এবার চাঁদের মাটিতেও নারীশক্তি, প্রথম চন্দ্র অভিযানের ৫৫ বছর পর মহিলা মহাকাশচারী পাঠাচ্ছে নাসা
চাঁদের মাটিতে প্রথম মানুষের পা পড়ে ১৯৬৯ সালের ২১ জুলাই ৷ সেই প্রথম পদার্পণের ৫৫ বছর পর ফের চাঁদের মাটিতে নামবেন দু’জন। যাদের মধ্যে আবার একজন মহিলা মহাকাশচারী। একজন পুরুষ মহাকাশচারীর সঙ্গে সাতদিনের জন্য চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবস্থান করবেন তিনি।
Asianet News Bangla | Published : Sep 22, 2020 11:17 AM IST / Updated: Sep 22 2020, 04:53 PM IST
চাঁদের মাটিতে প্রথম মানুষের পা পড়ে ১৯৬৯ সালের ২১ জুলাই ৷ এরপর ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিন বছর বিভিন্ন সময় মোট ১২ জন মহাকাশচারী চাঁদের মাটিতে পায়চারি করতে সফল ৷ সবক’টা অভিযানই ছিল নাসার অ্যাপোলো প্রোগ্রামের অন্তর্গত ৷
নীল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন হলেন চাঁদে পা রাখা প্রথম ও দ্বিতীয় মানুষ ৷ এরপর আরও ১০ জন চাঁদে দিয়েছেন ৷
সবচেয়ে বেশি বয়সে চাঁদে পা রাখেন অ্যালান শেপার্ড ৷ তখন তাঁর বয়স ছিল ৪৭ বছর ৮০ দিন ৷ এবং সবচেয়ে কম বয়সে চাঁদে পা রাখার নজির গড়েন চার্লস ডিউক ৷ মাত্র ৩৬ বছর ২০১ দিন বয়সেই এই কীর্তি গড়তে সফল ডিউক ৷
প্রথম পদার্পণের ৫৫ বছর পর ফের ২০২৪ সালে চাঁদের মাটিতে পা রাখতে চলেছেন দু’জন। এক মহিলা ও এক জন পুরুষ মহাকাশচারী।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জিম ব্রিডেনস্টাইন আনুষ্ঠানিক ভাবে এই ঘোষণা করেছেন। ১৯৬৯-এ প্রথম সভ্যতার পায়ের ছাপ পড়েছিল চাঁদের বুকে। হেঁটেছিলেন তিন মার্কিন মহাকাশচারী।
ব্রিডেনস্টাইন জানিয়েছেন, ৫৫ বছর আগে নিল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স আর এডুইন (বাজ) অল়ড্রিনের মতো অল্প সময়ের চাঁদে কাটাবে না মানুষ। এ বার টানা ৭ দিন ধরে চাঁদের মাটিতে নানা ধরনের গবেষণা চালাবেন দুই মহাকাশচারী।
আর এক দশকের মধ্যে লাল গ্রহ মঙ্গলের বুকে মানুষের পদার্পণের জন্য জরুরি প্রাথমিক গবেষণা ও প্রস্তুতি শুরু হবে চাঁদের মাটিতে এ বারের পদার্পণ থেকেই। তার পর মহাকাশযানে চেপে পৃথিবীতে ফিরে আসবেন দুই মহাকাশচারী।
চাঁদে পদার্পণের জন্য কোন দুই মহাকাশচারীকে বেছে নেওয়া হয়েছে সেইসব নামধাম অবশ্য এখনও জানায়নি মার্কিন মহাকাশা গবেষণা সংস্থা নাসা। শুধুই খোলসা করেছে তাদের আসন্ন চন্দ্রাভিযান ‘আর্টেমিস মিশন’-এর প্রথম পর্যায়ের পরিকল্পনা।
পৃথিবী থেকে চাঁদে যেতে আর্মস্ট্রংদের সময় লেগেছিল ৩ দিন। ৫০ বছর পার করে এখন প্রযুক্তি এগিয়ে গিয়েছে অনেকটাই। তাই এবার আড়াই দিনেই পৌঁছে যাওয়া যাবে চাঁদের মাটিতে।
নাসার তরফে জানানো হয়েছে, চাঁদেপদার্পণের জন্য নাসার অত্যন্ত শক্তিশালী ‘স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস)’ ও মহাকশযান ‘ওরিয়ন’ তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ওরিয়নের চারটি ইঞ্জিনকে পরখ করে দেখার কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে। আগামী মাসেই ওই ইঞ্জিনগুলির ‘হট ফায়ার টেস্ট’হবে।
হট ফায়ার টেস্টের পরেই ওরিয়ন মহাকাশযানের ‘কোর স্টেজ’টি পাঠানো হবে ফ্লোরিডায় নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারে। তাকে মহাকাশযানের মূল অংশের সঙ্গে জোড়া হবে। তার পর এসএলএস এবং ওরিয়নকে পরীক্ষামূলক ভাবে একই সঙ্গে পাঠানো হবে চাঁদদের কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করতে।
‘আর্টেমিস-১’ যা চাঁদের কক্ষপথে পাঠানো হবে আগামী বছর। সেই অভিযানে কোনও মহাকাশচারী থাকবেন না। তার দু’বছর পর ২০২৩-এ হবে ‘আর্টেমিস-২’ মিশন। তাতে মহাকাশযানে থাকবেন এক মহাকাশচারী। তবে তিনি মহাকাশযান থেকে বেরবেন না।
ব্রিডেনস্টাইন জানিয়েছেন, আর্টেমিস-২ অভিযানে চাঁদের কক্ষপথে এসএলএস রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ওরিয়ন মহাকাশযানটি চালাবেন এক পাইলট মহাকাশচারী।
পরবর্তী আর্টেমিস-৩ অভিযানে হবে ওরিয়ন মহাকাশযান থেকে চাঁদের মাটিতে নামার পরীক্ষানিরীক্ষা। এই সব পরীক্ষানিরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি হিসাবে ২০২১ থেকেই বছরে দু’বার করে চাঁদের কক্ষপথে থাকা মহাকাশযানে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পাঠাতে শুরু করবে নাসা।
আর আর্টেমিস-৪ অভিযান থেকে চাঁদের কক্ষপথে একটা স্থায়ী আস্তানা গড়ে তুলবে নাসা। এখনকার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের মতো। তবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন রয়েছে পৃথিবী থেকে মাত্র ৩৭০ কিলোমিটার উপরে। আর আর্টেমিসের সেই আস্তানা থাকবে আড়াই লক্ষ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে থাকা চাঁদের কক্ষপথে। সেটাই হবে চাঁদে মহাকাশচারীদের ‘বেস ক্যাম্প’।