রাস্তার অবস্থা বেহাল, পেনশনের টাকায় ১১ বছর ধরে রাস্তা সারাই করছেন দম্পতি

হায়দরাবাদের বাসিন্দা গঙ্গাধর তিলক কাটনাম (৭৩) ও তাঁর স্ত্রী ভেঙ্কটেশ্বরী কাটনাম (৬৪)। সকাল হতেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা। সঙ্গে থাকে রাস্তা সারাইয়ের বিভিন্ন সামগ্রী। শহরের যেখানেই রাস্তার গর্ত তাঁদের চোখে পড়ে সেখানেই সারাইয়ের কাজ শুরু করে দেন। 

Asianet News Bangla | Published : Jul 16, 2021 6:46 AM IST / Updated: Jul 16 2021, 02:06 PM IST

হায়দরাবাদে পথ দুর্ঘটনা কোনও নতুন বিষয় নয়। প্রায়শই শহরের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়। আর এই দুর্ঘটনার জন্য অনেকটাই দায়ি রাস্তার গর্তগুলি। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা সারাই না করার ফলে এই গর্তগুলির তৈরি হয়। সেই গর্তের মধ্যে গাড়ি পড়ে গিয়ে যখনই টাল সামলাতে পারে না তখনই ঘটে দুর্ঘটনা। বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি এক প্রবীণ দম্পতি। আর সেই কারণেই ১১ বছর ধরে নিজেদের খরচে নিজ হাতে রাস্তা সারাইয়ের কাজ করে চলেছেন। 

আরও পড়ুন- মর্মান্তিক! কুয়োয় পড়া কিশোরীর প্রাণ বাঁচাতে জীবন বাজি রাখলেন ৩০ জন, এখনও পর্যন্ত নিহত ৪

 

হায়দরাবাদের বাসিন্দা গঙ্গাধর তিলক কাটনাম (৭৩) ও তাঁর স্ত্রী ভেঙ্কটেশ্বরী কাটনাম (৬৪)। সকাল হতেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা। সঙ্গে থাকে রাস্তা সারাইয়ের বিভিন্ন সামগ্রী। শহরের যেখানেই রাস্তার গর্ত তাঁদের চোখে পড়ে সেখানেই সারাইয়ের কাজ শুরু করে দেন। ওই গাড়িকে তাঁরা 'পটহোল অ্যাম্বুলেন্স' বলে ডাকেন। 

আরও পড়ুন- তালিবান মোকাবিলায় ভারতের হাতিয়ার উন্নয়ন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগান প্রধানের সঙ্গে বৈঠক এস জয়শঙ্করের

লোকমুখে 'রাস্তার চিকিৎসক' নামে পরিচিত গঙ্গাধরবাবু। তিনি বলেন, "আমি নিজেই এই রাস্তা সারাইয়ের কাজ করব বলে ঠিক করেছিলাম। পেনশনের টাকা দিয়ে এই কাজ করি। এখনও পর্যন্ত ২ হাজার গর্ত সারিয়েছি। তার জন্য এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। রাস্তা খারাপ হওয়ার ফলে অনেক পথ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পরিমাণ যাতে কমে তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"

৩৫ বছর ধরে ভারতীয় রেলের কর্মরত ছিলেন গঙ্গাধরবাবু। এরপর সেখান থেকে অবসরের পর স্ত্রীকে নিয়ে চলে আসেন হায়দরাবাদে। সেখানে একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগ দেন। কিন্তু, রাস্তার এই বেহাল অবস্থা দেখে চাকরি ছেড়ে দেন। নতুন কোনও চাকরিতে ঢোকার পরিবর্তে রাস্তা সারাইয়ের কাজ করবেন বলে স্থির করেন। তখন তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ভেঙ্কটেশ্বরীদেবী। 

 

তবে প্রথমে রাস্তার এই অবস্থা দেখে বহুবার পুলিশ প্রশাসন ও পৌরনিগমকে জানিয়েছেন গঙ্গাধরবাবু। কিন্তু, কেউই কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ তাঁর। তারপরই নিজের টাকায় রাস্তা সারাই করবেন বলে স্থির করেন। সেই থেকে টানা ১১ বছর ধরে এই কাজ করে চলেছেন তাঁরা। 

আরও পড়ুন- পেটের দায়ে কম দামে বিক্রি করছেন কিডনি, অসম-বাংলার সক্রিয় চক্র নিয়ে মমতাকে চিঠি কংগ্রেস সাংসদের

আর গঙ্গাধরবাবুর এই প্রয়াস দেখে এগিয়ে এসেছেন বহু সরকারি আধিকারিক। তাঁকে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জোগান দেন তাঁরা। 'শ্রমাধান' নামে একটি সংস্থাও খুলেছেন তিনি। রাস্তা সারাইয়ের জন্য সেই সংস্থাকে বহু মানুষ অর্থ সাহায্য করেন। আর এভাবেই একটু একটু করে নিজের লক্ষ্য পৌঁছে যাচ্ছেন তিনি। বলেন, "অনেক সমস্যাই খুব সহজে সমাধান হয়ে যায় যদি সবাই একে অপরকে সাহায্য করতে শুরু করেন।" এভাবেই একদিন শহরের কোথাও কোনও রাস্তায় আর গর্ত থাকবে না বলে আশাবাদী তিনি।

এই বৃদ্ধ দম্পতির উগ্যোগের কথা জানতে পেরে তাঁদের রাজভবনে ডেকে পাঠান তেলাঙ্গানার রাজ্যপাল তামিলিসাই সুন্দরারাজন। এত বছর ধরে যেভাবে নিস্বার্থ ভাবে তাঁরা মানুষের জন্য কাজ করে একাধিক প্রাণ বাঁচিয়ে চলেছেন তার প্রশংসা করেন তিনি। 
 

Share this article
click me!