'বছরে ৫০ হাজার মৃত মানুষ বেঁচে উঠবে' এমনই চ্যালেঞ্জ বিশ্বকে দিয়েছেন ডক্টর স্যাম পার্নিয়া

মৃত মানুষকে বাঁচিয়ে তোলার শপথ নিয়েছেন ডক্টর স্যাম পার্নিয়ার। রামায়ণে উল্লেখ পাওয়া যায় যে লক্ষণকে বাঁচিয়ে তুলতে বিশল্যকরণী কাঁধে করে তুলে নিয়ে এসেছিলেন হনুমান। বিশ্বের চিকিৎসাশাস্ত্রও পার্নিয়ার কাছে তাঁর বিশল্যকরণীর নমুনা চেয়েছে। নিজের দেশে এই কাজ করতে পারেননি, তাই পাড়ি দিয়েছিলেন আমেরিকার বুকে। সেখানেই আপাতত মৃত মানুষকে বাঁচিয়ে তোলার গবেষণার কাজে ব্যস্ত স্যাম পার্নিয়া। এই গবেষণার অঙ্গ হিসাবে তিনি আবার নেয়ার টু ডেথ এক্সপিরিয়েন্স করাদের কাহিনিও নথিভুক্ত করার কাজে নিয়োজিত। পার্নিয়ার মতে, চিকিৎসাশাস্ত্র এখন এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে সেখানে সামান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গ কাজ করা ছেড়ে দিলে মানুষ মরে যাবে এমনটা হতে পারে না। 

Web Desk - ANB | Published : Apr 4, 2022 11:52 AM IST
115
'বছরে ৫০ হাজার মৃত মানুষ বেঁচে উঠবে' এমনই চ্যালেঞ্জ বিশ্বকে দিয়েছেন ডক্টর স্যাম পার্নিয়া

চিকিৎসক স্যাম পার্নিয়ার এক্ষেত্রে যুক্তি অবশ্যই এটাই হওয়া সম্ভব। বিশেষ করে যারা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে। নিউ ইয়র্কের স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের প্রধান স্যাম পার্নিয়ার। জাতিতে ব্রিটিশ। পড়াশোনাও ব্রিটেনে। বর্তমানে আমেরিকায় লেগে রয়েছেন মরা মানুষকে জীবিত করে তুলতে। পার্নিয়ারের যুক্তি- তিনি এমন এক জায়গা থেকে মানুষকে জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন যেখানে একজন মানুষ চিরতরে মৃত্যুর দুনিয়ায় পাকাপাকি বসবাসের বন্দোবস্ত করছে। 

215

স্যাম পার্নিয়ারের মতে, মানুষের হৃদস্পন্দন থেমে গেল মানেই যে মানুষ মৃত- এই ধারনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে হৃদরোগে আক্রান্ত যারা এবং এর জন্য যারা মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছেন- তাদের জীবনের স্পন্দনে ফের নিয়ে আসা সম্ভব বলেই দাবি করেন পার্নিয়া। তিনি দাবি করেন, হৃদস্পন্দন থেমে গেলে সেই হৃযন্ত্রকে যদি বাইরে বের করে এনে মেরামতি করে দেওয়া যায় তাহলেই ফের বেঁচে উঠতে পারে মৃত ব্যক্তি। 
 

315

স্যাম পার্নিয়ার এমবিবিএস ডিগ্রি এসেছিল লন্ডনের বিশ্বখ্যাত গাইস অ্যান্ড সেন্ট টমাস মেডিক্যাল স্কুল থেকে। এরপর ইউনিভার্সিটি অফ সাউদাম্পটন থেকে রিসার্চ ফেলো হয়েছিলেন। এই মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকেই পিএইচডি সম্পূর্ণ করেন ২০০৭ সালে। বিষয় ছিল সেল বায়োলজি। এরপর ইউনিভার্সিটি অফ সাউদাম্পটন-এই কাজ করছিলেন পার্নিয়া। কিন্তু, মৃত মানুষকে বাঁচানো নিয়ে তাঁর তত্ত্বে সিলমোহর দিতে চায়নি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। এমনকী এই নিয়ে গবেষণাতেও বাধ সাধে ব্রিটেনের মেডিক্যাল এথিকস আইন। ২০১০ সালে শেষমেশ নিউ ইয়র্কের স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনে যোগ দেন। ব্রিটেন ছেড়ে আমেরিকায় চলে যান পার্নিয়া। 

