বৃহস্পতিবার খুলে গেছে বদ্রীনাথ মন্দিরের দরজা। নাচে-গানে মন্দির প্রাঙ্গন মাতিয়ে তুলেছেন উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দারা। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ব্যান্ডের সুরে আলাদাই মেজাজ। কিন্তু, তীর্থযাত্রীদের হোটেলে নেই বিদ্যুৎ, এলাকার কোনও শৌচাগারে নেই জল।
বৈদিক জপ এবং তরতাজা তুষারপাত আর টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ১০-এ তীর্থযাত্রীদের জন্য খুলে গেছে বদ্রীনাথ ধামের দরজা। প্রায় ১৫ কুইন্টাল ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে বদ্রীনাথ মন্দির। ভারতের উত্তর থেকে দক্ষিণের হাজার হাজার তীর্থযাত্রী এই সুসজ্জিত মন্দির পরিদর্শন করতে পৌঁছে গিয়েছেন হিমালয়ের কোলে। ২০২৩ সালে প্রথম পুজো অর্পিত হয়েছে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কল্যাণ প্রার্থনা করে।
বৃহস্পতিবার তীর্থ যাত্রার প্রথম দিন উপলক্ষ্যে একটি হেলিকপ্টার থেকে তীর্থযাত্রীদের উপর ফুলের পাপড়ি বর্ষণ করা হয়। মন্দির প্রাঙ্গনে নেচে গেয়ে মাতিয়ে তোলেন উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার মহিলা ও পুরুষরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে পবিত্র আনন্দের সেই সুমধুর লোকগান।
তারপর মন্দির প্রাঙ্গনে ভক্তি প্রদর্শন করেন ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মীরাও। ভারত- তিব্বত সীমান্তের পুলিশবাহিনীর বিশেষ ব্যান্ড (ITBP Band) বাঁশি, স্যাক্সোফোন আর ট্রাম্পেতে মাতিয়ে তোলেন পাহাড়ের কোলে বরফাবৃত বদ্রীনাথ মন্দির। তাঁদের সুরে ‘ওম জয় জগদীশ হরে’ এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি জাগিয়ে তোলে তীর্থযাত্রীদের মধ্যে।
তবে, ২০২৩ সালে বদ্রীনাথ মন্দিরের অনেক যাত্রীই সুবিধার অভাব এবং অতিরিক্ত ভিড় হওয়ার অভিযোগ করেছেন। হিমালয়ের গায়ে প্রায় ৩,১৩৩ উচ্চতায় অবস্থিত অলকানন্দা নদীর তীরের বদ্রীনাথ হিন্দুদের, বিশেষ করে বৈষ্ণবদের জন্য অন্যতম পবিত্র মন্দির। এর সম্পূর্ণ সমস্ত চর ধাম এখন তীর্থযাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। চরধাম মন্দিরগুলি বছরে প্রায় ছয় মাস বন্ধ থাকে। জায়গার অভাব প্রসঙ্গে অন্ধ্র প্রদেশের একজন তীর্থযাত্রী সুব্রহ্মণ্যম কুমার বলেছেন, মন্দিরে প্রচণ্ড ভিড় ছিল এবং তীর্থযাত্রীদের লাইন প্রায় দুই কিলোমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে গিয়েছিল। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় অত লম্বা লাইন দেখে শেষমেশ তাঁরা ফিরে যেতে বাধ্য হন।
উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরের আরেক তীর্থযাত্রী ললিত শর্মা প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করার পর কোনওরকমে মন্দিরের ভেতরে যেতে সক্ষম হন। তিনি বলেন, “আমরা এখানে আরও ভালো ভিড় নিয়ন্ত্রণের আশা করছিলাম। তবে স্থানীয়রা বলছেন, মন্দিরের কাছে একটি নির্মাণকাজ চলার কারণে ভিড় সামলানো একটু কঠিন হয়ে পড়েছে।” হায়দরাবাদের আর এক তীর্থযাত্রী রঞ্জিত সিং চৌহান জানান, তিনি ৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলেন। “কিছু নিয়মকানুন থাকা উচিত। বয়স্ক মানুষদের এই প্রচণ্ড বরফ আর ঠান্ডার মধ্যে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে অসুবিধা হচ্ছে।” হায়দরাবাদের রাজ শেখর বলেছেন যে, তারা বুধবার বদ্রীনাথে এসেছেন এবং বিদ্যুৎ পরিষেবা বিহীন একটি লজে কোনওমতে আশ্রয় পেয়েছেন। তিনি বলেন, "তীর্থযাত্রীদের জন্য শৌচাগারের অবস্থা করুণ ছিল। এগুলোতে জল নেই, ভীষণ নোংরা এবং আবর্জনার স্তূপে ভর্তি ছিল।" হরিয়ানার এক তীর্থযাত্রী কমল কিশোর সিং বলেছেন, "আমি একটা টয়লেটে ঢুকেছি আর সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছি। দুর্গন্ধের কারণে আমার বমি উঠে আসছিল।”
বদ্রীনাথ কেদারনাথ মন্দির কমিটির সভাপতি অজেন্দ্র অজয় বলেছেন, “তীর্থযাত্রাকে সুবিধাজনক করতে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু, নির্মাণ কাজের কারণে, কিছু তীর্থযাত্রী কিছুটা অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারেন।" উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি বলেছেন যে রাজ্য সরকার তীর্থযাত্রা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সমস্ত সম্ভাব্য ব্যবস্থা করছে।
আরও পড়ুন-
মৃত্যুর আশঙ্কা করেছিলেন আগেই, বৃহস্পতিবার থানার সামনেই গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হল JDU নেতাকে
ভেঙে গুঁড়িয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল মুখ্যমন্ত্রীর সভামঞ্চে, গীর্জার ‘অসম্মান’-কে কেন্দ্র করে উত্তাল মণিপুর
কালিয়াগঞ্জে গুলিকাণ্ডে যুবকের মৃত্যুর প্রতিবাদে উত্তাল বাংলা, জেলায় জেলায় বিজেপি বনাম তৃণমূলের লড়াই