'কাটা নাক ঢাকতে পরত সুর্পণখা', আজব রামকথার যুক্তিতে উঠল বোরখা নিষিদ্ধের দাবি

রামায়ণকে তিনি নিয়ে গিয়ে ফেললেন আরব প্রান্তরে।

টানলেন রাবণের বোন সুর্পণখা-কে।

তুললেন জাতীয় সুরক্ষার প্রসঙ্গও।

তারপর তুললেন দাবি বোরখা পরা নিষিদ্ধ করতে হবে।

 

amartya lahiri | Published : Feb 10, 2020 6:43 PM IST

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, 'বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর'। এই খবর বডড়তে গেলে ওই বিশ্বাসের জোরটা বাড়াতে হবে। নাহলে এমন আজব রাম কাহিনী শুনিয়ে ভারতে বোরখা পরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার দাবি তুললেন উত্তরপ্রদেশের এক বিজেপি নেতা, যে পড়ার আগেই সকলে এই খবরকে ভূয়ো বলে দেগে দেবেন। কতটা অদ্ভূত তার রামকাহিনী? বোরখার সঙ্গে তিনি জুড়ে দিয়েছেন দৈত্যরাজ রাবণের বোন সুর্পণখাকে। তবে তাঁর এই কাহিনিকে বাড়তে দেয়নি তাঁর দল, সাত-তাড়াতাড়ি কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

উত্তরপ্রদেশ সরকারে প্রতিমন্ত্রীর সমতুল্য পদে আছেন বিজেপি নেতা রঘুরাজ সিং। সোমবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শ্রীলঙ্কা, চিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মতো বেশ কয়েকটি দেশে বোরখা পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভারতেও এটি নিষিদ্ধ করা উচিত, কারণ বোরখায় তসলায় লুকিয়ে সন্ত্রাসবাদীরা আসতে পারে। নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দিল্লির শাহিনবাগে যে আন্দোলন চলছে সেখানেও বোরখার রমরমা। বোরখা কিন্তু সন্ত্রাসবাদীদের, চোরদের এবং সমাজবিরোধীদেরকে লুকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। বোরখাকে তিনি জাতীয় সুরক্ষার জন্য হুমকি এবং সন্ত্রাস দমনের জন্যই একে নিষেদ্ধ করা উচিত বলেন।

এখানে থামলে নাহয় হত, কিন্তু এরপরই তার রামায়ণের সংস্করণ খুলে বসেন রঘুরাজ সিং। কোন সূত্র উল্লেখ না করে তিনি বলে চলেন, লক্ষ্মণ সুর্পণখার নাক কেটে দেওয়ার পর বিকৃত মুখ নিয়ে রাবণরাজের বোন পালিয়েছিল আরবের মরুপ্রান্তরে লুকোতে পালিয়ে গেল। নাক-কান কাটা অবস্থায় লোকসমাজে মুখ লুকানোর জন্যই নাকি সে প্রথম বোরখা ব্যবহার করা শুরু করেছিল। এমনটাই দাবি করেন বিজেপি নেতা। এমনকী 'মানুষ'-এর বোরখা পরার প্রয়োজন হয় না বলেও মন্তব্য করেন।

তিনি আরও বলেন মক্কায় গুরু শূক্রাচার্য একটি শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শূক্রাচার্য শয়তানদের গুরু ছিলেন। সেখান থেকে বোরখার ঐতিহ্য শুরু হয়েছিল। তবে হিন্দুস্তান, হিন্দুদের ঐতিহ্য অনুসারেই পরিচালিত হবে এটাই তাঁরা চান বলে সাফ জানান রঘুরাজ।

প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কংগ্রেস নেতা পি এল পুনিয়া এবং আম আদমি পার্টির সঞ্জয় সিং, রঘুরাজ সিং-এর এই মন্তব্যের জন্য বিজেপি-কে নিশানা করেন। তারপরই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামে বিজেপি। রাজ্যের মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিং বলেন, এটা রঘুরাজ সিং-এর ব্যক্তিগত মতামত। পরে, লখনউ-তে দলের মুখপাত্র মণীশ দীক্ষিত বলেন, রঘুরাজ সিং-কে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বিজেপির রাজ্য শাখার সভাপতি স্বতন্ত্র দেব সিংহ এই নোটিশ জারি করেছেন। তাঁকে এক সপ্তাহের মধ্যে এই মন্তব্য়ের ব্যাখ্যা দিতে হবে, নাহলে তাঁকেদল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

এর আগে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার জন্য আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জ্যান্ত কবর দেওয়ার হুমকি দিয়ে বিতর্কের জড়িয়েছিলেন রাজ্য সরকারের শ্রম দফতরে প্রতিমন্ত্রীর সমমর্যাদার পদে থাকা বিজেপি নেতা রঘুরাজ সিং।

 

Share this article
click me!