
ভারতের রাজনীতির অন্তরমহলে প্রতি সপ্তাহেই অনেক ঘটনা ঘটে। তারই কয়েকটা পাঠকের কাছে পেশ করার চেষ্টা করে এশিয়ানেট নিউজ বাংলা। এবারও From The india gate এর ২৬ তম এপিসোডে রইল তেমন কিছু টানাপোড়েনর কথা।
স্বপ্ন ভঙ্গ
কর্ণাটকের নির্বাচনে ফলাফল তেলাঙ্গনার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাোয়ের রাজধানীতে বিআরএস-এর গাড়ি চালানোর স্বপ্নকে পাংচার করেছে। নিজেকে সম্ভাব্য জাতীয় বিকল্প হিসেবে তুলে ধরতে কেসিয়ার কম চেষ্টা করছেন না। তাঁর অবস্থানকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে একটি অ-কংগ্রেস, অ-বিজেপি ফ্রনের সম্ভাবনা নিয়ে অনেকগুলি সভাও আহ্বান করেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস তাঁর অবস্থান পুনরুদ্ধার করার সঙ্গে সঙ্গে কেসিআরের উচ্চাকাঙ্খা ভেঙে গেছে।
কর্ণাটকে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অনেক অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি কর্ণাটক জয়ের পর কংগ্রেসের যে গুরুত্ব দেশের রাজনীতিতে বাড়ছে তার প্রমাণ হচ্ছে। কেসিআর তার পরীক্ষাগারে এমন একটি রাজনৈতিক ফর্মুলা তৈরির চেষ্টা করেছিলেন, যেখানে তিনি এইচডি দেবেগৌড়ার সঙ্গে জোট বাঁধার কথা বলেছিবেন। ভেবেছিলেন এইচডি কর্ণাটকের কিং মেকার হবে। কিন্তু স্বপ্ন ভেঙে যায়। কিন্তু কর্ণাটকে কংগ্রেসের বিজয় ইঙ্গিত দিচ্ছে তারা তেলাঙ্গনা বিজেপির পাশাপাশি দ্বিতীয় দল হিসেবে উঠে আসতে পারে। কেসিআর এবার খুব সহজে জিততে পারবে বলে মনে হয় না। আশ্চার্যের কিছুই নেই যে তিনি সদ্যো শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের তালিকাতেও ছিলেন না।
নখ কাটা শেষ
ভোট গণনার শেষ কয়েক মিনিটের রীতিমতটা সাসপেন্সে ভরা ছিল ।হাই-ভোল্ট টি-টোয়েন্টি ম্যাচের শেষ ওভারের মত। কর্ণাটকের জয়নগর আসনে ব্যাপক নাটকীয়তা তৈরি হয়। কংগ্রেসের সৌম্য রেড্ডিকে বিজেপির সিকে রমা মূর্তির বিরুদ্ধে ১৫০ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল। কংগ্রেস কর্মীরা উদযাপন শুরু করলেও, বিজেপি পুনঃগণনার দাবি জানায়। বেঙ্গালুরু দক্ষিণের সাংসদ তেজস্বী সূর্য গণনাকেন্দ্রে ঢুকে পুনগণনার দাবি জানান। শীঘ্রই নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা তাদের দাবিতে রাজি হন এই শর্তে যে কোনও বিজেপি নেতা গণনা কেন্দ্রের ভিতরে থাকবেন না।
পুনঃগণনা দেখে রমা মূর্তি ১৭ ভোটে সৌম্য রেড্ডির চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। রমা মূর্তিকে ১৬ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী ঘোষণা করা দেখার জন্য এখন কংগ্রেসের আরও এক রাউন্ড পুনঃগণনার দাবি করার পালা। সৌম্যর পরিবারের কাছে একমাত্র সান্ত্বনা ছিল পার্শ্ববর্তী বিটিএম লেআউট নির্বাচনী এলাকা থেকে তার বাবা রামালিঙ্গা রেড্ডির জয়।
কর্ণাটকে আরও কয়েকজন প্রার্থী ছিলেন যারা অল্প ব্যবধানে নির্বাচনে জিতেছিলেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত গুন্ডু রাওয়ের ছেলে দীনেশ গুন্ডু রাও গান্ধীনগরে বিজেপির সপ্তগিরি গৌড়ার বিরুদ্ধে ১০৫ ভোটে জিতেছেন। পোস্টাল ভোট কংগ্রেসের বর্তমান বিধায়ক রাজু গৌড়াকে বাঁচিয়েছে চিক্কামাগালুরুর শ্রিংগেরি বিধানসভা কেন্দ্রে ২০১ ভোটের ব্যবধানে বিজেপির জীবরাজের বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে।
সিংহ গর্জন
কর্ণাটক সিংগাম বা কর্ণাটকের সিংহ তার গর্জন হারিয়েছে। তিনি প্রতিবেশী তামিলনাড়ুতে বিজেপি রাজ্য প্রধান হলেও কর্ণাটকের নির্বাচনে তাঁরে গুরু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে সিনিয়র নেতাদের প্রতি তাঁর অবহেলাও টিকিট বিতরণে হস্তক্ষে করা বিজেপির ভোটে পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক সিনিয়র নেতা, আসলে তাঁর সঙ্গে মঞ্চ শেয়ার করতে রাজি ছিল না। তুষারপাতের মুখোমুখি হয়ে গর্জনকারী সিংহ রাজনৈতিক মহিমা ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত ভিজে বিড়ালের রূপ নিয়েছে।
বন্ধু-শত্রু
কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নে নতুন কর্ণাটক সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল। যদিও তিনি নিজেকে বিরোধী ঐক্যের উদীয়মান মাসকট হিসেবে তুলে ধরতে চান। কংগ্রেস নেতারা তাঁকে আমন্ত্রণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। উপস্থিত ছিলেন আরও অনেক অ-কংগ্রেস অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী। মজার বিষয় হল কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি ও সিপিআই নেতা ডি রাজা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রীতিমত ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দেন।
মজার বিষয় হল, কেন্দ্রীয় বাম নেতারা যখন বিরোধী ঐক্যের কথা প্রমাণ করার জন্য কংগ্রসের হাত ধরতে মরিয়া ছিল তখন কংগ্রেস নেতারা ইউডিএফ তিরুবন্তপুরমে বাম সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল। দুটি ভিজ্যুয়ালই একসঙ্গে টেলিকাস্ট করা হচ্ছিল টিভিতে- যা মনে করিয়ে দিচ্ছিল বেঙ্কাইয়া নাইডুর বিখ্যাত উক্তি- কেরলে কুস্তি দিল্লিতে দোস্তি।
আরও পড়ুনঃ
মঙ্গলবার থেকে বদল করতে পারবেন ২ হাজার টাকার নোট, জেনে নিন কী কী নিয়ে যাবেন ব্যাঙ্কে
৯১ শতাংশ শিশুর অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী বায়ু দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও পড়ছে গর্ভাবতীদের ওপর
কর্ণাটকে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মধ্যমণি রাহুল গান্ধী, স্পষ্ট হচ্ছে বিজেপি বিরোধী জোট- দেখুন ছবিতে