কলকাতা পুলিশের মহিলা বাহিনী উইনার্স, তাদের রাতের অভিযানে গ্রেফতার হল ৭০ জন
হায়দরাবাদের গণধর্ষণ এবং পুড়িয়ে মারার ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই কলকাতায় নারী সুরক্ষায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে কলকাতা পুলিশের প্রমীলা বাহিনী উইনার্স-কে পুরোদমে টহলদারিতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বাহিনীর সদস্যরা চষে ফেলছেন কলকাতার যত্রতত্র। কোথাও কোনও বেগতিক দেখলেই আটক করা হচ্ছে সন্দেহভাজনদের। শুক্রবারও মাঝরাতে এই প্রমীলা বাহিনীকে কলকাতার রাস্তায় নামানো হয়। এই বিশেষ টহলদারিতে উইনার্স ৭০ জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে।
Asianet News Bangla | Published : Dec 7, 2019 2:58 PM IST / Updated: Dec 07 2019, 08:49 PM IST
হায়দরাবাদের ঘটনার জেরে শুক্রবার রাতে অভিযান চালাল উইনার্স। মাঝরাতে কলকাতার রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিল প্রমীলা বাহিনী। একাধিক দলে বিভিক্ত হয়ে রাতভর টহল দেয় এই বাহিনী।
রাতের এই অভিযানে উইনার্সের মূল টার্গেট-ই ছিল ইভটিজারদের দল। কড়া নজরদারি ছিল মোটরবাইক চালকদের উপরে। কারণ, মেয়েদের কটূক্তি করে নিমেষে মোটরবাইককে নিয়ে হাওয়া হয়ে যায় এই দূর্বৃত্তদের দল।
একাধিক দলে বিভক্ত হয় উইনার্স। রাতভর কলকাতার একাধিক রাস্তায় চলে টহলদারি। বিভিন্নস্থানেই দেখা যায় মহিলাদের উদ্দেশে উড়ে আসছে নানা কটূক্তি।
এদের পত্রপাট ধরতে দেরি করেনি উইনার্স। এই বিশেষ অভিযানে মোট ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের বেশিরভাগই রাতের কলকাতায় মহিলাদের উদ্দেশে কটূক্তি করছিল।
রাতভরের এই তল্লাশি অভিযানে উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার সম্ভাব্য সমস্যাজনক এলাকাগুলিতে যায় উইনার্স। এতে মোট ৫০টি মোটরসাইকেল আটক করা হয়েছে।
মাঝে মাঝে-ই এই ধরনের অভিযান করে থাকে উইনার্স। এদের সহযোগিতা করে থাকে কলকাতা পুলিশের গুন্ডাদমন শাখা এবং স্থানীয় থানা।
কলকাতা পুলিশের এই প্রমীলা বিগ্রেডের সঙ্গে অভিনেত্রী প্রিয়ঙ্কা সরকার। পোশাক ও প্রশিক্ষণে বিশেষ প্রশিক্ষিত করা হয়েছে উইনার্স-এর সদস্যদের। নারী সুরক্ষায় এই বাহিনী বিশেষ কৌশলের অধিকারী। যা শুধুমাত্র এই বাহিনীকে রপ্ত করানো হয়েছে।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে উইনার্স। কলকাতা পুলিশের অন্য বাহিনীর কাজ এবং কৌশলের থেকে এই বাহিনীর অপরাধ দমনের কৌশলটা ভিন্ন। বলতে গেলে নারী কেন্দ্রীক সুরক্ষা-কে মাথায় রেখেই এই বাহিনীর জন্য রাখা হয়েছিল বিশেষ ব্যবস্থা।
দ্য উইনার্স। দুর্গাপুজোর ভিড়ে নারী সুরক্ষায় এই বাহিনী খুবই কার্যকর হয়েছিল। ভিড়ের মধ্যে মহিলাদের প্রায়ই নানা ধরনের অবাঞ্চিত ঘটনার সামনে পড়তে হয়। উইনার্স-এর দৌলতে এইসব ঘটনার পিছনে থাকারা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল।
কেক কাটছে দ্য উইনার্স। অপরাধ দেখলেই এই বাহিনী এতটাই তৎপর যে মুহূর্তের মধ্যে তারা অভিযুক্তদের ধরে ফেলে।
কলকাতা পুলিশে কর্মরত আইপিএস অপরাজিতা রায়ড-এর মস্তিষ্কপ্রসূত এই প্রমীলা বাহিনী। বিভিন্ন পার্ক থেকে শুরু করে শপিং মলে যেভাবে মহিলাদের শ্লীলতাহানির সম্মুখিন হতে হয় তার জন্য একটা কুইক রেসপন্স টিম তৈরি করতে চেয়েছিলেন অপরাজিতা। আর সেখান থেকেই জন্ম উইনার্স-এর।
জন্মের দেড় বছরের মধ্যেই কলকাতার মহিলাদের কাছের জন্য বলে পরিচিতি তৈরি করে নিয়েছে উইনার্স। সাধারণত এক একটি দলে ৮ জন করে ভাগ হয়ে গিয়ে নারী সুরক্ষার কাজ করে থাকে এই বাহিনী।
কলকাতা পুলিশও উইনার্স-কে নিয়ে তৈরি করেছে বিশেষ ভিডিও। সেখানে তারাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে এই বাহিনী শুধু একটা নিরাপত্তা দেওয়া বাহিনী নয়। এদের মানসিকতা এবং স্মার্টনেস যে কোনও অপরাধীকে ভয় ধরাবে। এরা বাইকে করে শহর চষে অপরাধের পিছু ধাওয়া করে। এমন উক্তিও শোনা গিয়েছে সেই ভিডিও-তে।
উইনার্সকে কলকাতা পুলিশের সুরক্ষার এপিটোম বলেও সম্বোধন করা হয়। ১১ জুলাই, ২০১৮-তে এই বাহিনীর পথ চলা শুরু।
বহু সময়-ই শহরের বিভিন্ন কোণায় ঘটে যাওয়া অপরাধের কোনও খোঁজ পাওয়া যায় না। উইনার্সের কাজ হল মোটরবাইকে চেপে সেই সব অপরাধের সূলূক সন্ধান।
উইনার্স যাতে শহরের পথে মহিলাদের নিরাপত্তা-কে আরও বেশি সুনিশ্চিত করতে পারে, তার জন্য তাদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। যেভাবে প্রতিনিয়ত এই বাহিনী যে কোনও সময়ে টহলদারিতে বেরিয়ে পড়ে তার জন্য মানসিক ও শারীরিক ফিটনেস থাকাটা জরুরি। উইনার্স-এর প্রশিক্ষণে তাতেও নজর দেওয়া হয়।