কোভিড হাসপাতালে পড়ে আছেন সর্বশেষ ডাক্তার, তাঁকে বাঁচাতে নিযুক্ত সশস্ত্র রক্ষীরা

কেউ রাজি হননি দায়িত্ব নিতে

এগিয়ে এসেছিলেন ডাক্তার কুমার গৌরব

বিহারের ভাগলপুরের কোভিড হাসপাতালের বর্তমান প্রধান

এখন তাঁকে পাহাড়া দিচ্ছেন সশস্ত্র প্রহরীরা

 

amartya lahiri | Published : Aug 14, 2020 12:44 PM IST / Updated: Aug 20 2020, 01:45 PM IST

গঙ্গার তীরে হাসপাতালে তিনি রাউন্ড দেওয়ার সময় রাইফেলধারী দেহরক্ষীরা তাঁকে পাহাড়া দিয়ে নিয়ে যান। বিহারের ভাগলপুরের জওহরলাল নেহেরু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডাক্তার কুমার গৌরব। না কোনও মাওবাদী হানার আশঙ্কা নেই। তাঁর উপর হামলার আশঙ্কা রয়েছে কোভিড-১৯ রোগীদের আত্মীয়স্বজনদের থেকে। তার জন্যই রক্ষীদের প্রয়োজন।

ডাক্তারবাবু জানিয়েছেন, রোগীর আত্মীয়দের নানারকম দাবি রয়েছে। কেউ চান প্রিয়জনদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে, কেউ চান বাড়ির খাবার দিতে, কেউ চান রোগীদের গা-হাত-পা টিপে দিতে। প্রায়শই তাঁরা মুখে এমনকী কোনও গামছা বা কাপড়ের পাতলা মাস্ক-ও না পরেই করোনভাইরাস রোগীদের ওয়ার্ডে, আইসিইউ-তে পর্যন্ত ঢুকে পড়েন বলে অভিযোগ। বাধা দিলেই রেগে যান তাঁরা। এইভাবে আইসিইউ থেকে তাঁরা ভাইরাসটি সমাজের অন্যান্য ব্যক্তির কাছে বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ডাক্তার কুমার গৌরব।

জওহরলাল নেহেরু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শীর্ষ কর্মকর্তা এখন তিনিই। তাঁকেই পুরো বিষয়টি সামলাতে হচ্ছে। ছলে-বলে-কৌশলে রোগীদের কাছে চলে যাচ্ছেন আত্মীয়রা। অথচ ৪২ বছর বয়সী এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হাসপাতালের অন্যতম জুনিয়র ডাক্তার। ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনশনের মতো রোগও রয়েছে, যা কোভিড আক্রান্তদের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। হাসপাতালে প্রধানত অধ্যাপক এবং কনসালট্যান্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবেই যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, এখন হাসপাতালের বেশ কয়েকজন ডাক্তারের পরপর কোভিডে মৃত্যু হয়েছে। তারপর আরও অনেকেই কাজ করতে চাইছেন না। কাজেই তাঁকেই নিতে হয়েছে দায়িত্ব।

দায়িত্ব নিয়ে নিজেকে বরই শক্তিহীন মনে হচ্ছে তাঁর। কারণ, এই হাসপাতালটির প্রায় ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে আর কোনও হাসপাতাল নেই। তাই অ-কভিড রোগীদেরও এই হাসপাতালেই রাখতে হচ্ছে। রক্ত, ​ওষুধ, জনবলের মতো সংস্থানের ঘাটতির রয়েছে। আইসিইউ-এর ৩৭টি বিছানাই ভর্তি। রোগীর বিছানার পাশেই মেঝেতে তাঁর কোনও আত্মীয় বাড়ি থেকে আনা কম্বল পেতে বসে রয়েছেন। এই অবস্থায় কে যে করোনা পজিটিভ আর কে নেগেটিভ তার হিসাব রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

এই অবস্থায় সিনিয়র ডাক্তাররা সবাই সরে দাঁড়ানোয় ভাগলপুরের এই হাসপাতালের শেষ ভরসা দিল্লি থেকে আসা এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞই। তাই আত্মীয়রা যাতে এই ডাক্তারবাবুর সংস্পর্শে এসে তাঁর বিপদ না বাড়ান তাই সবসময় তাঁকে ঘিরে থাকছে বন্দুকধারীরা। তারাও সবাই পিপিই পরা।   

 

Share this article
click me!