাণ জোগার করতে পারেনি।

 

710

অসচ্ছল পরিবারের বিয়ে করতে মরিয়া তরুণীদেরই নিশানা করত মোহন। প্রথমে প্রেমের অভিনয় তারপর বিয়ের প্রতিশ্রুতি। বাড়ি থেকে পালানো তরুণীদের হোটেলে নিয়ে  গিয়ে সারারাত চলত যৌনতা। তাদের ঋতুচক্রের দিন জেনে নিয়ে সেই মতো এগোত সে। তরুণীদের মনে অবাঞ্ছিত গর্ভাবস্থার ভয় ধরানোটা তাঁর পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।

 

810

পরদিন সকালে কৌশলে তরুণীদের গয়নাগাটি হোটেলেই রেখে দিতে বাধ্য করত। তারপর তাদের বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে গিয়ে সায়ানাইডে চোবানো গর্ভনিরোধক বড়ি দিত। শৌচাগারে গিয়ে সেটি খেতে গিয়েই প্রাণ যেত তরুণীদের। আর সে চম্পট দিত গয়না নিয়ে। আব্দুল সালাম নামে এক রাসায়নিক বিক্রেতার কাছ সায়ানাইড কিনত। তাকে বলেছিল সোনার গয়না পালিশ করার জন্য সায়ানাইড নেয়।

 

910

সযত্নে আঁচড়ানো চুল, বুকপকেটে কলম আর নোটবুক - এজলাসে তাকে দেখে ঠান্ডা মাথার খুনি নয় মনে হয় অধ্যাপক। বিচারক ও আইনজীবীদের কথার নোট নিত সে। মেঙ্গালুরুর এক গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিল। সেই স্কুলের ছাত্রী মেরিই ছিলেন মোহনের প্রথম স্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ডিভোর্সের পর মঞ্জুলা নামে আরেকজনকে বিয়ে করেছিল মোহন। দুই ছেলের জন্মের পর মঞ্জুলার সঙ্গেও ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর বিয়ে করেন শ্রীদেবী নামে আরেক মহিলাকে। তাদেরও এক ছেলে ও এক মেয়ে হয়েছিল। কিন্তু, মোহন-কে জেলে দেখতে গিয়েই শ্রীদেবী প্রেমে পড়ে মোহন-এর এক সহবন্দির সঙ্গে। আপাতত সে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তার সঙ্গেই নতুন করে সংসার বেঁধেছেন মোহনের তৃতীয় স্ত্রী।

1010

পাঁচটি মামলায় তাঁর মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি মামলাগুলিতে তার যাবজ্জীবন কারাবাস হয়েছে। পাঁচটি মৃত্যুদণ্ডের মধ্যে দুটি ক্ষেত্রে সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। তবে এই ভয়ানক সিরিয়াল কিলার এখনও স্মিত হেসে দাবি করে সে নির্দোষ। তাঁর দাবি তিনি বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় আত্মঘাতী হয়েছেন ওই তরুণীরা। প্রত্যেকের মৃত্যুর পরই প্রাক্তন 'প্রেমিকা'দের জন্য তাঁর খুব দুঃখও হত। কিন্তু দিন কয়েক পর আবার নতুন কোনও 'প্রেমিকা' পেয়ে গেলে সব ভুলে যেত। আর বিয়ে না করার কারণ? সায়ানাইড মোহনের দাবি, দ্বিতীয় আর তৃতীয় স্ত্রীকে সামলাতে গিয়ে সে বিয়ের ইচ্ছে হারিয়ে ফেলেছিল।

 

Share this Photo Gallery
click me!

Latest Videos