ভারতীয় সংবিধানের প্রণেতা বাবা সাহেব অম্বেদকর, তাঁর সেরা ১০টি উক্তি

ডক্টর ভীমরাও রামজি আম্বেডকর, একজন জ্যুরিস্ট, রাজনৈতিক নেতা, বৌদ্ধ আন্দোলনকারী, দার্শনিক, চিন্তাবিদ, নৃতত্ত্ববিদ, ঐতিহাসিক, বাগ্মী, বিশিষ্ট লেখক, অর্থনীতিবিদ, পণ্ডিত, সম্পাদক, রাষ্ট্রবিপ্লবী ও বৌদ্ধ পুনর্জাগরণবাদী। ইনি বাবাসাহেব নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি ভারতের সংবিধানের খসড়া কার্যনির্বাহক সমিতির সভাপতি ছিলেন তিনি। ডঃ আম্বেদকর জাতীয়তাবাদী এবং ভারতের দলিত আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা। ইনি ভারতের সংবিধানের মুখ্য স্থাপক। ২০১২ সালে হিস্ট্রি টি. ভি.১৮ আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে ভারতীয়দের ভোটের দ্বারা তিনি "শ্রেষ্ঠ ভারতীয়" হিসেবে নির্বাচিত হন।
 
