জানা গিয়েছে টানেলটি সদ্য খোঁড়া হয়েছিল এবং পাকিস্তানের দিক থেকে এর শুরু। এটির খোলার অংশ ছিল প্রায় দুই ফুট এবং এখনও পর্যন্ত ২১টি বালির ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে
এবার কি অমরনাথ যাত্রাকে টার্গেট করতে চেয়েছিল পাকিস্তান মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাবলী কিন্তু সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। বৃহস্পতিবার ভারত পাকিস্তান সীমান্তের খুব কাছ থেকে একটি লম্বা সুড়ঙ্গ উদ্ধার করেছে বর্ডার সিকিওরিটি ফোর্স বা বিএসএফ। বিএসএফ সূত্রে খবর জম্মু ও কাশ্মীরের সাম্বা জেলায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর একটি আন্তঃসীমান্ত সুড়ঙ্গ উদ্ধার করা হয়েছে। মনে করা হচ্ছে অমরনাথ যাত্রা ভেস্তে দেওয়ার জন্যই কোনও চক্রান্ত চলছিল।
জম্মু রিজিয়নে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অমরনাথ যাত্রার তীর্থযাত্রীদের ওপর হামলা চালানোই মূল লক্ষ্য ছিল জঙ্গিদের বলে মনে করছে বিএসএফ। বুধবার সন্ধ্যায় জম্মু ও কাশ্মীরের সাম্বার চক ফকিরা সীমান্ত ফাঁড়ি এলাকায় ১৫০ মিটার দীর্ঘ টানেলটি সনাক্ত করা হয় বলে বিএসএফ আধিকারিকরা জানিয়েছেন।
বর্ডার সিকিওরিটি ফোর্সের ডিআইজি এসপিএস সান্ধু বলেছেন, "এই সুড়ঙ্গের উদ্ধার বিএসএফের বড় সাফল্য। কারণ মনে করা হচ্ছে আসন্ন অমরনাথ যাত্রাকে ব্যাহত করার জন্য পাকিস্তান মদতপুষ্ট জঙ্গিদের ঘৃণ্য পরিকল্পনা ব্যর্থ করেছে বিএসএফ।" জানা গিয়েছে টানেলটি সদ্য খোঁড়া হয়েছিল এবং পাকিস্তানের দিক থেকে এর শুরু। এটির খোলার অংশ ছিল প্রায় দুই ফুট এবং এখনও পর্যন্ত ২১টি বালির ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে, যা সুড়ঙ্গের এক্সিট পয়েন্টকে মজবুত করতে ব্যবহৃত হয়েছিল। বৃহস্পতিবার দিনভর ওই সুড়ঙ্গে তল্লাশি চালিয়েছে বিএসএফ।
২২শে এপ্রিল জম্মুর সুঞ্জওয়ান এলাকায় একটি সিআইএসএফ বাসে হামলা এবং একজন সহকারী সাব-ইন্সপেক্টরকে হত্যা করার পরে নিরাপত্তা বাহিনী দুই আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীকে গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনার প্রায় ১৫ দিন পরে সুড়ঙ্গের হদিশ মেলে। একজন আধিকারিক বলেছেন যে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গটি পাকিস্তান-ভিত্তিক জইশ-ই-মহম্মদ বা জেএম গোষ্ঠীর দুই আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ভারতে প্রবেশের জন্য ব্যবহার করেছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেছেন, "আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ১৫০ মিটার দূরত্বে এবং সীমান্তের বেড়া থেকে ৫০ মিটার দূরত্বে একটি নতুন খোঁড়া সুড়ঙ্গ ধরা পড়েছিল যা ভারতীয় দিক থেকে ৯০০ মিটার দূরে পাকিস্তানি পোস্ট চমন খুর্দ (ফিয়াজ) এর বিপরীতে।" আরও জানা গিয়েছে সীমান্ত ফাঁড়ি চক ফকিরা থেকে প্রায় ৩০০ মিটার এবং শেষ ভারতীয় গ্রাম থেকে ৭০০ মিটার দূরে টানেলটি খোলা হয়েছে।
বিএসএফ জম্মু ফ্রন্টিয়ারের ইন্সপেক্টর জেনারেল, ডি কে বুরা সুড়ঙ্গটি উদ্ধার করার ক্ষেত্রে জওয়ানদের নিষ্ঠা এবং ডেডিকেশনের প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন যে দেড় বছরেরও কম সময়ে এটি সনাক্ত করা পঞ্চম টানেল। BSF জম্মুর সুঞ্জওয়ান এলাকায় ২২শে এপ্রিলের সংঘর্ষের পরে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর যে কোনও সুড়ঙ্গ সনাক্ত করতে একটি বিশাল অভিযান শুরু করেছে।
গত ১৬ মাসে বিএসএফ আন্তর্জাতিক সীমান্তের নীচে এই ধরনের প্রথম টানেল আবিষ্কার করে। এই নিয়ে মোট টানেল উদ্ধারের সংখ্যা মোট ১১। গত বছর, জানুয়ারিতে কাঠুয়া জেলার হীরানগর সেক্টরে দুটি সুড়ঙ্গ সনাক্ত করেছিল বাহিনী। বিএসএফ সেনাবাহিনীর পাশাপাশি প্রায় ১৯২ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমানা এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) পরিচালনা করছে। সীমান্তের ওপার থেকে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ, অস্ত্র ও মাদকদ্রব্যের চোরাচালান এবং ড্রোন কার্যকলাপের যে কোনও প্রচেষ্টাকে দমন করার জন্য কঠোর নজরদারি রাখছে।