'পাকিস্তানই ট্রেনিং দিচ্ছে তালিবানদের' - দেশ ছেড়েই বিস্ফোরক আফগান মহিলা পপ তারকা, দেখুন

আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় মহিলা পপ তারকা আরিয়ানা সঈদ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ৩৬ বছরের জীবনে তিনি বহু ট্যাবু ভেঙেছেন। কাজেই, তালিবানদের অন্যতম নিশানা ছিলেন তিনি। তবে, তালিবানরা কাবুল শহর দখল করার পর, গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার, অর্থাৎ, ১৯ অগাস্ট,  তিনি দেশ ছেড়ে কাতারের দোহা হয়ে তুরস্কে পালিয়ে গিয়েছেন। সেই সময়ই তিনি বলেছিলেন, অবিশ্বাস  এবং ধাক্কার জগত থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার পর, তিনি অনেক গল্প শেয়ার করবেন। মঙ্গলবার সংবাদ সংস্থা এআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে এই আফগান মহিলা পপ তারকা আফগানিস্তানে তালিবানদের পুনরুত্থানের জন্য সরাসরি পাকিস্তানকেই দায়ি করলেন, সেইসঙ্গে আমেরিকা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, ভারত - মুখ খুললেন অনেক বিষয়ে - 
 

amartya lahiri | Published : Aug 24, 2021 11:18 AM IST / Updated: Aug 24 2021, 04:49 PM IST

112
'পাকিস্তানই ট্রেনিং দিচ্ছে তালিবানদের' - দেশ ছেড়েই বিস্ফোরক আফগান মহিলা পপ তারকা, দেখুন

আরিয়ানা সইদ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, 'পাকিস্তানের কারণেই আমরা আফগানিস্তানের এই সমস্ত সমস্যার মোকাবিলা করছি। আমরা সবাই জানি এখনও পর্যন্ত তালিবানদের অর্থায়ন করে যাচ্ছে পাকিস্তান।' তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, তালিবানরা তাঁর দেশ দখলে নেওয়ার পর, এবার অন্তত আন্তর্জাতিক মহল এই বিষয়ে পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি করবে। তিনি আবেদন করেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন পাকিস্তানকে আর কোনও তহবিল না দেওয়া হয়। তাহলেই তালেবানদের অর্থায়নের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ পাবে না ইসলামাবাদ।
 

212

আরিয়ানা আরও অভিযোগ করেছেন, পাকিস্তানে তালিবান যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেছেন, পাকিস্তান তালিবানদের কী করতে হবে, সেইসব নির্দেশও দিচ্ছে। তালিবানদের ঘাঁটিও পাকিস্তানেই, সেখানেই তারা প্রশিক্ষণ পায়। আফগান সরকার যখনই কোনও তালিব যোদ্ধাকে ধরত, তার পরিচয় দেখা যেত সে একজন পাকিস্তানি। কাজেই, তালিবানদের পুনরুত্থানের পিছনে পাকিস্তানের ভূমিকা খুবই স্পষ্ট। 

312

আরিয়ানা আরও জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মহলের ভূমিকা নিয়ে তিনি 'সত্যিই হতাশ'। কারণ, আফগানিস্তানকে সকলে একা রেখে দিয়েছে। তালিবানরা কয়েক দিনের মধ্যেই পুরো আফগানিস্তান দখল করে নিয়েছে, তারা সকলে বসে বসে দেখেছেন। এটা তাঁর কাছে একেবারে 'অবিশ্বাস্য' মনে হয়েছে। 

412

আফগানিস্তানে দুই দশক কাটিয়ে, হঠাৎ করে সৈন্য প্রত্যাহহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও আক্রমণ করেছেন আফগান পপ তারকা। তিনি বলেছেন, আফগানিস্তানে হামলার আগে বিদেশি শক্তিগুলো বলেছিল, এই যুদ্ধের উদ্দেশ্য, আল-কায়েদা এবং তালেবানদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া। ২০ বছর সেখানে থেকে, লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করে, হঠাৎ করে তারা আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরিয়ানা সইদ বলেছেন, 'এটা খুবই মর্মান্তিক'।

512

আফগানদের সাহায্য করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন করেছেন এই পপ তারকা। তাঁর আশা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আফগানিস্তানকে ভুলে যাবে না, আফগান নাগরিকদের ভুলে যাবে। কারণ তাদের কোনও দোষ নেই। তারা এখন যে দুর্দশার মধ্যে বাস করছে, আফগানিস্তানের লক্ষ লক্ষ নর-নারী শিশুরা যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তা তাদের প্রাপ্য নয়। 
 

612

পাকিস্তান, আমেরিকা, আন্তর্জাতিক মহল - সকলকে আক্রমণ করলেও একটি দেশকেই আরিয়ানা সইদ মন খুলে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, সেই দেশ হল ভারত। তিনি বলেছেন, 'পুরো আফগানিস্তানের পক্ষ থেকে, আমি ভারতকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।  কয়েক বছর ধরে আমরা বুঝতে পেরেছি যে আমাদের প্রতিবেশীদের মধ্যে একমাত্র ভাল বন্ধু হল ভারত'। ভারতকে তিনি আফগানদের 'সত্যিকারের বন্ধু'ও বলেছেন। উল্লেখ করেছেন আফগান শরণার্থীদের প্রতি ভারতের সহায়তা, দয়ালু মনোভাবের কথা। তিনি আরও জানিয়েছেন, জীবনে যতজন আফগানের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন, যারা একসময় ভারতে ছিল, তারা প্রত্যেকেই ভারতীয়দের দারুণ প্রশংসা করেছেন। 