415

২০১৩ সালে দ্য গার্ডিয়ানকে এক সাক্ষাৎকারে পার্নিয়া দাবি করেছিলেন, তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতি হৃদরোগে মৃত্যু মুখে পতিত হওয়াদের মধ্যে বছরে অন্তত ৪০ হাজার আমেরিকানকে নতুন জীবনদান করতে পারে। ব্রিটেনের ক্ষেত্রে এই প্রেক্ষিতে বছরে ১০ হাজার মানুষকে নতুন জীবনদান দেওয়ার কথা দাবি করেছিলেন পার্নিয়া। মৃত্যুর মুখ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনা নিয়ে যে চিকিৎসা পদ্ধতি পার্নিয়া বের করেছেন তার জন্য একটি বই লিখেছেন। বইটির নাম দ্য লাজারার্স এফেক্ট। 

515

দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনই দাবি করেছিলেন স্যাম পার্নিয়া। তাঁর মতে শরীরের কোনও না কোনও অঙ্গপ্রতঙ্গের জন্য কারও জীবনস্পন্দন থেমে যায়, তাহলে সেই জীবনস্পন্দনকে নতুন করে চালু করা সম্ভব বলেই তিনি মনে করেন। এর জন্য মৃত্যুর চরম সত্য হতে পারে না। এই ধরনের কারণ আর বেশিদিন মৃত্যুর দিশা হবে না বলেই মনে করেন তিনি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যারা মৃত্যু বরণ করছে আগামীদিনে এই কারণে আর জীবনের স্পন্দন হারিয়ে যাবে না বলেও তাঁর মত। 

615

স্যাম পার্নিয়া জানিয়েছেন, অধিকাংশ সময়েই দেখা যায় যে পরিপূর্ণ একটা হাসপাতাল পরিকাঠামোর মধ্যে হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়া এক রোগীকে সকলে মিলে সিপিআর করছে। পার্নিয়ার মতে, এই সিপিআর-এর বেশিরভাগটাই একটা ধরনা এবং আশার উপরে। কারণ, এটা কতটা কাজ করবে কেউ তার গ্যারান্টি দিতে পারে না। কিন্তু, যেখানে একজন রোগী একটা পুরো চিকিৎসা পরিকাঠামোর মধ্যে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়েছে কারণ হৃদযন্ত্র থেমে গিয়েছে, সেখানে সিপিআর করা মানে সময় নষ্ট করা। বরং ওই সময়ের মধ্যে এমন কিছু করা সম্ভব যেখানে রোগীর বেঁচে ওঠার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।

715

স্যাম পার্নিয়া জানিয়েছেন,হৃদস্পন্দন কোনওভাবে বন্ধ হয়ে গেলে মানুষের শরীর এবং মস্তিস্কে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে? এই নিয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখতে পারলে একজন রোগীর পুনরায় বেঁচে ওঠার সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়ে যায়।

815

স্যাম পার্নিয়া জানিয়েছে, তাঁর এই পদ্ধতিতে কাউকে বাঁচিয়ে তুলতে গেলে আগে শরীরের তাপমাত্রাকে নামিয়ে আনতে হবে, শরীরে সেল যাতে কোনওভাবে ড্যামেজ না হয় তার জন্য এই ব্যবস্থা। এমনকী, মস্তিস্কের সেলগুলোকে ঠান্ডার মাধ্যমে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। 
 

915

ব্রিটিশ এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে শরীরের রক্তকে সজাগ রাখতে সেখানে অক্সিজেন মাত্রাকে ঠিক রাখতে হবে। জাপানে বহুদিন থেকে এই নিয়ে কাজ হচ্ছে এবং সেখানে প্রায় মৃত মানুষের শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রাখতে একটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এর নাম একমো। এখন বিশ্বজুড়ে চিকিৎসার বিভিন্ন ক্ষেত্রে একমো পদ্ধতি অনুসরণ করছেন চিকিৎসকরা। এতে এক মেকিনিক্যাল মেমব্রেম অক্সিজেনেরেটরের মাধ্যমে শরীরের রক্তকে রিসাইক্লিং করা হয় যাতে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে। 

1015

স্যাম পার্নিয়ার মতে, এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে মস্তিস্কে অক্সিজেনের মাত্রা কোনওভাবেই ৪৫ শতাংশের নিচে আসতে দেওয়া যাবে না। কারণ ৪৫ শতাংশের নিচে অক্সিজেন চলে গেলে এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে মৃতকে বাঁচানোর আশা অনেকটাই কমে যায়। তাই এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে মস্তিস্কে অক্সিজেনের মাত্রাকে ৪৫ শতাংশের উপরে রাখাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। 

