'মরিয়া পদক্ষেপ' না 'মাস্টারস্ট্রোক' - একুশের ভোটে মমতার কেন্দ্র বদলের আসল অর্থ কী

Published : Mar 09, 2021, 01:20 PM ISTUpdated : Mar 09, 2021, 01:55 PM IST

নন্দীগ্রামে এবার মহারণ। ভোটের বাংলায় এর আগে যা কখনও দেখা যায়নি, তাই ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দেখবে নন্দীগ্রাম। গত জানুয়ারিতে নন্দীগ্রামের এক সভা থেকে আচমকা সেখানেই প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছে শুভেন্দু অধিকারীকে। যে শুভেন্দু অধিকারীর উত্থান মমতার দলেই। বিজেপি নেতারা নন্দীগ্রাম থেকে মমতার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্তকে 'মরিয়া পদক্ষেপ' বলছেন। তবে দলের অধিকাংশ নেতারা দিদির এই পদক্ষেপকে বলছেন 'মাস্টারস্ট্রোক'। আসুন দেখে নেওয়া যাক, ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রাম থেকে লড়াই -  মমতার এই সিদ্ধান্তের প্রকৃত অর্থ কী? কেন আসন বদল করলেন মমতা?

PREV
16
'মরিয়া পদক্ষেপ' না 'মাস্টারস্ট্রোক' - একুশের ভোটে মমতার কেন্দ্র বদলের আসল অর্থ কী

জনপ্রিয়তা হ্রাস

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সাল থেকে পরপর দুবার ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ২০১১ সালে প্রথমবার বিধানসভা উপ-নির্বাচনে তিনি এই আসনটি জিতেছিলেন মোট ভোটের ৭৭.৪৬ শতাংশ ভোট পেয়ে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ভোট প্রাপ্তির ভাগ  কমে দাঁড়ায় ৪৮ শতাংশে। আর, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল মাত্র ৩,০০০-এর কাছাকাছি ভোটের পাতলা ব্যবধানে ভবানীপুর কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল। পাশের কেন্দ্র রাশবিহারীতে তৃণমূল বিজেপির থেকে পিছিয়ে ছিল, ৪০ হাজারেরও বেশি ভোটে। অর্থাৎ ভবানীপুর এলাকায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা যে কমেছে তা স্পষ্ট। আর জনপ্রিয়তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে রাজননৈতিক নেতাদের প্রায়শই আসন পরিবর্তন করতে দেখা যায়। ২০১৯ সালের নির্বাচনে যেমন চিরদিনের আমেঠি আসনের পাশাপাশি কেরলের ওয়ানাড় আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। আমেঠিতে হেরে গেলেও ওয়ানাড়ে জেতার জোরেই বর্তমান লোকসভায় আসতে পেরেছেন। মমতাও প্রথমে ভবানীপুর ও নন্দীগ্রাম, দুইকেন্দ্র থেকেই দাঁড়াতে চেয়েছলেন, তবে শেষে শুধু নন্দীগ্রাম থেকেই প্রার্থী হয়েছেন।

26

বুমেরাং 'বহিরাগত'

সেই সঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভবানীপুর কেন্দ্রে দাঁড়ালে বুমেরাং হয়ে উঠতে পারত মমতার বহিরাগত প্রচার। আসন্ন নির্বাচনের প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজেপিরকে প্রধান আক্রমণের অস্ত্র 'বহিরাগত'। নিজেকে 'বাংলার মেয়ে' হিসাবে তুলে ধরে তিনি বিজেপি-কে 'গুজরাতের দল' হিসাবে দেখাতে চাইছেন। এর ফলে বাংলায় রাজনৈতিকভাবে বাঙালি-অবাঙালি বিভাজন তৈরি হয়েছে। মজার বিষয়, ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ৭০ শতাংশেরও বেশি ভোটার অবাঙালি, যার অধিকাংশই আবার গুজরাতি। কাজেই, মমমতার প্রচার তাঁর নিজের পুরোনো কেন্দ্রেই তাঁকে বিপদে ফেলতে পারত। এইদিক থেকে নন্দীগ্রামে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তটা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, সেখানে আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ওই কেন্দ্রে 'বহিরাগত', বলে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে বিজেপি।