deblina dey | Published : Apr 14, 2020 6:29 AM IST
110
ভারতীয় সংবিধানের প্রণেতা বাবা সাহেব অম্বেদকর,  তাঁর সেরা ১০টি উক্তি
বর্তমান মধ্যপ্রদেশ-এর মোহ অঞ্চলে ব্রিটিশ কর্তৃক স্থাপিত শহরে আম্বেদকর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন রামজী মালোজী শাকপাল এবং ভীমাবাইের ১৪তম তথা সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। তার পরিবার ছিলেন মারাঠী অধ্যুষিত বর্তমান কালের “মহারাষ্ট্র”-এর রত্নগিরি জেলার আম্বোভাদ শহরের। তৎকালীন সমাজে তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিভুক্ত ছিল, যারা অস্পৃশ্য জাতি হিসেবে এবং প্রচণ্ড রকম আর্থ-সামাজিক বিভেদ সাপেক্ষে পরিগণিত হত।
210
তিনি সেকালে গতবাধা শিক্ষাপদ্ধতি থেকে মারাঠী এবং ইংরেজিতে ডিগ্রি লাভ করেছিলেন এবং সেই সঙ্গে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা লাভে কঠোর পরিশ্রমে সন্তানদের উদ্বুদ্ধ করেন। কবির পান্থের মতে, রামজী শাকপাল তার সন্তানদের হিন্দু সংষ্কৃতি পড়তে উদ্বুদ্ধ করতেন। যদিও আম্বেদকর বিদ্যালয়ে যেতেন সঙ্গে একই অস্পৃশ্য জাতির অন্যরাও থাকতেন। নীচু জাত বলে তাদের আলাদা করে দেওয়া হত এবং শিক্ষকগণ এদের প্রতি অমনযোগী ও অসহায়ক ছিলেন সেই সময়।
310
রামজী শাকপালের ১৮৯৪ সালে অবসর নেন ও দুই বছর পরে তার পরিবার সাতারা-এ চলে আসে। জায়গা বদলের অল্পদিনের পরে, অল্প বয়েসেই আম্বেদকরের তাঁর মাকে হারান। তাঁরা ভাই বোনেরা মাসীর সান্নিধ্যে কষ্টের মধ্যেই বড় হন। শুধুমাত্র তিন ছেলে বালারাম, আনান্দ্রা ও ভীমরাও এবং দুই মেয়ে মঞ্জুলা ও তুলাসাদের মধ্যে আম্বেদকরই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে সামর্থ হন এবং মহাবিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রি লাভে সক্ষম হন।
410
ডঃ আম্বেদকর প্রথম ভারতীয় যিনি বিদেশে ইকোনোমিকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের প্রথম ইকোনোমিকে পিএইচডি ডিগ্রি, এবং প্রথম দুবার ইকোনোমিক্সে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ভারত বর্ষের প্রথম আইন মন্ত্রী। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় পৃথিবীর ১০০ পন্ডিতের মধ্যে ইনি আছেন। সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে প্রথম এবং সুধুমাত্র ইনিই লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকস থেকে সমস্ত বিজ্ঞান বিষয়ের উপর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
510
আম্বেদকর ১৯০৩ সালে বিয়ে করেন এবং পরিবারসহ তিনি মুম্বাইয়ে চলে আসেন, যেখানে আম্বেদকরই হয়ে উঠেন এলফিন্‌স্টোন রাস্তার পাশের নিম্ম শ্রেণীর সদস্যদের জন্য সরকারি বিদ্যালয়ের স্থাপন করেন। যদিও তিনি তাঁর শিক্ষাদীক্ষায় সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন, তথাপি আম্বেদকর যে বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছিলেন তাতে তিনি সমাজ ব্যবস্থার এই নিয়মে অত্যন্ত বিরক্ত ছিলেন।
610
১৯০৭ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রথম অস্পৃশ্য হিসেবে তৎকালীন বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। এই সাফল্য তাঁর সম্প্রদায়ে উৎসাহ যোগায়, একটি সামাজিক অনুষ্ঠানের পরে তিনি তার শিক্ষক কৃষ্ণজী অর্জুন বেলুস্কর, যিনি ছিলেন মারাঠী জাতির একজন বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র, তার পরামর্শে “গৌতম বুদ্ধের জীবনী”র উপর তিনি একটি জীবনচরিত প্রকাশ করেন।
710
১৯১৬ সালে তিনি অন্য আরেকটি এম. এ. গবেষণা প্রবন্ধ “ভারতের জাতীয় কারাগারের লভ্যাংশ একটি ঐতিহাসিক ও বিশ্লেষণিক গবেষণা” । ৯ই মে, নৃতত্ত্ববিদ প্রফেসর আলেকজান্ডার গোল্ডেনউইজার কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারের আগে তিনি “ভারত জাতিঃ তাদের পদ্ধতি, উৎপত্তি এবং উন্নয়ন” বিষয়ক পত্র পাঠ করেন। ১৯১৬ সালের অক্টোবর মাসে তিনি ভর্তি হন “গ্রেস ইন্‌ন ফর ল” এবং লন্ডনের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক অর্থনীতি বিজ্ঞান যেখানে তিনি ডক্টরাল থেসিসের কাজ শুরু করেন।
810
ডঃ আম্বেদকর ১৯৩৫ সালে মুম্বাইয়ের সরকারি আইন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান, সেখানে দু'বছর অধিষ্ঠিত ছিলেন। মুম্বাইয়ে বসবাসের বাসনায় তার তদারকিতে নিজের একটি ঘর মেরামত করেন এবং সেখানে তিনি ৫০,০০০ হাজারেরও বেশি বই সমৃদ্ধ একটি ব্যক্তিগত পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন। ১৩ই অক্টোবর নাসিকের কাছে ঈওলার বৈঠকে বক্তব্যে আম্বেদকর তার ভিন্ন ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার অভিপ্রায় ঘোষণা করেন এবং তার অনুগতদেরও হিন্দু ধর্ম ত্যাগে প্রণোদিত করেন।
910
১৯৩৬ সালে আম্বেদকর স্বনির্ভর শ্রমিক দল প্রতিষ্ঠা করেন, যেটি ১৯৩৭ সালের কেন্দ্রীয় আইন প্রণয়ন পরিষদ বা বিধানসভার নির্বাচনে ১৫ আসন লাভ করেন। নিউইওর্কে লিখিত গবেষণালব্ধ উপাত্তের ভিত্তিতে একই বছর তিনি তার বই দ্য এন্‌নিহিলেশন অব কাস্ট প্রকাশ করেন। ব্যাপক জনপ্রিয় সাফল্যে অর্জনের পর, আম্বেদকর গোঁড়াবাদী ধর্মীয় নেতাদের এবং নিন্ম সাধারণের জন্য অস্পৃশ্য, বর্ণ প্রথার তীব্র সমালোচনা করেন। আম্বেদকর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা সমিতির এবং রাজপ্রতিনিধির নির্বাহী সভায় শ্রম মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেন।
1010
১৯৪৮ সাল থেকে ডঃ আম্বেদকর ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। শারীরিক অবনতির জন্য ১৯৫৪ সালে জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত তিনি শয্যাগত ছিলেন ও তার দৃষ্টিশক্তি হারান। রাজনৈতিক কারণে তিনি ক্রমবর্ধমানভাবে অনেক তিক্তবিরক্ত হয়ে উঠেন, যা তার স্বাস্থ্যের কাল হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৫৫ সালের পুরোটা জুড়ে তিনি প্রচন্ডভাবে কাজ করার ফলে তার শারীরিক অবস্থার অধিকতর অবনতি হয়। টানা তিন দিন “বুদ্ধ ও তাঁর ধর্ম” বইটির সর্বশেষ পান্ডুলিপি তৈরির পর বলা হয় যে, তিনি ৬ই ডিসেম্বর ১৯৫৬ সালে তার নিজ বাড়ি দিল্লীতে ঘুমন্ত অবস্থায় চির নিদ্রায় শায়িত হন।
Share this Photo Gallery
click me!

Latest Videos