712

১৫ অগাস্ট, তালিবানরা কাবুল দখল করে নেওয়ার পর তেকে খোঁজ মিলছিল না আরিয়ানা সইদের। এরপর, ১৯ অগাস্ট তিনি তাঁর ভক্তদের আশ্বস্ত করে সোশ্য়াল মিডিয়ায় জানিয়েছিলেন, 'আমি ভালো আছি, বেঁচে আছি এবং কয়েকটি অবিস্মরণীয় রাতের পর আমি কাতারের দোহায় পৌঁছেছি। ইস্তাম্বুল ফেরার জন্য শেষ ফ্লাইটের অপেক্ষায় আছি।' এক মার্কিন কার্গো জেট বিমানে তিনি দেশ ছেড়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। মাধ্যমে চলে গেছেন।

812

আপাতত তিনি তুরস্কে আছেন। ইস্তানবুলে তাঁর নিজের বাড়ি রয়েছে। সেখানেই থাকেন আরিয়ানার স্বামী তথা খ্য়াতনামা আফগান সঙ্গীত প্রযোজক হাসিব সইদ। নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরার পরও তাঁর মনে আবেগ, অবিশ্বাস, ধাক্কার চালমাটাল অবস্থা কাটেনি বলে নিউইয়র্ক পোস্ট জানিয়েছেন তিনি। 

912

আরিয়ানা সইদ বেশিরভাগ গানই করেন ফারসি-দারি ভাষায়। তবে পশতু ভাষাতেও তাঁর অনেক গান রয়েছে। ২০০৮ সালে তাঁর প্রথম সিঙ্গলস 'মাশাল্লা' প্রকাশিত হয়েছিল। আফগানিস্তানের ভিতরে, বাইরে বিভিন্ন দেশে কনসার্ট এবং জনহিতকর উৎসবে নিয়মিত গান পরিবেশন করেন তিনি। একাধিক মিউজিক্যাল টেলিভিশন শোতে তিনি হোস্টের ভূমিকাও পালন করেছেন। তালিবানদের পুনরুত্থানের মাত্র কয়েকদিন আগে পর্যন্তও তিনি এক আফগান সঙ্গীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে বিচারক ছিলেন।  

1012

১৯৮৫ সালে কাবুলেই জন্ম হয়েছিল আরিয়ানার।  তার যখন ৮ বছর বয়স, তার বাবা -মা আফগানিস্তান ছেড়ে প্রথমে পাকিস্তানের পেশোয়ারে চলে গিয়েছিলেন, পরে পাকাপাকিভাবে সুইজারল্যান্ডে বসতি স্থাপন করেন। ২০০৮ সালে গান জগতে আসলেও ২০১১ সালে তাঁর গাওয়া আফগান পেসারাক তাঁকে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে দেয়। এরপরই তিনি সকলকে অবাক করে ফিরে এসেছিলেন তাঁর যুদ্ধবিধ্বস্ত জন্মভূমি আফগানিস্তানে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে অনুষ্ঠান করা শুরু করেন।  

1112

এই অসম সাহসী পপ তারকা ২০১৫ সালে একইসঙ্গে তিনটি তালিবানি নিষেধাজ্ঞা ভেঙে দিয়েছিলেন। গান গেয়েছিলেন আফগানিস্তানের এক স্টেডিয়ামে। প্রথমত, একজন মহিলা হিসেবে গান গেয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, তাঁর মাথা ঢাকা ছিল না বোরখা বা হিজাবে। তৃতীয়ত, একজন মহিলা হিসেবে প্রবেশ করেছিলেন স্টেডিয়ামে। এই তিনটিই তালিবানি শাসনকালে একেবারে নিষিদ্ধ ছিল। 

1212

আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তালিবানরা, তাদের প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিল, 'ইসলামী আইনের কাঠামোর মধ্যে নারীদের অধিকারকে সম্মান করা হবে।' কিন্তু গত কয়েকদিনের ঘটনাক্রম বলছে, তা ছিল শুধুই মুকের কথা। আফগানিস্তানের বেশ কয়েকজন মহিলা সাংবাদিক বলেছেন, তাদের কাজ করতে বাধা দিচ্ছে তালিবান যোদ্ধারা। গত সপ্তাহের বুধবার গ্রেফতার করা হয়েছে হাজারা জেলার গভর্নর সালিমা মাজারি-কে। প্রকাশ্যে তালিবানদের সমালোচনা করেছিলেন তিনি। তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে। ইতিমধ্যেই পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে হত্য়া করা হয়েছে এক আফগান জাতীয় সেনাবাহিনীর মহিলা পাইলটকে। এমনকী রান্না খারাপ করা জন্য হেরাত প্রদেশে এক মহিলাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে, এমন খবরও পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের তুলে আনা, তাদের যৌনদাসী হিসাবে পাকিস্তানে পাচার করার মতো অভিযোগও রয়েছে। এই অবস্থায় আরিয়ানা সইদের মতো ব্যতিক্রমী মহিলাদের জন্য আফগানিস্তানের মাটি এখন একেবারএই নিরাপদ নয়। 

Share this Photo Gallery
click me!
Recommended Photos