36

ভবানীপুরের থেকে সহজ মাঠ নন্দীগ্রাম

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে নন্দীগ্রাম থেকে নির্বাচনে লড়াই করাটা ভবানীপুরের থেকে অনেক সহজ। প্রথমত, নন্দীগ্রামের লড়াইকে সামনে রেখেই তিনি তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা বাম জমানার অবসান ঘটাতে পেরেছিলেন। নন্দীগ্রাম থেকে লড়াইয়ে সেইসব দিনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে ভোটারদের মনে আবেগের চোরাস্রোত তৈরি করতে পারবেন তিনি। যদিও সেই আনন্দোলনে তাঁর সবথেকে বড় সেনাপতি, শুভেন্দু অধিকারীই এখন তাঁর বিপক্ষে। সেইসঙ্গে নন্দীগ্রামে সংখ্যালঘু ভোটার প্রায় ৩০ শতাংশ। মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ককে সঙ্গে রাখা পছন্দ করেন মমতা। আর এর জন্য সভা সমিতিতে তিনি বিজেপির হিন্দুত্বের হুমকি তুলে ধরতে পারেন। তাঁর পথে কাঁটা হয়ে উঠতে পারে বাম-কং-আইএসএফ জোট। তারপরেও ভবানীপুরের থেকে নন্দীগ্রামে খেলাটা তুলনায় সহজ।

 

46

রাজনৈতিক ফাটকা

দুটি কেন্দ্র থেকে শেষ পর্যন্ত না লড়ায় রাহুল গান্ধী হতে হতে বেঁচে গিয়েছেন মমতা। দুই কেন্দ্রের কোনও একটিতে হেরে গেলে, আমেঠিতে হারের পর যেমন অবস্থা হয়েছে প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির তেমনটাই অবস্থা হতো মমতার। তবে তারপরেও তাঁকে হাঁটতে হবে একেবারে দড়ির উপর দিয়ে। এইরকম লড়াই আগে লড়তে হয়নি তাঁকে। তাঁর একসময়ের সঙ্গীই এবার তাঁর বিরুদ্ধে। শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জটা হেরে গেলে কিন্তু, রাহুল গান্ধীর মতোই রাজনৈতিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

56

অশনি সংকেত

৮ মার্চ তারিখেই নন্দিগ্রামে দেখা গিয়েছে একটি পোস্টার। আর যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। তেরঙ্গা পোস্টারে লেখা রয়েছে 'নন্দীগ্রাম-মেদিনীপুরের ভূমিপুত্রকেই চায়, বহিরাগতকে নয়'। এই 'বহিরাগত' আক্রমণের উদ্দেশ্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রীই, এমনটাই মত রাজৈতিক বিশ্লেষকদের। এই পোস্টার  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করা হচ্ছে। বার্তা দিচ্ছে নন্দীগ্রামের লড়াই সহজ তো নয়ই, বরং বেশ কঠিন। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সর্বোচ্চ নেত্রী অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপপাধ্যায়,কিন্তু সেখানকার মানুষ মাঠে নেমে কাজ করতে দেখেছেন শুভেন্দুকেই।  

 

 

66

শুভেন্দু অধিকারীকে বন্দি করা

শুভেন্দু অধিকারী যেমন জনপ্রিয় নেতা, তেমনই ভালো সংগঠক। এই কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানেন। ইতিমধ্যেই তিনি তাঁর পুরোনো দলকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, একাই অন্তত ৩৫টি আসন তিনি বিজেপিকে দেবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাপের নেত্রী নন্দীগ্রাম থেকে লড়াই করার ফলে, শুভেন্দু অধিকারী নিজের কেন্দ্রের বাইরে খুব বেশি ঘোরাফেরা করার সুযোগ পাবেন বলে মনে হয় না। বেশিরভাগ সময় তাঁকে নন্দীগ্রামেই মনোযোগ দিত হবে।

 

 

click me!

Recommended Stories