হাথরসের সঙ্গে বাংলার যোগ ১৩২ বছর আগে, সেখান থেকেই বিবেকানন্দ পেয়েছিলেন 'অমূল্য রতন'
হাথরস ধর্ষণকাণ্ডের অনেক অনেক আগে থেকেই বাঙালির যোগ রয়েছে উত্তর প্রদেশের প্রত্যন্ত এই এলাকাটির সঙ্গে। আজ থেকে প্রায় ১৩২ বছর আগে উত্তর প্রদেশের এই হাথরসের স্বামী বিবেকান্দ খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁর প্রিয় শিষ্য সদানন্দকে।
Asianet News Bangla | Published : Oct 5, 2020 12:06 PM IST / Updated: Oct 05 2020, 05:38 PM IST
সালটা ছিল ১৮৮৮। সেটাও ছিল সেপ্টেম্বর মাস। সেই সময় উত্তর প্রদেশের হাথরসে পা পড়েছিল স্বামী বিবেকানন্দের। বৃন্দাবন থেকে হরিদ্বার যাওয়ার কথা তাঁর। আর সেই রেল পথেই হাথরস জংশং।
ব্রিটিশ আমলের সেই হাথরস জংশনেই বসেছিলে স্বামী বিবেকানন্দ। পথশ্রম আর দীর্ঘ অনাহারে ক্লান্ত ছিলেন বিবেকানন্দ। স্টেশনে গেরুয়াবসনধারী এক সন্নাস্যীকে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে এসেছিলেন অ্যাসিসটেন্ট স্টেশন মাস্টার শরৎ গুপ্ত। তখন স্বামীজী ২৫ আর শরতের বয়স ছিল ২৩। স্বামীজীর সঙ্গে কথা বলে সম্মোহিতে হয়ে যান শরৎ।
হাথরস স্টেশনে সেই আলাপ। তারপর তাঁদের বন্ধন দীর্ঘদিন পরেও বিচ্ছিন্ন হয়নি। কারণ বিবেকানন্দকে স্টেশনে বসে থাকতে দেখে সেখানে থেকে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন শরৎ। তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে রাজি হয়ে যান বিবেকানন্দ। তারপর তিনি যখন আবারও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়তে চাইলেন তখন শরৎ গুপ্তও তাঁর সঙ্গে যাওয়ার বায়না ধরেন।
স্টেশনের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে অ্যাসিস্টেন্ট স্টেশন মাস্টার সন্নাসীর পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। চলে যায় হৃষিকেশে। সেখানে গিয়ে তিনি স্বামীজীর সান্নিধ্যে এসে তিনি অনুভব করেন সন্নাসী জীবন কতটা কঠোর। কিন্তু তারপরে হাথরসের বাড়িতে ফিরে আসার পরেও আর সংসারে মন টেকেনি তাঁর। কিছু দিন পরেই হাথরস থেকে চলে আসেন কলকাতায়।
গড়পারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শরৎ গুপ্ত। কিন্তু ছেলেবেলায় পরিবারের সঙ্গে চলে গিয়েছিলেন কাশী। তারপর সেখানেই বেড়ে ওঠা। কিন্তু যেসময় তাঁর শিষ্যত্ম গ্রহণ সেই সময় বিবেকান্দ শিকাগো ধর্মসভায় জয় করে এসেছেন। আর অন্যদিকে কলকাতায় থাবা বসিয়েছে প্লেগ মহামারি।
১৮৯৮ সালে কলকাতায় থাবা বসিয়েছিল মারণ প্লেগ। আর সেই সময় স্বামী বিবেকানন্দ দলবল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন আর্তের সেবায়। দিনভুলে তিনি সেবা করেযাচ্ছিলেন। আর তাঁর পাশে পেয়েছিলেন শরৎ গুপ্ত। ততদিন সন্ন্যাস নিয়ে নাম বদল করে তিনি হয়েগেছে সদানন্দ মহারাজ। স্বামীজীর পাশে দাঁড়িয়ে নিবেদিতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছিলেন তিনি।
রামকৃষ্ণ মিশনের থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায় সেই সময় প্লেগ রোগ মোকাবিলায় বিবৃতি প্রকাশ থেকে বস্তি এলাকায় সাফাই অভিযান সবেতেই অগ্রনী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন সদানন্দ মহারাজ। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে আর্তের সেবা করেগিয়েছিলেন তিনি।
বিবেকান্দ একশো বছর আগে যে হাথরস থেকে সদান্দকে আবিষ্কার করেছিলে বর্তমানে সেই হাথরসেই নির্যাতিতা কন্যার দেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পরিবারের বিনা অনুমতিতে। বাড়ির মৃত মেয়েটি শেষবারের মত পা রাখতে পারেনি তাঁর উঠানে। মায়ের চোখের জলে রাস্তা ভিজলেও পুলিশ কোনও রকম দয়া মায়া দেখায়নি। রাতের অন্ধকারেই হিন্দু রীতিনীতির পরোয়া না করেই জ্বালিয়ে দোয়া গয়েছিল ১৯ বছরের তরুনী নির্যাতিতার দেহ।