মর্গে পড়ে আসফাক-রাহুল'দের দেহ, হাহাকারের দিল্লিতে মুসলিম বাবার পাশেই হিন্দু মা

গত তিন দিন ধরে শুধু হানাহানি দেখেছে উত্তরপূর্ব দিল্লি

কিন্তু হাহাকারে আর কোনও ভেদাভেদ নেই

মর্গের সামনে দেহ সনাক্ত করতে লম্বা লাইন

সেখানে কোনও মুসলিম বাবা-কে স্বান্তনা দিচ্ছেন কোনও হিন্দু মা

 

amartya lahiri | Published : Feb 27, 2020 9:07 AM IST / Updated: Feb 27 2020, 06:55 PM IST

একেবারে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র দিন বিয়ে হয়েছিল আসফাক হুসেন-এর। পাত্রী অনেকদিনের প্রেমিকা তসমিন। নতুন বিয়ে, তাই কয়েকটা দিন একটু তাড়াতাড়ই কাজ থেকে ফিরছিল ইলেকট্রিকের মিস্ত্রি আসফাক। গত সোমবার মুস্তাফাবাদ-এর বাড়িতে ফেরার পথে আচমকা পড়ে গিয়েছিলেন দুষ্কৃতীদের সামনে। উন্মত্ত জনতা প্রথমে তাঁকে ছুড়ি দিয়ে কোপায়, তারপর পাঁচটি গুলিতে এফোড়-ওফোড় করে দেয় তাঁর দেহ। সেই থেকে  গুরু তেগ বাহাদুর হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে তার দেহ। পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে মর্গের বাইরে পাথরের মতো বসে রয়েছে তসমিন।

আরও পড়ুন - হোয়াটসঅ্যাপেই হয়েছিল দিল্লি হিংসা-র ছক, ফুটেজ ধরে ধরে চলছে 'বহিরাগত'দের খোঁজ

শুধু আসফাক নন, হিংসা-ধ্বস্ত দিল্লিতে এখন শুধুই হাহাকার শোনা যাচ্ছে। কেউ খুঁজছেন তাঁর সন্তানকে, কেউ তাঁর স্বামীকে কেউ বা অন্য কোনও প্রিয়জনকে। কখনও খবর আসছে ওই হাসপাতালে ভর্তি আছে সে। সকলে মিলে দৌড়াচ্ছেন সেই হাসপাতালে। আবার অনেকেই প্রিয়জনের দেহ সংগ্রহের জন্য বসে রয়েছেন মর্গের বাইরে। দুদিন কেটে গেলেও দেহ হাতে পাননি। হিংসা পরবর্তী হাহাকারের দিল্লিতে আর ধর্মের ভেদ নেই, মতের ভেদ নেই। রক্তে, বেদনায়, কান্নায় সব মিলে মিশে গিয়েছে।

আরও পড়ুন - দিল্লি হিংসা-র বলি, একনজরে দেখে নিন মৃত ৩৪ জনের নাম-পরিচয়

জিটিবি হাসপাতালে মর্গের সামনে লাশ সনাক্ত করার লম্বা লাইন। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩৪। আহত প্রায় ২০০। মর্গে আসফাক-এর দেহের পাশেই শোয়ানো ২৬ বছরের রাহুল সোলাঙ্কি-র দেহ। গুলিতে এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে গিয়েছে তাঁর শরীর। তার পাশেই রয়েছে ৩২ বছরের মহম্মদ ফুরকান। সেও বুলেটবিদ্ধ। এরকম আরও অনেক নাম।

আরও পড়ুন - আগুন থেকে উদ্ধার করলেন মুসলমান প্রতিবেশীদের, নিজে পুড়ে গেলেন প্রেমকান্ত

আর বাইরে তসমিন-এর মতো স্বজনহারাদের ভিড়। পুত্রহারা মুসলিম বাবাকে স্বান্ত্বনা দিচ্ছেন পুত্রহারা হিন্দু মা। সকলেই একযোগে বলছেন এটা দিল্লির পরিচিত ছবি নয়। হিংসা বন্ধ হোক। তাঁদের অভিযোগ এই বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। বলছেন তাঁদের যা গিয়েছে, তা আর ফিরবে না। কিন্তু, এটা পরীক্ষার সময়। মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

 

Share this article
click me!