নন্দরাম-স্টিফেন কোর্ট-আমরি-বাগরি থেকে স্ট্যান্ড রোড, জানুন কলকাতায় বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ইতিহাস

কখনও নন্দরাম মার্কেট, কখনও আবার স্টিফেন কোর্ট, আমরি, বাগরি। বিগত বছরগুলিতে কলকাতার বুকে ঘটেছে একাধিক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এবার স্ট্যান্ড রোডে রেলের দফতরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যু হল ১০ জনের। আর প্রতিবারের মতই শহরের বড় অগ্নিকাণ্ড নিয়ে শুরু হয়েছে শাসক-বিরোধী তরজা। গঠিত হয়েথে তদন্ত কমিটিও। এখ ঝলকে দেখে নেওয়া যাক কলকাতার বুকে কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ডের ইতিহাস। 
 

Sudip Paul | Published : Mar 9, 2021 11:57 AM IST

110
নন্দরাম-স্টিফেন কোর্ট-আমরি-বাগরি থেকে স্ট্যান্ড রোড, জানুন কলকাতায় বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ইতিহাস
সত্যনারায়ণ পার্ক অগ্নিকাণ্ড- ২০০৩ সালের ২২শে এপ্রিল৷ আগুন লাগে বড়বাজারের সত্যনারায়ণ পার্কের ভূগর্ভস্থ মার্কেটে৷ ভোর পৌনে পাঁচটা নাগাদ আগুন দেখতে পান স্থানীয়রা৷ আগুনের কালো ধোঁয়ায় মার্কেটের চারদিক ঢেকে যায়৷ গ্যাস কাটার দিয়ে ভাঙা হয় মার্কেটের দরজা৷ দমকলের ২৩টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও প্রাথমিকভাবে তারা কাজ শুরু করতে পারেনি৷ প্রায় রাতভর আগুন জ্বলার ফলে সত্যনারায়ণ পার্কের বেসমেন্ট অত্যন্ত উত্তপ্ত ছিল৷ পরে জল দিয়ে ঠাণ্ডা করা হয়। ভেতরে প্রবেশ করে দমকল কর্মীরা৷ দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে৷ তবে মাঝরাতে আগুন লাগায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি৷ ক্ষতি হয় প্রায় কোটি টাকার৷
210
নন্দরাম মার্কেট অগ্নিকাণ্ড- ২০০৮-এর ১২ জানুয়ারি শীতের রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে নন্দগ্রাম মার্কেটে। রাত একটা নাগাদ নন্দরাম মার্কেটের ত্রিপল পট্টিতে প্রথম আগুনের লেলিহান শিখা চোখে পড়ে স্থানীয়দের৷ মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে মার্কেটের সর্বত্র৷ দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে আগুন৷ দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুনের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়৷ রাতভর দমকলের ৪২টি ইঞ্জিন এক নাগাড়ে কাজ চালিয়ে যায়৷ তবুও বাধ মানেনি আগুন৷ একদিন বা দু’দিন নয়৷ আগুন জ্বলতে থাকে টানা পাঁচ দিন৷ কলকাতার ইতিহাসে এত দীর্ঘ সময় ধরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এর আগে ঘটেনি৷
310
স্টিফেন কোর্ট অগ্নিকাণ্ড- ২০১০ সালের ২৩ মার্চ৷ সোমবার। দুপুর তখন প্রায় আড়াইটে৷ শহরের প্রাণকেন্দ্র পার্ক স্টিটের স্টিফেন কোর্ট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে৷ প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই পালিয়ে যায়, কেউবা আবার প্রাণে বাঁচতে ঝাঁপ মারছে জ্বলতে থাকা বাড়ির উপর থেকে৷ ছাদের দরজা তালা বন্ধ হওয়ায় বহু মানুষ আটকে পড়েন৷ মৃত্যু হয় ১১ জনের৷ সব মিলিয়ে স্টিফেন কোর্টে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায় ৪৩জন৷ পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী ওই বাড়ির উপরের অংশের আইনি বৈধতা ছিল না৷ মহানগরের এই ঘটনা স্থান পেয়েছিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও৷
410
আমরি হাসপাতাল অগ্নিকাণ্ড- ২০১১ সালের ৯ই ডিসেম্বর৷ শীতের ভোরেই আগুন লাগে সেন্ট্রালি এসি ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে৷ স্থানীয়রা এই আগুন দেখে ছুটে যান হাসপাতালে৷ অভিযোগ ঢুকতে দেওয়া হয়নি তাদের৷ পরে আগুনের ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালের মধ্যে৷ চরম বিপদে পড়েন হাসপাতালে ভরতি রোগীরা৷ দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ৭৩ জনের৷ বেঁচে তাকা বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করেন দমকল কর্মীরা৷ এই ভয়াবহ ঘটনার পর প্রশ্ন উঠে যায় হাসপাতালের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েই৷য