1115

স্যাম পার্নিয়া আরও জানিয়েছেন যে, প্রায় মৃত ব্যক্তির সমস্ত সাপোর্ট সিস্টেমকে কয়েক মিনিটের মধ্যে নির্দিষ্ট উপায়ে চালু করে দিতে হবে। এই পদ্ধতি কাজ শুরু করে দিলে এবার হৃদযন্ত্রকে খুলে বার নিয়ে এসে তাতে প্রয়োজনীয় মেরামতি করে ফের তাঁকে লাগিয়ে দিতে হবে। হৃদযন্ত্রে যদি কোনও ব্লকেজ থাকে, তাহলে সেখানে কোন স্টেন বসিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এরপর হৃদযন্ত্র লাগিয়ে দিয়ে এবার অপেক্ষা করা তা সচল হওয়ার জন্য। হৃদযন্ত্র একবার চলতে শুরু করলেই কাজ অনেকটা সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন পার্নিয়া। 

1215

স্যাম পার্নিয়ার দাবি, তিনি যে চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন তাতে ৩ থেকে ৬ ঘণ্টা মৃত ব্যক্তিকেও বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব। বর্তমানে এখনও এই নিয়ে চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণায় লেগে রয়েছেন পার্নিয়া। কিছু আংশিক সাফল্য এলেও পুরো চিকিৎসা পদ্ধতি ১০০ শতাংশ কাজ করছে এমনটা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে, পার্নিয়ার আশা খুব দ্রুত তিনি প্রকাশ্যেই দৃঢ়তার সঙ্গে মৃত ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে তোলার দাবি করতে পারবেন। 

1315

মৃত মানুষকে বাঁচিয়ে তুলতে এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন পার্নিয়া। তাঁর অধীনের বিশ্বজুড়ে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে যার মাধ্যমে প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসাদের কাহিনি ডায়েরি বন্দি করেন পার্নিয়া এবং দল। পার্নিয়াদের এই উদ্যোগের জন্য প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসাদের বহু কাহিনি নেয়ার টু ডেথ এক্সপিরিয়েন্স হিসাবে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে গিয়েছে। 

1415

জীবনের স্পন্দন থেমে গেলে মানুষ কোন অবস্থায় থাকে সেই অবস্থাটা বুঝতেই তিনি এবং তাঁর দল প্রায় মৃতুর মুখ থেকে ফিরে আসা মানুষদের কাহিনি ফাইলবন্দি করেন বলেও জানিয়েছেন পার্নিয়া। তাঁর মতে, মস্তিস্কের কোথায় কি ঘটে চলে তার পরিপূর্ণ প্রকাশ এখনও মেলেনি। শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দিলে মস্তিস্কের আচরণ কেমন হয় তা অনুধাবন করতেই এই সব কেস স্টাডি বলেও জানিয়েছেন তিনি। 

1515

বিশ্বজুড়ে আলোড়ন ফেলে দেওয়া এই চিকিৎসকের মতে শরীরের উপর মনের নিয়ন্ত্রণ না মনের উপরে শরীরের নিয়ন্ত্রণ- এটা বুঝতে তিনি নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরিক্ষা এবং গবেষণা চালিয়েছেন। তাঁর মতে, একবার যদি এই সূত্রটাকে একটা অকাঠ্য যুক্তির বেড়াজালে বেঁধে ফেলা যায় তাহলে কাজ আরও সহজ হয়ে যাবে। তিনি আরও জানিয়েছেন যে বহু চিকিৎসক মনে করেন মস্তিস্ক-ই মনকে তৈরি করে। কিন্তু, নিউরো সায়েন্সের একাধিক বিশ্ববরেণ্য চিকিৎসক মনে করেন নিউরোলজিক্যাল ফাংশন বা নিউরনের কার্যপ্রণালির উপরে ভিত্তি করে যদি কেউ মস্তিস্ককে বিশ্লেষণ করতে যায় তাহলে তা ভুল হবে। তাই পার্নিয়া মনে করেন, যখন জীবনের যাত্রা থমকে যায় তখন মানুষের মনে কী প্রতিক্রিয়া হয় সেগুলোকে যদি সংগ্রহ করে একটা প্যাটার্নকে ধরার চেষ্টা করা যায় তাহলে আরও নিখুত দিশা এক্ষেত্রে মিলতে পারে। 

Share this Photo Gallery
click me!

Latest Videos