১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর বিনয়-বাদল-দীনেশ ইউরোপীয় বেশভুষার ছদ্মবেশ নিয়ে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করেন। বাদল গুপ্ত ছিলেন সেসময় বেঙ্গল ভলিন্টিয়ার্স বিপ্লবী দলের সবচেয়ে ছোটো সদস্য। বিনয়, বাদল কিম্বা দীনেশ কেউই পুলিশের হাতে ধরা দিতে চাননি। বাদলের পকেটে ছিল পটাশিয়াম সাইনাইড। তিনি সেটি খেয়ে নেন ও মৃত্যুর কোলে ঢ্লে পড়েন। আজ বাদল গুপ্তের মৃত্যুদিন। লিখছেন অনিরুদ্ধ সরকার
বাদলের (Badal Gupta) আসল নাম সুধীর গুপ্ত (Sudhir Gupta)। ১৯১২ সালে ঢাকার বিক্রমপুর অঞ্চলের পূর্ব শিমুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।ছেলেবেলায় যখন তিনি বিক্রমপুরের বানারিপাড়া স্কুলে পড়াশোনা করছিলেন, তখন থেকেই শিক্ষক নিকুঞ্জ সেনের মাধ্যমে দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হন তিনি আর স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যোগ দেন সুভাষ বসুর বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সে (Bengal Volunteers)। বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯২৮ সালে কলকাতায় কংগ্রেসের সভায় এসেছিলেন কংগ্রেস নেতা মতিলাল নেহরু। তাঁকে অভিনন্দন জানাতে যান, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস (Chittaranjan Dash)। আর সেই সময় চিত্তরঞ্জন দাশ (Chittaranjan Dash) বাংলায় একটি সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভন করেছলেন। মূলত তাঁরই অনুপ্রেরণায় সুভাষচন্দ্র বসু গঠন করেন বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স (Bengal Volunteers)।
বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের (Bengal Volunteers) বিপ্লবীরা কারাবিভাগের ইন্সপেক্টর জেনারেল কর্নেল এন এস সিম্পসনের ওপর হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। সিম্পসন কারাগারে রাজবন্দীদের উপরে অত্যাচারের জন্য কুখ্যাত ছিলেন। সিম্পসনকে হত্যা করা ছাড়াও বিপ্লবীদের লক্ষ্য ছিল ইংরেজ শাসকদের মনে ভয় তৈরি করা। বিনয়, বাদল ও দীনেশের ওপর গুরুদায়িত্ব বর্তায়। এই দলের বিনয় ও দীনেশের চেয়ে বাদল ছিলেন অনেক ছোটো। বাদল গুপ্ত (Badal Gupta) ছিলেন সেসময় দলের সবচেয়ে ছোটো সদস্য। সদ্য আঠেরোয় পা দিয়েছিল সে। ৮ ডিসেম্বর রাইটার্স বিল্ডিং (Writers Building) অভিযানের আগের দিন, অর্থাৎ ৭ ডিসেম্বর ছেলেবেলার শিক্ষক নিকুঞ্জ সেনের সঙ্গে রাইটার্স বিল্ডিং চত্বর ঘুরে দেখতে যান বাদল গুপ্ত।
রাইটার্স বিল্ডিং (Writers Building) ঘুরে দেখার পর শিক্ষক নিকুঞ্জ সেনকে বাদল অনুরোধ করেন, একবার যদি কাকামণি তরণীনাথ গুপ্তের বাড়ি দেখা করা যায়। দলের কঠোর নিয়ম, বিপ্লবীদের বাড়ির সাথে সমস্ত সংস্পর্শ ত্যাগ করতে হবে। কিন্তু শিক্ষক নিকুঞ্জ সেনের কি মনে হল, তিনি এসব নিয়মের তোয়াক্কা না করে বাদলকে নিয়ে গিয়েছিলেন কাকামণির কাছে। পথে ছোটো বোন মৃদুলার জন্য বাদল কিনেছিলেন চিনামাটির একটি পুতুল। বাদলের কাকামণি তরণীনাথও ছিলেন বিপ্লবী। তরণীনাথের দুই ভাই ধরণীনাথ ও নগেন্দ্রনাথ জড়িয়ে ছিলেন সেকালের বিখ্যাত "আলিপুর বোমা মামলায়"। ১৩৪ নং হ্যারিসন রোডে দুই ভাইয়ের হোমিওপ্যাথি চেম্বার থেকে বোমা উদ্ধার করেছিল পুলিশ।
কলকাতার ব্রিটিশ শাসকদের সচিবালয় রাইটার্স বিল্ডিংয়ে (Writers Building) হামলা চালিয়ে ব্রিটিশ শাসকদের মনে ত্রাস সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নেন বিনয়-বাদল-দীনেশ। ১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর বিনয়-বাদল-দীনেশ ইউরোপীয় বেশভুষার ছদ্মবেশ নিয়ে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করেন।রাইটার্স বিল্ডিংয়ে ঢুকে অত্যাচারী পুলিশ কর্নেল সিম্পসনকে গুলি করে হত্যা করেন। ব্রিটিশ পুলিশ পালটা গুলি চালাতে শুরু করে। বন্দুকযুদ্ধে ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার টোয়াইনাম, প্রেন্টিস ও নেলসন আহত হন। লালবাজার থেকে পুলিশ কমিশনার টেগার্টের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী বিনয়-বাদল-দীনেশকে (Binoy- Badal- Dinesh) ঘিরে ফেলে এবং অচিরেই তিন বিপ্লবী পরাস্ত হন।
বিনয়, বাদল কিম্বা দীনেশ (Binoy- Badal- Dinesh) কেউই পুলিশের হাতে ধরা দিতে চাননি। বাদলের পকেটে ছিল পটাশিয়াম সাইনাইড। তিনি সেটি খেয়ে নেন ও মৃত্যুর কোলে ঢ্লে পড়েন। বিনয় ও দীনেশ আত্মহত্যার জন্য নিজেদের উপরে গুলি চালান। বিষ খেয়ে ঘটনাস্থলেই বাদল গুপ্তের (Badal Gupta) মৃত্যু হয়। এই তিন বীরের মহাকরণ আক্রমণ 'অলিন্দ যুদ্ধ' নামে খ্যাত। স্বাধীনতা লাভের পরে ডালহৌসি চত্বরের নামকরণ করা হয় "বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ" বা সংক্ষেপে বিবাদী বাগ (BBD Bag)।