510
হাতিবাগান বাজার অগ্নিকাণ্ড- উত্তর কলকাতার ব্যস্ত হাতিবাগান বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে দু’বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে৷ প্রথমটি-২০১৩ সালের ২২সে মার্চ৷ ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ আগুন লাগে৷ ফল পট্টি থেকে আগুন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে বাজারের সর্বত্র৷ ভস্মীভূত হয়ে যায় আলুপট্টি, চালপট্টি, সবজিপট্টি, শাড়িপট্টি, ফুলপট্টি, তেলপট্টি, মাছপট্টি, বাসনপট্টির দোকানগুলি। আগুনের ভয়াবহতা ক্রমশ বাড়তে থাকে৷ ঘটনাস্থলে যায় দমকলের ১০টি ইঞ্জিন৷ প্রায় সাত ঘণ্টার চেষ্টার নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন৷
610
হাতিবাগান বাজার অগ্নিকাণ্ড- দু’বছরের মাথায় ২০১৫ সালের ১৩ই অগষ্ট ফের আগুন লাগে হাতিবাগান বাজারে৷ রাত প্রায় ১০টা নাগাদ হাঠাৎই দেখা যায় বন্ধ হাতিবাগান বাজারের সেন্ট্রাল গেটের পাশে একটি পোশাকের দোকানের ভিতর থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে৷ কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়ে৷ পরে দোকানের শাটার ভেঙে আগুন নেভানো হয়৷
710
বাগরি মার্কেট অগ্নিকাণ্ড- ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ আগুন লাগে বাগরি মার্কেটে। গভীর রাতে মার্কেটের একাংশে আগুন লাগে। এরপর ধীরে ধীরে গোটা বাড়ি আগুনের গ্রাসে চলে যায়। প্রায় দুদিন ধরে জ্বলে আগুন। দমকলের ৩৫টি ইঞ্জিন কাজ দীর্ঘ সময়ের প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে এসেছিল আগুন। সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায় সব দোকান। কোটিকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে। করলেও প্রাথমিকভাবে আগুনকে আয়ত্তে আনতে রীতিমত হিমশিম খেতে হয় দমকলকে।
810
বাগবাজার হাজার বস্তি অগ্নিকাণ্ড- চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বাগবাজার ব্রিজের কাছে বস্তিতে আগুন লাগে। উত্তুরে হাওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফলে অল্র কিছুক্ষণেই পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এক ঘন্টার মধ্যেই বস্তির সম্পূর্ণ অংশ পুড়ে যায়। এই বস্তির পাশেই সারদা মায়ের বাড়ির অফিস ঘরেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পুড়ে যায় অফিসের আসবাবপত্র। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় গোটা এলাকা। একের পর এক সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। যার ফলে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। পরে দমকলের ২৭টি ইঞ্জিনের দীর্ঘ ক্ষণ প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
910

স্ট্যান্ড রোডে রেলের দফতরে অগ্নিকাণ্ড-
৮ মার্চ, ২০২১ আগুন লাগে স্ট্র্যান্ড রোডে পূর্ব রেলের নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ে। মুহূর্তের মধ্যে বিধ্বংসী চেহারা নেয় আগুন। ১৩ তলা পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায়। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্য হয়েছ। মৃতদের তালিকায় রেলের ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার পার্থসারথি মণ্ডল, দমকলের চার কর্মী, পুলিশের এক অফিসার এবং আরপিএফ-এর জওয়ান সহ ৩ জন রয়েছেন।

1010

ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ চাকা করে ক্ষতিপূরণ ও চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। ক্ষতিরপূরণ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকারও। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও। ইতিমধ্যেই মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তৈরি হয়েছে তদন্ত কমিটিও। 

Share this Photo Gallery
click me!
Recommended Photos